রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিকভাবে
পণ্যের সরবরাহ যেমন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি বেড়েছে দাম। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
বিপরীতে মানুষের আয় কমেছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের
প্রভাব মানুষকে ভুগিয়েছে বেশি। বেশিরভাগ দেশেই পণ্যের দাম গড়ে ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
এতে নতুন করে বিশ্বের ১৩০ কোটি লোক অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। আন্তর্জাতিক
অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পুরো বিশ্বকে আক্রান্ত করেছে। জ্বালানি
তেলের দাম বাড়ার কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হারকে উসকে দিয়েছে। একই সঙ্গে জাহাজ
ভাড়া বৃদ্ধিও সব পণ্যের দাম বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এর পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবে প্রায়
সব পণ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে স্বল্পোন্নত দেশগুলো ডলার
সংকটের মুখে পড়ে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এতে ডলারের দাম বেড়ে গিয়ে আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে
দিয়েছে, যা অনেক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ডলারের বিপরীতে
স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়,
বাংলাদেশও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়ে। এ অবস্থা মোকাবিলার জন্য আইএমএফ দেশটিকে তিনটি
তহবিল থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেয়। গত বছর আইএমএফের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার মধ্যে
বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি।
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে
গত বছরের এপ্রিল থেকেই বাংলাদেশে ডলার সংকট শুরু হয়। জুলাইয়ে তা প্রকট আকার ধারণ করে।
এখন আরও কঠিন হয়েছে এ সংকট। এতে ডলারের দাম গত দেড় বছরে বেড়েছে বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
৮৪ টাকার ডলার এখন ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আলোচ্য সময়ে এর দাম বেড়েছে প্রায় ২৬ টাকা ৫০ পয়সা।
অথচ এর আগের বছর ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছিল ৫ পয়সা। ডলারের সংকট ও দাম বৃদ্ধির
কারণে দেশের ভেতরে পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতির হার ডাবল ডিজিটে পৌঁছেছে। এর
মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাস্তবে এ হার আরও বেশি বলে অনেকে
মনে করেন। এর প্রভাবে বাংলাদেশেও দরিদ্রতা বেড়েছে। কমেছে কর্মসংস্থান।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা
যায়, বাংলাদেশে কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে ৫ শতাংশের বেশি থেকে ৩০ শতাংশের কম। কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। এতে খাদ্য
মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বেশি।
আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে খাদ্যপণ্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনায়।
এতে উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্যের দাম আবার বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে মানুষের ভোগান্তি আরও
বাড়বে।
২০২২ সালের মে থেকে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার
সম্মুখীন আটটি দেশের জন্য ইতোমধ্যে আইএমএফ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশসহ আরও সাতটি
দেশকে নতুন ঋণ কর্মসূচির আওতায় ঋণ দিয়েছে। এতে ওইসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিপত্রের
ঘাটতিজনিত ভারসাম্যে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, বেনিন, কাবো ভার্দে,
মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, শ্রীলংকা ও জাম্বিয়া। কর্মসূচিগুলো দেশগুলোকে খাদ্য সংকটের
প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করাসহ সামাজিক নিরাপত্তা জালকে শক্তিশালী করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য সংকটের সঙ্গে
সম্পর্কিত দেশগুলোকে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা দিয়ে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিপত্রে ভারসাম্য
রক্ষার কৌশল নিয়ে এগিয়ে এসেছে সংস্থাটি। এর লক্ষ্যে আইএমএফ নির্বাহী পর্ষদ গত বছর একটি
নতুন ঋণ অনুমোদন করেছে। ছয়টি দেশ এর আওতায় খাদ্য সহায়তা বাবদ ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে।
তাদের ঋণের কোঠা আরও বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। দেশগুলো হচ্ছে- বুর্কিনা ফাসো, গিনি, হাইতি,
মালাউই ও দক্ষিণ সুদান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএমএফ বৈশ্বিক খাদ্য
সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলার জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার
নীতি গ্রহণ করেছে। এ কারণে আগের নীতির অনেক সংস্কার করেছে। ঋণের শর্তগুলো বাস্তবায়নের
ক্ষেত্রে অনেক নমনীয় হয়েছে।