বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মন্দা এড়াতে পেরেছে জার্মানি। নানামুখী সংকটের মধ্যে আশঙ্কা উড়িয়ে এ সময়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি সংকটের কারণে দেশটির মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়েছে। ফলে জার্মান অর্থনীতি এখনো বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসে জার্মানির ভোক্তা মূল্য সূচক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা ১০ দশমিক ৯ শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
মিউনিখভিত্তিক অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইফো ইনস্টিটিউট সম্প্রতি সতর্ক করেছে মূল্যস্ফতির সম্পূর্ণ প্রভাব এখনো ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়নি। যদিও সংস্থাটির সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, জার্মানিতে অক্টোবরে পণ্যের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কিছুটা কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউরোপীয় অঞ্চলে কিছু সময়ের জন্য মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘরে অবস্থান করবে। এ পরিস্থিতি সুদের হার আরো বাড়াতে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি সুদের হার ২০০৯ সালের পরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা আইএমকে ইনস্টিটিউটের থমাস থিওবোল্ড বলেন, এখনো স্পষ্ট নয় যে মূল্যস্ফীতির চাপ শীর্ষে পৌঁছেছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যপতনের কারণে মূল্যস্ফীতি ধীর হওয়ার আশা দেখাচ্ছে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এর মধ্যে মস্কো গ্যাস রফতানিতে লাগাম টানায় জার্মানিতে জ্বালানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে দেশটিতে জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতিকে ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি আসন্ন শীতে জ্বালানি সংকট নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ধরনের বিভিন্ন সংকট সত্ত্বেও সর্বশেষ প্রান্তিকে জার্মানির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে। এ পরিসংখ্যান অর্থনীতিবিদদের হতবাক করেছে। রয়টার্সের জরিপে বিশ্লেষকরা ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি দশমিক ২ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
ফেডারেল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস অব জার্মানি এক বিবৃতিতে বলেছে, কঠিন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও অর্থনীতি স্থিতিস্থাপক রয়ে গিয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, ক্রমবর্ধমান দাম ও ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকেই মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত ভোক্তা ব্যয়ে চালিত হয়েছে। এ সময়ে জিডিপি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋতুগত সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। এ হার বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস দশমিক ৮ শতাংশকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ইফো ইনস্টিটিউট চতুর্থ প্রান্তিকে জার্মান অর্থনীতি দশমিক ৬ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে। সর্বশেষ পূর্বাভাসে সরকার চলতি বছর ১ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং আগামী বছর দশমিক ৪ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে।