এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন
নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার ইয়োন ফসে। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি আজ বৃহস্পতিবার সম্মানজনক
এ পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করেছে।
ইয়োন ফসের লেখা নাটক ও সাহিত্যের প্রশংসা
করে সুইডিশ একাডেমি বলেছে, তিনি তাঁর লেখায় তুলে এনেছেন অনুচ্চারিত থেকে যাওয়া বহু
কথা। বিশ্বজুড়ে তাঁর লেখা নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
পুরস্কারের ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা
(১০ লাখ ডলার) পাবেন নরওয়েজিয়ান এই লেখক। গত বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ফরাসি লেখক
আনি এরনো।
ইয়োন ফসের জন্ম ১৯৫৯ সালে। ৪০টির মতো নাটক
লিখেছেন তিনি। নাটক ও উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ বই রয়েছে ইয়োন ফসের। রয়েছে
অনুবাদের বইও।
ইয়োন ফসে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান
নাট্যকারদের একজন। সুইডিশ একাডেমির বর্ণনায় তিনি এ সময়ে সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হওয়া অন্যতম
নাট্যকার। তাঁর কথাসাহিত্যের খ্যাতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
নরওয়েতে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাকে শিল্পিত
সুষমায় লেখায় তুলে ধরেছেন ইয়োন ফসে। মানুষের উদ্বেগ ও দ্বিধাকে উপস্থাপনের মুনশিয়ানার
কারণে তাঁর রচনা প্রশংসিত হয়ে থাকে।
নোবেল কমিটি বলেছে, একক কোনো লেখার জন্য
নয়, তাঁর রচিত বিপুল সাহিত্যকর্মের জন্যই ইয়োন ফসেকে পুরস্কারটি দেওয়া হলো। কারণ,
তাঁর সাহিত্যকর্মের ছোট তালিকা করা যায় না, সেটা করার চেষ্টাও অসম্ভব কঠিন।
ইয়োন ফসের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে
রয়েছে তাঁর উপন্যাস ‘বোটহাউস’ (১৯৮৯) এবং ‘মেলাংকলি’ ১ ও ২ (১৯৯৫–১৯৯৬)। সাহিত্যিক
হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৩ সালে ‘রেড, ব্ল্যাক’ উপন্যাসের মধ্য
দিয়ে। আত্মহত্যার মনস্তাত্ত্বিক ভাষ্য তুলে ধরা এই উপন্যাসটিই তাঁর পরবর্তী সাহিত্যকর্মের
সুর বেঁধে দেয়।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়াস ওলসন
তাঁকে বর্ণনা করেছেন নানা বিচারে অনন্য এক লেখক হিসেবে। তিনি বলেছেন, ‘তাঁর লেখার বিশেষত্ব
হচ্ছে মানব–ঘনিষ্ঠতা। সেসব
আপনার গভীরতর অনুভূতিগুলোকে স্পর্শ করে যাবে। উদ্বেগ, নিরাপত্তাহীনতা, জীবনের অর্থ
ও মৃত্যু—এ রকম নানা বিষয়,
মানুষকে আসলে যার প্রতিটির মুখোমুখি হতে হয়।’
ওলসন লিখেছেন, ‘আমি মনে করি,
এসবের বিবেচনায় তিনি বহু দূর পর্যন্ত পৌঁছেছেন। আর তিনি যা কিছু লিখেছেন, সেসবের প্রতিটিরই
সর্বজনীন প্রভাব রয়েছে। তা নাটক, কবিতা বা গদ্য যা–ই হোক না কেন, মানবপ্রকৃতির মৌলিক
বিষয়গুলোর প্রতিও এগুলোর একই রকম আবেদন আছে।’
যাঁরা ইয়োন ফসের লেখার সঙ্গে পরিচিত নন
এবং জানেন না তাঁর লেখা কোন বইটি পড়তে শুরু করা উচিত—তাঁদের উদ্দেশে
ওলসন বলেছেন, তাঁর সব কটি নাটকই অত্যন্ত সুখপাঠ্য।
ইয়োন ফসের কথাসাহিত্যের মধ্যে ২০০০ সালে
প্রকাশিত উপন্যাসিকা ‘মর্নি অ্যান্ড ইভিনিং’ একটি চমৎকার
বই এবং ‘সেপ্টোলজি’ নামে তাঁর সাতটি
পরস্পর–যুক্ত উপন্যাসও
দারুণ বলে উল্লেখ করেছেন নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান।
এর আগে গতকাল বুধবার ন্যানোপ্রযুক্তির
অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার জন্য চলতি বছরে রসায়নে নোবেল পুরস্কারের জন্য তিন বিজ্ঞানীর
নাম ঘোষণা করা হয়। তাঁরা হলেন আলেক্সি ইয়াকিমভ, মুঙ্গি বাওয়েন্ডি ও লুই ব্রুস।
তার আগের দিন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
পান পিয়ের আগোস্তিনি, ফেরেন্স ক্রাউজ ও অ্যান লিয়ের। এই বিজ্ঞানীরা অতি ক্ষুদ্র সময়ে
অ্যাটোসেকেন্ডে আলোকতরঙ্গের স্পন্দন তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাঁদের এ গবেষণা আরও
দ্রুতগতির ইলেকট্রনিকস ও রোগনির্ণয় পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর করোনার
এমআরএনএ টিকা তৈরিতে ভূমিকার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন দুই গবেষক ক্যাটালিন
ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যান। ৯ অক্টোবর এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম
ঘোষণা করা হবে।
নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী
আলফ্রেড নোবেল। তাঁর ইচ্ছা অনুসারে প্রতিবছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য,
শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে যাঁরা
অবদান রাখেন, তাঁরা পান বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার।