তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাটি নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। বিশেষ করে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে এই আইনে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধারাটির ‘অপব্যবহার’ বন্ধ ও বাতিলের দাবিতে সরব মুক্তমনারা। তাঁদের মতে, এ ধারা বিতর্কিত। আইনটি এমনভাবে করা হয়েছে, অনলাইনে যেকোনো তথ্য আদান-প্রদানকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যা অন্তরায়। অনেকেই আলোচনা সমালোচনায় শরীক হলেও বাস্তবে ৫৭ ধারায় কি আছে তারা জানেন না। অনেকেরই জিজ্ঞাসা ৫৭ ধারা কি? তাই সবার জ্ঞাতার্থে নিম্নে হুবহু এই ৫৭ ধারা তুলে ধরা হলঃ
তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬
ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও উহার দণ্ড
ধারা- ৫৭
১/কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা ইহলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷
২/কোন ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷
উল্লেখ্য ২০০৬ সালের আইনে শাস্তির বিধান "অনধিক দশ বৎসর কারাদণ্ডে" থাকলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ৪২ নং আইন) এর ৪ ধারা বলে শাস্তির বিধান বাড়িয়ে "অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং অন্যূন সাত বৎসর কারাদণ্ড" করা হয়।
শুরুতে এই আইনটিকে অনেকে স্বাগত জানালেও কালক্রমে ব্যাপকহারে এটির স্বেচ্ছাচারীমূলক অপপ্রয়োগের অভিযোগ বাড়তে থাকায় এটি বাতিলের দাবি প্রবল হয়ে উঠেছে।
ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এই আইনটিকে অনেক বিষয় একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। যে কারণে আইনের এ ধারা দিয়ে হয়রানির যথেষ্ট সুযোগ রয়ে গেছে। বিশেষ করে, ভিন্নমত দমনের জন্য এটা একটা পারফেক্ট টুলস। কিছু পরস্পরবিরোধী বিষয়ও এখানে যুক্ত আছে।
২০০৬ সালের বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়। ২০০৬ সালে এই আইন পাস হওয়ার পর থেকে এর প্রয়োগ কিংবা ব্যবহার নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। ২০১৩ সালে ২১ আগস্ট এই আইনে সংশোধনী আনা হয় উল্লেখ করে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এই আইনে সংশোধনী আনা হয় যাতে এই ধারাটিতে পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি করে অন্যূন সাত বছর এবং অনধিক ১৪ বছর করা হয়। ধারাটি প্রথম থেকেই ছিল অজামিনযোগ্য কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর সকল ধারাই ছিল অআমলযোগ্য। যার অর্থ দাঁড়ায়- পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই আইনে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। নতুন সংশোধনীতে এই আইনকে আমলযোগ্য করায় পুলিশের ওপর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকল না। পুলিশ চাইলেই যেকোনো সময় যেকাউকে এই ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে গ্রেপ্তার করতে পারবে। এই আইনে দোষীকে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে।