মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা- বিআরটিসি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন তিনি। বলেন, বিআরটিসিতে এখন দুই নম্বর চাকা লাগিয়ে এক নম্বর চাকার বিল করার দিন শেষ।
তিনি বলেন, কিছু কিছু দুষ্কৃতিকারী, বিশ্বাসঘাতক উন্নয়নের চাকা বাধাগ্রস্ত করতে বিআটিসিকে পেছনে টেনে ধরে রাখতে চায়। এসব ঘটনার পেছনে প্রতিষ্ঠানের কিছু লোকজনও জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিআরটিসিকে কোনো অবস্থাতেই পেছনে যেতে দেব না। এক ভাগ অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান বিআরটিসির চেয়ারম্যান।
আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সত্য কথা আমার বিরুদ্ধেও লেখা যাবে। প্রতিষ্ঠানে এক সময় রিকশা চালক ও সবজি দোকানদারদের নিয়োগ দেওয়া হতো। আমরা অদক্ষদের চাকরি থেকে বিদায় না করে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলেছি।
সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এক সময় বিআরটিসিতে নানা সংকট ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পেছনের সব জঞ্জাল আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠেছি। আগমী ৩ বছর নতুন গাড়ি না আসলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হবে না।
কল্যাণ তহবিল নীতিমালা করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, বদলি নীতিমালা করা হবে। বিআরটিসির কোনো কর্মচারী এখন চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না। কেউ মারা গেলে দাফনের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হবে। অবসরে যাওয়া ৫০০ জনের বকেয়া ১২০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী কেউ অবসরে গেলে এক মাসের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। ডিপোগুলোতে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাড়িতে ভিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার ও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সব ডিপোতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়। অকারণে অর্থ ব্যয় করিনি বলেই অনেকেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নতুন ৯০০ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ৩৪টি ইউনিটের জন্য আরও ১৮ হাজার জনবলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিআরটিসি বাসে আগামী মাসে র্যাপিড পাস চালু হবে। রাজধানীতে চলা আটটি বাসে চালু হয়েছে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানের আয়ের অর্থ পকেটে ঢুকানো বন্ধ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সব নিয়োগের স্বচ্ছতা দাবি করে বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় বিআরটিসিতে ছয় মাসের বেতন বকেয়া ছিল। দীর্ঘ সময় পর প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেছে। প্রতি মাসের এক তারিখে বেতন দেওয়া হয়। ২৩ বছর পর প্রতিষ্ঠানের শান্তি বিনোদন ভাতা চালু হয়েছে। বর্তমানে জনবল চার হাজার, দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন ৮০০ জন।
৫০০ ট্রাকে সার ও খাদ্য পরিবহনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময় আমরা সেবা বন্ধ করিনি। দুই কোটি টাকা লস দিয়ে ট্রাকে সারা দেশে সার সরবরাহ করা হয়েছে।
মিথ্য ও অন্যায়ের সঙ্গে আপোস না করার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, আমি ছাড়ার মানুষ নই। জেলায় জেলায় আমাদের গাড়ি চলতে কেউ বাধা দেয় না। নতুন আরও এক হাজার বাস হলে ভালো হতো। ইলেকট্রিক বাস ও নতুন ট্রাক আনতে প্রকল্প নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
দক্ষ চালক তৈরীতে ২৪টি ট্রেনিং সেন্টারে বছরে ২০ হাজার চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই বছর পর এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ হাজারে। ৫০০ নতুন বাস হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বিআরটিসি লিজ প্রথা থেকে বেরিয়ে আসবে। বর্তমানে বান্দরবান ছাড়া সব জেলায় বিআরটিসি ১২০০ বাস সেবা দিচ্ছে। আন্তঃজেলার ১৬৭ রুটে প্রতিষ্ঠানের সেবা চালু রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০৮টি রুটে বাস চলছে। তিনমাস পর পর বিআরটিসি পর্ষদের বৈঠক করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০১৫-২১ সাল পর্যন্ত চালক ছাড়া বিআরটিসিতে কোনো নিয়োগ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে দীর্ঘ সময় সিএ ফার্ম দিয়ে প্রতিষ্ঠানের অডিটও বন্ধ ছিল। তবে অডিট আপত্তির বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনি জানান, আগে কোন অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো না। হলে বিআরটিসি আরও এগিয়ে যেত। গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল নিয়োগ হতো না। এক সময় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পিও পদে বাসের হেলপার দায়িত্ব পালন করত বলেও জানান তিনি।