আজঃ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম

মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ স্থাপনের গুরুত্ব, কার্যক্রম এবং প্রয়োজনীয়তা

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

Image

মানোবিতিহাসে চিকিৎসা পেশার সাথে ফরেনসিক মেডিসিনের সর্ম্পক প্রাচীনতম, যা লিখিত কোড অব হামমুরাবি বা হিপোক্রেটিস প্রতিজ্ঞাই প্রমান করে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই চিকিৎসা পেশা এবং আইন পারস্পরিক সর্ম্পকিত। যে বন্ধনগুলি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে তাদের একত্র করেছিল তাহলো ধর্ম, কুসংস্কার এবং যাদুবিদ্যা। প্রাচীনসভ্যতা,আদিম আইনী কোড, ধর্মীয় ডকট্রাইন্স,সামাজিক বিধি এবং চিকিৎসা বিষয়বস্তু সহ আইনগুলি প্রায়শই তাদের নথিপত্রের মধ্যে পাওয়া যায়। ধর্মীয় আদালত এবং ক্যানন আইন স¤র্পকিত অনেক রীতিনীতি শুধু ধর্মীয় বিষয়ই নয় বরং চিকিৎসাতে ও ছিল। উদাহরণস্বরুপ পুরুষত্বহীনতা, বিবাহবিচ্ছেদ,প্রেগনেন্সী,গর্ভপাত,গর্ভধারণের সময়কাল এবং যৌন ডেভিয়েশন। লিখিত রের্কডগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম হামমুরাবি কোড সর্ম্পকিত আইনি অর্ন্তভুক্তি ছিলো চিকিৎসা পরিসেবা প্রদান এবং শাস্তির বিধান সর্ম্পকীয়(২২০০ক্রিঃপ)। ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা পেশার সেই আইনি বিষয়াবলী এবং রীতিনীতি (নৈতিকতা) শিক্ষা প্রদান এবং অনুশীলন করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) দেশের একমাত্র শীর্ষস্থানীয় স্নাতকোত্তর মেডিকেল ইনস্টিটিউট। এটি ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ইনস্টিটিউট অব স্নাতকোত্তর মেডিকেল রিসার্চ (আইপিজিএমআর) এর ঐতিহ্য বহন করে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার  ঐকান্তিক পৃষ্ঠপোষকতায় ৩০.০৪.১৯৯৮ইং সালে উচ্চ চিকিৎসা ও গবেষণার সুযোগ বাড়ানোর জন্য আইপিজিএমআরকে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করে। বিভিন্ন বেশিষ্ট্যে উচ্চমানের স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রদান এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈর্ষনীয় খ্যাতি অর্জিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশী এবং অন্যান্য পেশাদার সংস্থার সাথে সুদৃঢ় যোগাযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পরিসেবা,শিক্ষাদান এবং গবেষণার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত অনেক বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসার বিভিন্ন শাখায় গবেষণা কার্যক্রম অনুশীলনে গুরত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় টারশিয়ারী স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে সাধারণ এবং বিশেষায়িত ক্লিনিক্যাল পরিসেবা সরবরাহ করে আসছে। বিশ^মানের সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হয়েছে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, যে বিগত পঞ্চান্ন বৎসরে ও ফরেনসিক মেডিসিনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চালু করা হয়নি, যার জন্য বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষায়, কর্মে এবং দক্ষতায় ফরেনসিক মেডিসিন পরিসেবা খাদের কিনারায় পৌছিয়াছে।

সাড়ে চারশত বৎসর পূর্বে ফ্রাঞ্চ প্রথম ফরেনসিক মেডিসিনকে স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রমে একাডেমিক ডিসিপ্লিন হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে। ১৭৯৪ সালে প্রথম লিগাল মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। বিগত তিনশত বৎসর পূর্বে জার্মানি প্রথম লিগাল মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। দুইশত বিশ বৎসর পূর্বে গ্রেটব্রিটেনে (১৮০৩) প্রথম ফরেনসিক মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার এডিনর্বাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করেন। বিগত ২০০ বৎসর পূর্বে যুক্তরাষ্টের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৮১৩ সনে) প্রথম ফরেনসিক মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপন করা হয়। পরবর্তী ৭০ বৎসর এর মধ্যে প্রত্যেক মেডিকেল স্কুলে ফরেনসিক মেডিসিনের চেয়ার স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ইং সালে বাংলাদেশে প্রথম লিগ্যাল মেডিসিনের প্রফেশনাল চেয়ার স্থাপনের ব্যবস্থা করেন।

