চট্টগ্রামে কোচিং সেন্টারের এক পরিচালকের দায়ের করা মামলায় চাঁদাবাজির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি। সোমবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
রনি’র আইনজীবী মিঠুন বিশ্বাস জানান, কোচিং সেন্টারের পরিচালক নগরীর পাঁচলাইশ থানায় রনি’র বিরুদ্ধে মারামারি
ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেছিলেন। পুলিশ তদন্ত করে উভয় অভিযোগের সত্যতা
পাওয়া গেছে উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগপত্র পর্যালোচনার পর
আদালত তদন্তে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণ হয়নি মর্মে আসামিকে দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারা থেকে
অব্যাহতি দিয়েছেন। তবে মারামারির অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩২৩,৩৪২,৫০৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করে
বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন: শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদে বাল্কহেড ডুবে ৩ জনের মৃত্যু
মিঠুন বিশ্বাস বলেন, ‘যেহেতু চাঁদাবাজির
অভিযোগ বাদ গেছে, এখন আর সেশন জজকোর্টে মামলার বিচার কার্যক্রম হবে না। দায়রা জজ আদালত
থেকে মামলাটি মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩০ আগস্ট থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ
শুরু হবে।’ অভিযোগ গঠনের
শুনানির সময় মামলার বাদী আদালতে হাজির ছিলেন না বলে জানান তিনি।
২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগে
২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং সেন্টারের পরিচালক
রাশেদ মিয়া বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি
এ মামলায় নুরুল আজিম রনিসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন নগর গোয়েন্দা
পুলিশের পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বর্মণ।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিল থেকে নিখোঁজ জেলের মরদেহ উদ্ধার
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি
বাদীর অফিসে গিয়ে আসামিরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বাদী এত টাকা দিতে পারবেন না
জানালে তাকে চড়থাপ্পর মারা হয়। মামলা দায়েরের আগে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ
থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছিলেন নুরুল আজিম রনি।
২০১৩ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের
সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নুরুল আজিম রনি। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও মহসীন
কলেজ শিবিরমুক্ত করা এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংকটে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচিত
হন তিনি। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৭ মে তিনি ভিন্নভাবে আবারও আলোচনায় আসেন। চট্টগ্রামের
হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে নির্বাচন চলাকালে একটি ভোটকেন্দ্রের কাছ থেকে
তাকে অস্ত্র, গুলি ও ব্যালট পেপারসহ আটকের তথ্য দেয় বিজিবি। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে
দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: মসজিদের কাঁঠাল নিলাম নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ৩
এছাড়া তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় অস্ত্র
আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। রনি ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ উল্লেখ করে তার
মুক্তির দাবিতে ওই বছরের ৮ মে থেকে টানা প্রায় এক সপ্তাহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জেলা
প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। ওই বছরের ৩০ জুন রনি জামিনে মুক্তি পান। পরে
তিনি দুই বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আদালত সাজা বাতিল করে রনিকে বেকসুর
খালাস দেন।
তবে অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলার বিচার
কার্যক্রম চলছে। গত ২০ জুন আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী বিজিবি’র চার সদস্য জানান,
নুরুল আজিম রনি’র কাছ থেকে অস্ত্র
উদ্ধার হতে তারা দেখেননি।