ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামছে বরিশাল নগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোপতে। এরমধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে বিভাগের এক সময়ের অবহেলীত পর্যটন কেন্দ্র পাথরঘাটার হরিণঘাটা। এখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে, দখিণের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর, পায়রা পূর্বে বিষখালী আর পশ্চিমে বলেশ্বর নদের মোহনায় প্রাকৃতির অকৃপণ রূপ-লাবণ্যে ঘেরা পর্যটন কেন্দ্র হরিণঘাটা। বাংলাদেশের দক্ষিণের এই অঞ্চলটি যেনো প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের আঁচলে ঢাকা। যেখানে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির এই লীলাভূমিতে। তবে এখানে পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনা থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত অবহেলীত অবস্থায় পরে ছিলো এই পর্যটনকেন্দ্রটি।
সম্প্রতি পাথারঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদারের দিন রাত নিরলস পরিশ্রমে হরিণঘাটা পর্যটনকেন্দ্র ফিরে পেয়েছে তার অস্তিত্ব। রুপান্তর হচ্ছে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে। একটি সৌন্দর্যপূর্নভাবে মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়ে অনেক স্থাপনা। সরেজমিনে দেখাগেছে, পূর্বের বনের ভিতরে প্রবেশের জন্য মরনফাঁদে পরিণত হওয়া পায়ে হাটা সেতুটি মেরামত করে নানান কালারের রংয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও বনের পাশে লোকালয়ে বসার জন্য পাকা বেঞ্চ নির্মান, ফাকা জমিতে বৃক্ষ রোপন, রাতযাপনের জন্য কটেজ নির্মান, রাতে আলোকিত করেত বিদ্যুতের সংযোগ, রাতের জ্যোৎস্না উপভোগ করতে গোলঘর স্থাপনসহ একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
তার নানামুখী উদ্যোগের ফলে অপরিমেয় সৌন্দর্যবিস্তৃত এই পর্যটন কেন্দ্র কর্মব্যস্ত মানুষেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু বিনোদনের জন্য ছুটে আসেন। ইতিমধ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে সমৃদ্ধ হতে শুরু করছে এখানকার অর্থনীতি। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি রেস্তোরা।
পর্যটকরা বলছেন, এখানে সুন্দরবনের আমেজ ও সমুদ্র পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করছে। সমুদ্রের বিশালতায় পর্যটকরা পাচ্ছেন অন্যরকম অনুভূতি। পূর্বে এখানে কোন প্রশাসনিক নিরাপত্তা পায়নি, বিদ্যুতের ব্যাবস্থা ছিলো না। হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া পর্যন্ত যাবার পায়ে হাটা সেতুটি অসম্পূর্ন ও চলাচলের জন্য অনউপযোগী ছিলো। তবে বর্তমান ইউএনও’র হস্তক্ষেপে এসব সংকট কেটে গেছে।
কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, হরিণঘাটা বিশ্বমানের পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে পর্যটকদের জন্য অনেক উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যটক বরণে সর্বদা প্রস্তুত হরিণঘাটা। পর্যটকেরা যাতে সকল প্রাকৃতিক দৃশ্য নিরাপদে স্বাচ্ছন্দ্যে অবলোকন ও উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সর্বদা প্রস্তুত উপজেলা প্রশাসন।
ছৈলারচর ॥ ঈদে বিশখালী নদীর বুকে জেগে উঠা দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক সুন্দার্য্য মন্ডিত পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচরে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। ফলে জমে উঠছে এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কাঠালিয়ার ছৈলারচরে ছুটে আসছেন।
কাঠালিয়ার স্থানীয় সংবাদকর্মী জুয়েল মাসুম বলেন, ঈদে প্রকৃতির অকৃপণ রূপ-লাবণ্যে ঘেরা এই পর্যটন কেন্দ্রে অনেক পর্যটক আসছে। এক সময় এখানে আসা এবং ঘুরেফিরে দেখা কষ্টের ছিল। তবে কাঠালিয়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার এখানে নানান উন্নয়মূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিনত করে গেছে ছৈলারচরকে। যদিও দর্শনার্থীদের নতুন রূপে সাজানো হয়নি ছৈলারচরকে, তারপরও অনেক পর্যটক দেখাগেছে।
গুঠিয়া মসজিদ ॥ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া এলাকায় নির্মিত বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। যদিও সবার কাছে এটি গুঠিয়া মসজিদ নামেই বেশি পরিচিতি। বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ও বৃহৎ মসজিদ কমপে¬ক্স এটি। শিল্পের ছোঁয়ায় নান্দনিক এ মসজিদটিকে ঘিরে ঈদ উপলক্ষে এখানে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ॥ ঈদে জমে উঠেছে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ঈদের আগে পর্যটক না থাকলেও ঈদের পরে সৈকতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েই চলেছে। পর্যটকদের উল্লাসে উৎসবমুখর সৈকত জমজমাট হয়ে উঠেছে।
এদিকে বৃষ্টিসহ বৈরী আবহাওয়া উপক্ষো করে ঈদের দিন থেকে বরিশাল নগরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যান, ত্রিশ গোডাউন, দূর্গাসাগর, প্লানেট পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহানারা পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষের উপস্থিত ছিল চোখে পড়ার মতো।