সম্প্রীতি (৩০.০৯.২০১৯) বিএসএমএমইউ,৭৫ তম সিন্ডিকেট সভায় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ০১.০৭.২০২১ইং তারিখে বিএসএমএমইউ ফরেনসিক মেডিসিনের প্রথম চেয়ার স্থাপন করে। বিএসএমএমইউর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ মেডিকোলিগাল শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, চিকিৎসা পেশার নৈতিক জ্ঞান, মেডিকোলিগাল পরিসেবা প্রদানে নেতৃত্ব, এবং শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্রীয় সত্তা হিসাবে বাংলাদেশের ফরেনসিক মেডিসিনের সেরা অনুশীলন, গবেষণা সহায়তায় নিয়োজিত করবেন। ফরেনসিক মেডিসিনের গুরুত্ব এবং পরিসেবা সর্ম্পকে নিম্নেবর্ণিত কিছু আলোচনার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উক্ত বিষয়ের বিভাগ থাকাটা যে কত জরুরী ছিল সেটা ধারণা আসবে।

ফরেনসিক মেডিসিন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধিক অগ্রগামী, চ্যালেঞ্জিং এবং আকর্ষণীয় শাখা, তবে বাংলাদেশে এই বিশ্বয়ানের যুগে ও এটি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখার জন্য ফরেনসিক মেডিসিন বিশ্ব জুড়ে গুরুতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ দেশ, অপরাধ তদন্ত ও বিচার পরিচালনার সহায়তায়, মেডিকো-লিগাল কাজ সম্পাদনে আধুনিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফরেনসিক বিজ্ঞানের দক্ষতাকে উন্নতির কৌশল হিসাবে গ্রহণ করেছে। ডাক্তারেরা ফরেনসিক মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা পেশার নৈতিকতা এবং আইনি বিষয়গুলোর শিক্ষা,দীক্ষা এবং বিশ্লেষনের জ্ঞান অর্জন করে। যার মাধ্যমে ডাক্তারেরা যেমন নীতিবান আদর্শ চিকিৎসা সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে,অবহেলা পরিহার করে, বৈধ পরিসেবা এবং আইন মোতাবেক চিকিৎসা প্রদান করার যোগ্যতা অর্জন করে। অন্যপক্ষে, প্রতিনিয়ত এই জ্ঞানের অভাবে ডাক্তারী পেশায় দূর্নাম, রোগীদের সাথে দূর্ব্যবহার, বিভিন্ন আইনি জটিলতার মোকাবেলা করতে হচ্ছে, ডাক্তার রুগীর সর্ম্পক নষ্ট হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব এবং আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈতিকতা এবং আইনি বিষয়গুলো: চিকিৎসা পেশা পরিচালনার সাথে অনেকগুলো আইন বিষয়ক বা সামাজিক বা নৈতিক দ্বন্দ্ব যা সাজারী চিকিৎসা, মেডিকেল পরীক্ষা বা ইন্টারভেনশনাল ডায়াগনষ্টিক বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে উদ্ভব হয়। অহরহ ইনভেসিভ ডায়াগনষ্টিক পদ্ধতি ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজি, এনজিওগ্রাম, ক্রিটিক্যাল কেয়ার, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, ইনফর্মড কনসেন্ট, দুঃসংবাদ প্রকাশে এবং রেসাসসিটেশন পদ্ধতি ইত্যাদির মতো নতুন  চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রচুর নৈতিক ও মেডিকো-লিগাল নিত্যনতুন সমস্যা উদ্ভব হয়। মাঝে মাঝে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলি ক্রমবর্ধমান আইনী ও নৈতিক দ্বন্দের সাথে জড়িত হচ্ছে। প্রত্যেক চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবার প্রথমদিন থেকেই মেডিকো-লিগাল সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।

সম্প্রতি স্টেকহোল্ডাররা চিকিৎসকদের নীতিগত আচরণ, আইনী প্রত্যাশা, যোগাযোগ ও আচরণের পাশাপাশি প্রতিটি অনুশাসন চিকিৎসা পাঠ্যক্রমে সমাজ প্রত্যাশানুযায়ী এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অপর্যাপ্ততা সম্বোধনে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফরেনসিক মেডিসিন, চিকিৎসা এবং মেডিকো-লিগাল অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত নৈতিক ও আইনী দিকগুলির শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলনের সাথে জড়িত। এছাড়া ফরেনসিক মেডিসিন সবধরনের মেডিকো-লিগাল কাজ পরিচালনা করে।  

