রাজশাহীতে আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে
দিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকেই বাগানের আম নামাতে
পারবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (৩ মে) দুপুরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক শেষে এই মৌসুমের আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। অপরিপক্ক আম বাজারজাত ঠেকাতে এ উদ্যোগ বলে জানান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত
সভায় জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব
আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং
সংক্রান্ত সভায় আম নামানোর এই তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে আম পাড়ার তারিখ
নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছরের সব ধরনের গুটি জাতের আম নামানো যাবে আগামীকাল
বৃহস্পতিবার ( ৪ মে) থেকে। আর উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ নামানো যাবে ১৫ মে
থেকে। এছাড়া লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ও রাণীপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৫ মে থেকে
নামিয়ে হাটে তুলতে পারবেন বাগানমালিক ও চাষিরা। আর ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে
ফজলি ও ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে। ১০ জুলাই
থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম নামানো যাবে।
কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্ৰহ করা
যাবে। নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারে পেলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। তবে কারও বাগানে
নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাকলে তা প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।
সভায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ
বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্য হচ্ছে আম। বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে তাই প্রতি
বছরই রাজশাহীতে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ
সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নির্ধারণ করা
হয়েছে।
এই সময়ের আগে যদি কোনো কৃষক বা ব্যবসায়ী অপরিপক্ক আম নামান তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেন শামীম আহমেদ।শামীম আহমেদ বলেন, আবহাওয়াগত কারণে কোথাও আগেই আম পেকে যায় তাহলে তাকে স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে তারপর গাছ থেকে নামাতে হবে। এরপর বাজারজাত করতে পারবেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আরও জানান, হাটগুলোতে
সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনাররাও
বিষয়টি দেখভাল করবেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক
মো. মোজদার হোসেন বলেন, বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে এই ক্যালেন্ডার
অনুযায়ী গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে হবে।
তিনি জানান, রাজশাহীতে এ বছর ১৯ হাজার
৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ রয়েছে। এবার জেলায় ৯৫ ভাগ গাছে
মুকুল এসেছিল। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে ১
হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা
ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন
আম উৎপাদন হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহীর অতিরিক্ত
পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা)
মো. আনিসুল ইসলাম।