দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। বরাবরের মতো দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজরত শাহজালাল (র.) এবং হজরত শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখেন। বুধবারের (২০ ডিসেম্বর) এই জনসভায় শেখ হাসিনা দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন।
নৌকায় ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা থেকে শুরু করে দেশের যেসব অর্জন হয়েছে সেগুলো তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক যে উন্নতি হয়েছে সেটাও উল্লেখ করেন তিনি। জনগণের ভোট পেয়ে আবারও বিজয়ী হলে স্মার্ট বাংলাদেশসহ যেসব কাজ করতে চান সেটাও জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, বুধবার শুরু হওয়া দলীয় সভাপতির নির্বাচনি প্রচারণার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রচার-প্রচারণার শেষ সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন, আবার কিছু এলাকা সফরও করবেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রচারণা শুরুর পরদিনই বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ রাজধানীতে বিজয় র্যালি করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এ বিজয়ী র্যালি কার্যত নির্বাচনি শোডাউনে পরিণত হয়। মহানগরীর পাশাপশি সাভার, কেরাণীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে বিজয় র্যালিতে অংশ নেন।
দলীয় সভাপতি সিলেটে নির্বাচনি জনসভায় যোগ দেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) পাঁচটি জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। দলের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে শেখ হাসিনা রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলা, রাজশাহী বিভাগের নাটোর ও পাবনা জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি জেলার নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। ওই কর্মসূচিতে স্ব স্ব প্রান্ত থেকে দলের প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, সংশ্লিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা, থানা, পৌর আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ২৯ ডিসেম্বর বরিশাল সফরে যাবেন। ওই দিন বিকেল ৩টায় বরিশাল জেলা সদরে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। এরপর আগামী ৩০ ডিসেম্বর তিনি গোপালগঞ্জ এবং মাদারীপুর জেলা সফর করবেন। গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) আসন নিজের নির্বাচনি এলাকায় জনসভায় বক্তব্য দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এছাড়া এদিন তিনি মাদারীপুর-৩ আসনেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।
এদিকে আগামী ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্ল্যাহ বলেন, দলীয় সভাপতি সিলেটের পূণ্যভূমি থেকে বরাবরের মত নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার শেষ সময় পর্যন্ত তার প্রচারণা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও কয়েকটি জেলায় সফর করবেন। এছাড়া ভার্চুয়ালিও বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেবেন।
তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ছিল ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত, মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল ও নিষ্পত্তির সময় ছিল ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দের সময় ছিল ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্বাচনী প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকালটা পর্যন্ত চলবে।
যা বললেন প্রথম নির্বাচনি জনসভায়
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সিলেটে প্রথম নির্বাচনি জনসভায় আগামীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে দেশবাসীর কাছে তার দলের নির্বাচনি প্রতীক ‘নৌকায়’ ভোট চেয়েছেন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো যা টেকসই অর্থনীতি, মেধাভিত্তিক শিক্ষা, উন্নত সমাজ, ন্যায়পরায়ণ বাংলাদেশ, স্বচ্ছ বাংলাদেশ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা যাদের নৌকা মার্কার প্রার্থী দিয়েছি তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনাদের কাছে সেটাই আমার আহ্বান।
আপনারা কি নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন?– প্রধানমন্ত্রী সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে এ প্রশ্ন রাখলে উপস্থিত জনতা সমস্বরে দুই হাত তুলে তাতে সম্মতি জানায়।
এ সময় তিনি নির্বাচন বানচালকারীদের প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। সিলেট সফরকালে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।