মানবধিকার সুরক্ষায় ফরেনসিক মেডিসিনের ভূমিকা: সমাজে অপরাধ এবং অপরাধী সনাক্তকরণে, অপরাধ তদন্তে এবং বিচার প্রার্থীর সুবিচার প্রাপ্তিতে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং সংরক্ষণে, ডাক্তারি পেশায় আইন-কানুন এবং নৈতিকতা অনুশীলনে, ফরেনসিক মেডিসিন গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রাকটিশনার হিসাবে ভূমিকা: ফৌজদারী কার্যবিধি ১৯৭৩,ধারা ৫৩ অনুসারে প্রমাণ সংরক্ষণ,আহত বা অসুস্থতার ডকুমেন্টেশন এবং তার চিকিৎসা নির্ধারনের জন্য হেফাজতে নেওয়া ব্যাক্তির বাধ্যতামূলক মেডিকেল পরীক্ষা নির্ধারন করে। এছাড়া  মহিলাদের শারিরীক পরীক্ষা কেবলমাত্র একজন মহিলা নিবন্ধিত চিকিৎসক দ্বারা বা এর তত্ত্বাবধানে করা উচিৎ। প্রায়শই এই জাতীয় চিকিৎসা এবং পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়।

অঙ্গদানের ভূমিকা: বাংলাদেশে অঙ্গদান (মৃতদেহের বা ব্রেন ডেথ) এবং মানব অঙ্গগুলির প্রতিস্থাপন হিউম্যান অর্গানস ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন আইন ১৯৯৯ইং (২০১৩ইং সালে সংশোধিত) দ্বারা পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সর্ম্পক, আইনী সংস্থাগুলি, অর্গান ব্যাংক এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জনদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে অঙ্গদানের (মৃতদেহের বা ব্রেন ডেথ) সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাই হোক মানব অঙ্গগুলির ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক বরাদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সর্ম্পকিত বিষয়গুলি যথাযথভাবে মোকাবেলা করা দরকার। এক্ষেত্রে ফরেনসিক মেডিসিনের ভূমিকা অপরিসীম।   

মেডিকেল শিক্ষার ভূমিকা: বাংলাদেশে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ফরেনসিক মেডিসিন কোর্সের পাঠ্যক্রমটিতে মানবাধিকার সর্ম্পকিত বিষয়সহ, চিকিৎসা পেশার রীতিনীতি আইন কানুন এবং মেডিকো-লিগাল কাজ অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। ফরেনসিক মেডিসিনে যে বিষয়গুলো শেখানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা প্রাকটিসের আইনি এবং নৈতিকদিক, মেডিকো-লিগাল কাজ, গ্রাহক সুরক্ষা আইন, মানব পরীক্ষা আইন, রোগীদের অধিকার, রোগীদের প্রতি চিকিৎসকের কর্তব্য, নির্যাতন, মানবাধিকার কমিশনের ঘোষনা, ঘোষিত রীতিনীতি, মানবাধিকার সর্ম্পকিত চিকিৎসা নীতি ও আইন অর্ন্তভুক্ত, ফরেনসিক টক্সিকোলজি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মৃত্যু, ক্রিমিনাল গর্ভপাত, শিশু হত্যা ও অনাহার। সুতরাং ফরেনসিক মেডিসিন মানবাধিকার সুরক্ষায়প্রত্যেক সদস্যকে সৈনিক হিসেবে প্রস্তুত করে থাকে।

গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণের ভুমিকা : সমস্ত গ্রাহকরা সুরক্ষার অধিকার,অবহিত হবার, পছন্দ করার, শোনার, সমাধানের, ভোক্তা শিক্ষার এবং আশ^স্ত হবার অধিকারের অধিকারী। মেডিসিন অনুশীলনে নিরাময়ের পাশাপাশি নৈতিকতা, মেডিকো-লিগাল বা আইনী দিক সর্ম্পকিত বিষয় জড়িত, যেমন চিকিৎসক-রোগীর সর্ম্পক, ডাক্তার-ডাক্তার সর্ম্পক, চিকিৎসক-রাষ্ট্রের সর্ম্পকে ডাক্তারদের কর্তব্য, রোগীদের প্রতি বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি ডাক্তারদের আচরণ, চিকিৎসা অবহেলা, অপব্যবহারসহ চিকিৎসার অনুশীলনের আইনী দিক ইত্যাদি। এছাড়া মেডিকেল কাউন্সিল দ্বারা নির্ধারিত আচরণ বিধি, নিবন্ধিত মেডিকেল প্রাকটিশনারদের ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রন করে এবং জনগনকে প্রতারক ও হাতুড়ে ডাক্তারের হাত থেকে সুরক্ষা করে। উপরোক্ত বিষয়াবলী সর্ম্পকে আগামীদিনের চিকিৎসকদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনে ভুমিকা পালন করে থাকে ফরেনসিক মেডিসিন। উপরোন্ত বিচার ব্যবস্থাপনা এবং অপরাধ তদন্ত ছাড়া পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে, মানসিক রোগীদের মানবাধিকার রক্ষায়, শিশু এবং বয়স্কদের অধিকার সুরক্ষায়, লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্যতা, যৌন হয়রানি বন্ধে, মানব পাচার, সামাজিক দন্দ¦, রাজনৈতিক দন্দ¦, জাতিগত দন্দ¦ নিরসনে এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

ময়নাতদন্ত বা পোষ্টমর্টেম বা অটোপসি কার্যক্রম পরিচালনা: ময়নাতদন্ত বা পোষ্টমর্টেম বা অটোপসি মানে মৃতদেহ পরীক্ষা করা। যার মাধ্যমে জানা যায় কোন ব্যাক্তির মৃত্যুর রহস্য বা জীবিত থাকা অবস্থায় তার সাথে ঘটে যাওয়া নানা অপরাধের ধরণ। ময়নাতদন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের দীর্ঘ সাধনা ও গবেষনার ফল। ময়না তদন্ত বা পোষ্টমর্টেম বা অটোপসি এমন একটি শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি যা মৃত্যুর কারণ, ধরণ এবং প্রকৃতি নির্ধারনের জন্য অথবা গবেষণা বা চিকিৎসা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য কোন রোগ বা আঘাতের মূল্যায়ন করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক এবং নির্ভূল ব্যবচ্ছেদ এর মাধ্যমে মৃতদেহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। ময়নাতদন্ত এমন ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত হয় যারা মৃত্যুর প্রকৃতি ও কারণগুলি বোঝার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, দেহের তরল বা টিস্যু পরীক্ষা করে রোগ নির্নয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং কিভাবে কখন কেউ মারা গেছে সে সর্ম্পকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম।

ময়নাতদন্তের মূল লক্ষ্য হলো প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর প্রকৃতকারণ, মৃত্যুর ধরণ, মৃত্যুকাল, মৃত্যু সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রমানাদি  সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বিষক্রিয়ায় মুত্যু হলে বিষের ধরণ, রোগের ব্যাপ্তি চিহ্নিতকরণ বা বৈশিষ্ট নির্ধারণ, অথবা কোন ব্যাক্তি মৃত্যুর পূর্বে স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং প্রদত্ত নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা শল্য চিকিৎসা কার্যকর বা উপযুক্ত ছিলো কিনা নির্ধারণ করাসহ প্রয়োজনীয় প্যাথোলজিক্যাল, কেমিক্যাল, রেডিওরজিক্যাল, সেরোলজিক্যাল প্রভৃতিসহ সব জৈবাঙ্গ পরীক্ষা করার মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করা। আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে, যেখানে কোন চিকিৎসক মৃত্যুর প্রত্যয়নপত্র লিখতে সক্ষম হন না বা যখন মনে করা হয় যে মৃত্যুটি কোন অস্বাভাবিক কারণে সংঘটিত, সেই সব ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রায়শই করা হয়। সর্বোপরি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উন্নতির মূলে ময়নাতদন্তই মূখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।

ক্লিনিক্যাল অটোপসি : ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ হয় আইনী উদেশ্যে এবং শিক্ষা বা গবেষণার জন্য। একটি সন্দেহপ্রবণ বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত আইনী কর্তৃপক্ষের অধীনে করা হয় এবং সেক্ষেত্রে মৃত ব্যাক্তির স্বজনদের সম্মতির প্রয়োজন হয়না। অন্যদিকে স্বজনদের অনুমতি প্রাপ্তি সাপেক্ষে গবেষণার উদ্দেশ্যে মৃত্যুর মেডিকেল কারণ অনুসন্ধানের জন্য ক্লিনিক্যাল বা একাডেমিক ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ইতালিয়ান ডাক্তারদের ময়নাতদন্তের মাধ্যমে প্রথম পৃথিবীর সবাই জানলো, কোভিড-১৯ মহামারিতে থ্রম্বোলিজমে মৃত্যুর কথা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আজকের পর্যন্ত এর অবদান এবং উন্নতির পিছনে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে ক্লিনিক্যাল অটোপসি। রোগ নির্ণয়, নির্ণয়কৃত রোগের স্বীকৃতি/ নতুন প্যাথলজির অন্বেষণ মৃতদেহের ক্লিনিক্যাল অটোপসির নিশ্চয়তার মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। আধুনিক উন্নতর প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অর্ন্তভক্তি রোগ নির্ণয় সহজতর করেছে, তবুও ক্লিনিক্যাল অটোপসির অবদান এখন পর্যন্ত কোন মহল অস্বীকার করতে পারছেনা।

