মিয়ানমারের জান্তা সরকার তরুণ-তরুণীদের সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি নতুন এ আইন ঘোষণা করার পর ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। প্রতি মাসে ৫ হাজার করে আগামী ১২ মাসে প্রায় ৬০ হাজার তরুণ-তরুণীকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্প ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু জান্তা সরকারের এ পরিকল্পনা গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশটির তরুণ-তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সমাজমাধ্যম এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তারা হতাশা ও উদ্বেগের কথা প্রকাশ করছেন। অনেকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছেন।
মান্দালের বাসিন্দা ২০ বছর বয়সি অ্যালিন ইরাবতিকে বলেন, জান্তা প্রশাসনের জন্য আমি জীবন দিতে চাই না। আমি গোপনে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছি।
জাতিগত সংখ্যালঘুরা যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে সীমান্ত অতিক্রম করে সেসব এলাকায় চলে যেতে চাইছেন কেউ কেউ। আবার প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দিতে চাইছেন কেউ কেউ। কিন্তু এক্ষেত্রে কড়া শাস্তির বিধান রেখেছে সামরিক জান্তা।
এদিকে কেউ সেনাবাহিনীতে যোগ না দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তার শাস্তি তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল এবং জরিমানা। তবে ধর্মীয় বিষয়টি এক্ষেত্রে বাইরে রাখা হবে। সরকারি চাকরিজীবী এবং ছাত্রছাত্রীরা অস্থায়ী সময়ের জন্য নিস্তার পাবেন। কিন্তু সামরিক জান্তা রিজার্ভ ফোর্সেস ল নামে একটি আইন সক্রিয় করেছে। এর অধীনে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ৫ বছর দায়িত্ব পালন করতে হবে তাদের পদত্যাগ বা অবসরের সময়ের পর।
নতুন আইনের অধীনে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যকার পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যকার বয়সি নারীদের সেনাবাহিনীতে দু’বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু পেশাগত ক্যাটাগরিতে, যেমন ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এই বয়সসীমা যথাক্রমে ৪৫ এবং ৩৫ বছর হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের প্রশিক্ষণের সময় হবে তিন বছর।
সেনাবাহিনী মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানায়, প্রতি মাসে ৫০০০ যুবক ও যুবতীকে ডাকা হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যুবতীদের পঞ্চম ব্যাচ থেকে ডাকা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের ৫ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ সামরিক দায়িত্বের জন্য যোগ্য। এর মধ্যে ৬৩ লাখ যুবক এবং ৭৭ লাখ যুবতী।
এদিকে বিদ্রোহীদের হামলায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস বলছে, ২০২১ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য প্রায় ২১ হাজার কমেছে। এর মধ্যে আছে হতাহত হওয়া, চাকরি ছেড়ে যাওয়া অথবা পক্ষত্যাগ করা।