ক্লিনিক্যাল এবং মেডিকোলিগাল সার্ভিস: ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ মেডিকো-লিগাল পরিসেবা সম্পন্ন করে, জনসাধারণ পেয়ে থাকে, প্রয়োজনীয় পরিসেবাগুলি যেমন ময়নাতদন্ত সহ অন্যান্য মেডিকো-লিগাল কাজ, বিষ নির্নয় ও চিকিৎসা, ডিএনএ-র প্রোফাইল দ্বারা পারিবারিক সম্পর্কের নির্ধারণ (পিতৃত্ব মাতৃত্ব নির্ধারণ, ভাই বোনসহ পারিবারিক সম্পর্ক নির্ধারণ) এবং পরিচিতি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ও মৃত্যুর নিরীক্ষণ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিতরণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে আরো উন্নততর কৌশল গ্রহণের জন্য মৃত্যুর কারণগুলির র্ভাচুয়াল ময়নাতদন্তের মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা সমৃদ্ধ হবে। অবশেষে বিভাগটি মেডিকো-লিগাল দিক তদারকির জন্য দেশের একটি সুপার স্পেশালাইজড মেডিকো-লিগাল শাখা হিসেবে মেডিকো-লিগাল পরিসেবা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।

ক্রিমিনোলজি এবং আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত বিকাশকারী গুরত্বপূর্ন শাখায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বাইরের দেশগুলি এটি উপলদ্ধি করে এই অনুশাসনে তাদের মানবসম্পদ বিকাশের দিকে ফরেনসিক মেডিসিনের শিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের উন্নতির সাথে পরিমানগত এবং গুনগত পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশে বেসরকারি এবং পাবলিক উভয় মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিনে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাদার বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি শিক্ষকদের গুরতর ঘাটতি রয়েছে। ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং মেডিকো-লিগাল সমস্যার সাথে সর্ম্পকিত নৈতিক ও আইনী দিকগুলির শিক্ষাদান, শেখার এবং অনুশীলনের সাথে জড়িত। মেডিকো-লিগাল দিক বিবেচনা করে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ মেডিকেল কারিকুলাম পরিকল্পনা করার উপযুক্ত সংস্থা হবে এবং মেডিকো-লিগাল সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করবে। একটি সুপ্রীম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে দেশের জন্য বিএসএমএমইউর অন্যতম জাতীয় প্রতিশ্রুতি হিসাবে প্রয়োজনীয় এবং দক্ষ মেডিকো-লিগাল পরিসেবাগুলি সরবরাহ করবে। এছাড়া  মৃত্যুর নিরীক্ষণ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিতরণ গবেষণার ক্ষেত্রে আরো কৌশল গ্রহনের জন্য রোগীর মৃত্যুর কারণগুলি নির্ণয়ে, র্ভাচুয়াল মৃত্যুর ময়নাতদন্তের মাধ্যমে অন্যান্য শাখা সমৃদ্ধি হবে। 

ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসা ক্ষেত্রে মেডিকেল এবং মেডিকো-লিগাল  কাজের অনুশীলনের রীতিনীতি ও আইন-কানুন বিষয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার সাথে মেডিকো-লিগাল কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং গবেষণায় ভূমিকা রাখবে। আগামীদিনে চিকিৎসা পেশায় আইনী দিক (আইন-কানুন) চিকিৎসা পেশার রীতিনীতির মেডিকেল ইথিক্স এবং মেডিকো-লিগাল কার্যক্রমে শিক্ষা গবেষণা নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং অপরাধ দমনে মূখ্য ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অবহেলিত ফরেনসিক মেডিসিনকে আধুনিকায়ন করতে হলে বিশ্বমানের উন্নত প্রযুক্তি সংযুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। সুতরাং এ বিষয়ে উন্নত গবেষণা এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অবিলম্বে ফরেনসিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক: ভাইস-চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়


আরও খবর



কুমিল্লায় স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রীসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ২৭ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
রবিউল বাশার খান, কুমিল্লা

Image

কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় আব্দুল জলিল নামে এক প্রবাসীকে হত্যার দায়ে তার স্ত্রীসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এই রায় দেন।

মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মো. শাহজাহান নামে একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় মোট ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আবু ইউসুফ মুন্সী বলেন, ২০১৩ সালের ৯ জুন ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে হোমনার বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন প্রবাসী আবদুল জলিল। পরদিন বাহের খোলা এলাকার রাস্তার পাশ থেকে জলিলের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হোমনা থানায় মামলা দায়র করেন তার ভাই তাজুল ইসলাম।

মামলায় পর নিহত আব্দুল জলিলের স্ত্রী শাহানাজ বেগম, মো. শাহজাহান, মো. কুদ্দুস মিয়া, আবদুল খালেক ও মো. রাজিব নামে পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানি শেষে বুধবার সকালে চারজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।

রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পলাতক ছিলেন। আদালতে হাজির মো. শাহজাহান নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।


আরও খবর



ঈদুল ফিতরে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে দেশ

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৯ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

আসন্ন ঈদুল ফিতরে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, র‌্যাব ছাড়াও আনসার সদস্যরা এ সময় মাঠে থাকবে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলার পুলিশ সুপারসহ (এসপি) সব অপারেশনাল ইউনিটকে ৩৪ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সতর্ক ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এবার ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চসংখ্যক পুলিশ সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এজন্য পুলিশ সদস্যদের ছুটিও সীমিত করা হয়েছে।

এছাড়া র‌্যাব দেশের অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে রেড ও ইয়েলো জোনে ভাগ করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। র‌্যাবের অন্তত ৮ হাজার সদস্য ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রায় ৬৫ হাজার সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় মাঠে থাকবে। রাজধানীকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলাদা নিরাপত্তা ছক এঁকেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া ৩৪ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঈদ ও বাংলা নববর্ষসহ টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামমুখী হবেন। এ সময়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা, চাঁদাবাজি ও জাল টাকার ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস; অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের ছুটির সময় সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময় মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় বাসাবাড়ি ফাঁকা হয়ে যাবে। এই সুযোগে চোর ও ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়। এ বিষয়েও বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদের পরই পহেলা বৈশাখ। এদিন মঙ্গল শোভাযাত্রাগুলো যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে সে লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে। ঢাকার রমনা বটমূল, বিআইসিসিসহ যেখানে যেখানে বর্ষবরণকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান হবে প্রত্যেকটা জায়গাতে স্যুইপিং করা, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেকটর দিয়ে চেক করাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাবের পক্ষ থেকেও ছয় স্তরের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদে মানুষের নিরাপত্তায় এলাকাভিত্তিক গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এ সময় ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে র‌্যাবের মোট আট হাজার সদস্য তৎপর থাকবে। কিছু কিছু এলাকাকে আমরা রেড জোন ও ইয়েলো জোনে ভাগ করেছি। নির্জন এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজধানীর রেড জোনের মধ্যে রয়েছে-রামপুরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকা। র‌্যাবের ৬ স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। সেগুলো হলো-গোয়েন্দা, ফুট প্যাট্রোল, মোবাইল প্যাট্রোল (মোটরসাইকেল বা পিকআপ নিয়ে), সাইবার ওয়ার্ল্ডের নজরদারি, স্পেশাল ফোর্স ও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় হেলিকপ্টার প্রস্তুত থাকবে। ফাঁকা ঢাকায় অনেকে উৎসব করতে গিয়ে মাদক সেবন করে। এগুলো ঠেকাতে র‌্যাবের মোবাইল টিম কাজ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদের নিরাপত্তায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার সাধারণ ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য সারা দেশে মোতায়েন থাকবে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অপারেশনে আমরা ব্যস্ত আছি। এরপরও ঈদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের যে সাধারণ আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসার আছে তারা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছে।

রাজধানীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির অপারেশন্স বিভাগ প্রণীত এ ছকে প্রাধান্য পাচ্ছে ঈদগাহ, বিপণিবিতান, মার্কেট, ব্যাংক এবং এটিএম বুথ। এছাড়া গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে আলাদা নিরাপত্তা ছক। নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দেহ ও অন্যান্য বস্তু তল্লাশি করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঈদগাহ প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের এলাকায় যাতে ভিক্ষুক বা হকার ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ কন্ট্রোলরুম বা হাইকোর্ট অভ্যন্তরে স্থাপিত সাব-কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন থেকে বিপণিবিতান এবং স্বর্ণের দোকানে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ব্যাংক এবং এটিএম বুথের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে। আবাসিক এলাকায় পুলিশের মোবাইল প্যাট্রোল লোকজনের গমনাগমনে দৃষ্টি রাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে ফুট প্যাট্রোলের আওতায় আনবে। মোটরসাইকেলবিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে। চেকপোস্ট, তল্লাশি ও গাড়ি চেকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে ট্রাফিক বিভাগ। এছাড়া ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের পক্ষ থেকে রাজধানীবাসীকে ১৪ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-গ্যাস সিলিন্ডার অথবা গ্যাসের লাইন, পানির লাইনসহ সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বাসা থেকে বের হওয়া। বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে এবং পূর্বে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কিনা পরীক্ষা করা। রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করা এবং প্রয়োজনে ৯৯৯ ফোন দেওয়া।


আরও খবর
জিআই সনদ পেল দেশের ১৪ পণ্য

বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪




বায়ুদূষণে শীর্ষে চিয়াং মাই, ১৮০ স্কোর নিয়ে ঢাকা তৃতীয়

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে বায়ুদূষণ। মেগাসিটি ঢাকার বাতাসেও নেই স্বস্তির খবর। বেশ কিছু দিন ধরেই শহরটির বাতাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর অবস্থাতেই রয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তবে সবচেয়ে বেশি দূষণ ভারতের দিল্লির বাতাস।

এদিন সকাল ১১টার দিকে আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১৮০ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকা, যা অস্বাস্থ্যকর হিসেবেই বিবেচিত।

দূষিত শহরের তালিকায় আজ শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, যার স্কোর ১৮৯। আর দ্বিতীয় অবস্থানে ভারতের দিল্লি, স্কোর ১৮২। এ ছাড়া ১৮০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা, চতুর্থ অবস্থানে আছে ভিয়েতনামের হ্যনয়, যার স্কোর ১৬৬। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে  ইন্দোনেশিয়ার মেদান, যার স্কোর ১৬৫।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।

২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে; যেমন: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।

বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এটা সব বয়সি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর।

এদিকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ১৯ মার্চ জানিয়েছে, বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা তিন দেশের মধ্যে পাকিস্তান আগে থেকে থাকলেও, নতুন করে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, এই তিন দেশের বাতাসে যে পরিমাণ দূষিত কণা রয়েছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি। বায়ুদূষণের ওপর ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট-২০২৩ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইকিউএয়ার। প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে পাকিস্তান দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। আফ্রিকার দেশ চাদ আর ইরানকে সরিয়ে যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ ও ভারত।

২০২৩ সালে বাংলাদেশের বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বা পিএম-২.৫ এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। পাকিস্তানের বাতাসে এর পরিমাণ ছিল ৭৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাতাসে এটি থাকা উচিত ৫ মাইক্রোগ্রাম। বাতাসে এই পিএম ২.৫ বেশি হলে ফুসফুসের ব্যাপক ক্ষতি হয়।


আরও খবর



সিলেটে কালবৈশাখির তাণ্ডব: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

প্রকাশিত:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
সিলেট প্রতিনিধি

Image

সিলেট ও সুনামগঞ্জে রবিবার (৩১ মার্চ) রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় এ শিলাবৃষ্টি। একেকটি শিলা ছিল বিশাল আকারের। চৈত্রের শেষে এমন শিলাবৃষ্টি বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শিলাবৃষ্টির পর থেকে সিলেটের প্রায় সব স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলমান রয়েছে। কারো এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিড়ে থাকলে বা ব্যানার ফেস্টুন অথবা গাছের ডাল-পালা বৈদ্যুতিক লাইনে পরে থাকলে তাদের অবগত করতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, রবিবার তারাবীর নামাজের পর সিলেট মহানগরসহ বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এরপর শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। ফলে রাস্তায় থাকা সাধারণ মানুষ, পথচারী ও ঈদের কেনাকাটায় যাওয়া লোকজন বিপাকে পড়েন। শিলায় প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের গ্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একেকটি শিলা আকারে অনেক বড় বড় ছিলো।

এর আগে সিলেটে এরকম শিলাবৃষ্টি দেখা যায়নি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করছেন অনেকেই। অনেকেই গাড়ি ভাংচুরের ছবি আপলোড দিয়েছেন। কারও কারও বাসার টিনের চালা ফুটো ও জানালার কাঁচের গ্লাস শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া অনেকের ছাদে থাকা পানির ট্যাংক ও পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানা গেছে। আহত হয়েছেন খোলা জায়গায় ও রাস্তায় অবস্থান করা কেউ কেউ।

সিলেট মহানগরের টিলাগড় এলাকায় ঝড়ে আটকা পড়া বেসরকারি চাকরিজীবি সিরাজ উ্দ্দিন বলেন, যে বড় আকারের শিলা পড়েছে; তা আমরা ছোটবেলায় দেখেছি। এত বড় আকারের শিলাবৃষ্টিতে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে, সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের পশ্চিমদর্শা এলাকায় একটি গ্যাসের রাইজারে আগুন লেগে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া এলাকায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

অপরদিকে, সুনামগঞ্জে ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে হাওরের আগাম জাতের ধানের ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন- ঝড়ে পাগলা বাজারের টিনশেডের কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে গাছপালা ভেঙে পড়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সুনামগঞ্জ শহরের ইকবালনগরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে যানচলাচল বন্ধ ছিল। আধা ঘণ্টার ব্যবধানে রাত সোয়া ১১টায় আবারও বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়।

ঝড়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পাগলা, কান্দিগাঁও, আসামপুর, বাঘেরকোনাসহ একাধিক গ্রামের অন্তত ২০ টি কাঁচা, আধাপাকা ঘর লন্ডভন্ড হয়েছে বলে জানা গেছে। ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাগলাবাজারের। বাজারে সড়কের দুইপাশের অস্থায়ী দোকানপাট ঝড়ের বেগে লন্ডভন্ড হয়ে যায়।

এদিকে, সুনামগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি এলাকায় চলন্ত সিএনজির উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ায় চালকসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের বৈষভেড় গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা যায়।

সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের হাছন তোরণ এলাকায় একাধিক গাছ ভেঙ্গে সড়কে পড়ায় দুইপাশের পরিবহন আটকে তীব্র জানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টা ব্যাপী ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের চেষ্টায় সড়কে জান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নিরুপন রায় চৌধুরী বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে আহত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৫ জন রোগী আসেন। তাদের মধ্যে সাদ্দাম নামের এক যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট ওসমানি মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে। রয়েল নামের আরেক যুবক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ঝড়ের সঙ্গে মাঝারি শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে হাওরের আগাম ধানের জাতের কিছু ক্ষতি হতে পারে। আমরা সব জায়গায় খবর পাঠিয়েছি। তবে এখন হাওরে ফসলের ক্ষতি তেমন হবে না বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, রাত সোয়া ১০টায় তীব্র বেগে ঝড় আসে। সঙ্গে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঝড়ে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


আরও খবর



তুরস্কে স্থানীয় নির্বাচনে এরদোগান বিরোধীদের জয়

প্রকাশিত:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ০১ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Image

তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে প্রধান নগরীগুলোতে বড় জয় পাওয়ার দাবি করেছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি। ধারণা করা হচ্ছে, ইস্তাম্বুল ও রাজধানী আঙ্কারায় দুই দশকেরও বেশি সময় পর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং তার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) সবচেয়ে বড় পরাজয় হতে যাচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার (৩১ মার্চ) ইস্তাম্বুলে স্থানীয় নির্বাচনে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।

শহরটির মেয়র সিএইচপি পার্টির একরেম ইমামোগলু জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতাসীন একে পার্টির প্রার্থীকে ১০ লাখের বেশি ভোটে হারিয়েছেন।

ভোটের পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাবেক ব্যবসায়ী ইমামোগলু জানিয়েছেন, যারা জাতির বার্তা বোঝে না তারা শেষ পর্যন্ত হেরে যাবে। আজ রাতে ইস্তাম্বুলের এক কোটি ৬০ লাখ নাগরিক আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রেসিডেন্টের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাতেও জয় পেয়েছে সিএইচপি দলীয় মেয়র মনসুর ইয়াভাস। তুরস্কের তৃতীয় বড় শহর ইজমিরেও এগিয়ে আছে সিএইচপি।

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৩৬টিতেই জয় পেয়েছে সিএইচপি।

এদিকে ভোটে এগিয়ে থাকার খবর পাওয়ার পর বিরোধী সমর্থকেরা উদযাপন করতে ইস্তাম্বুলে জড়ো হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ মশাল জ্বালিয়ে এবং তুর্কি পতাকা নেড়ে ভোটের ফল উদযাপন করে।

স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে দেওয়া এক ভাষণে এরদোয়ান বলেন, সারা দেশে তার দলের জনপ্রিয়তা কমেছে। এই ফল মূল্যায়ন করে ভুলগুলো সংশোধন করা হবে।’

২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত আগের নির্বাচনে সিএইচপির ইমামোগলু হারিয়ে দিয়েছিলেন এরদোয়ান ও তার দলকে। দুই দশক পর তিনি ইস্তাম্বুলকে এরদোয়ানের হাতছাড়া করেছিলেন। এবারের পরাজয়ও এরদোয়ানের জন্য বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।


আরও খবর