বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যখন একের পর এক কর্মীদের ছাঁটাই করছে, ঠিক তখন বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ে। তিন বছরের মধ্যে অক্টোবরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিয়েছে দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো। শহরটির জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাত ব্যাপক আকারে প্রসারিত হয়েছে। ফলে কর্মী নিয়োগও বাড়িয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের সমীক্ষা অনুসারে, অক্টোবরে দুবাইয়ের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ৫৬ পয়েন্টে পৌঁছেছে। যদিও সেপ্টেম্বরে এ সূচক ৫৬ দশমিক ২ পয়েন্টে ছিল। পিএমআই ৫০ পয়েন্টের ওপরে কোনো খাতের সম্প্রসারণ এবং নিচে ওই খাতের কার্যক্রমে সংকোচন নির্দেশ করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝির পর থেকে নতুন ব্যবসায়িক প্রবাহের গতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। তাছাড়া জরিপের আওতায় থাকা সব খাতেই উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসাগুলো। বিশেষ করে ২০১৯ সালের জুলাইয়ের পর থেকে পাইকারি ও খুচরা খাত বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করে।
এ প্রসঙ্গে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের অর্থনীতিবিদ ডেভিড ওয়েন বলেন, প্রায় তিন বছরের মধ্যে কর্মসংস্থানের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রম সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ উচ্চ কাজের চাপের জন্য প্রস্তুত ছিল। পাশাপাশি পণ্যের কম দাম এবং হ্রাসকৃত পরিবহন খরচ তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার ব্যবসায়িক খরচ কমাতে সাহায্য করে, যা একই সঙ্গে অবদান রাখে উৎপাদন খরচ হ্রাসের ক্ষেত্রেও। গত মাসে উৎপাদন খরচ ২০২০ সালের আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি কমেছে। এতে দাম কমে যাওয়ায় চাহিদা আরো বাড়তে সহায়তা করেছে।
জরিপ অনুসারে দেখা যায়, নতুন পণ্য আদেশ ও বিক্রয় বৃদ্ধির ফলে গতি বেড়েছে সব খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে বিক্রয় বৃদ্ধির বিষয়টি ছিল এ বছরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই উচ্চ চাহিদা নতুন কর্মসংস্থান তৈরির হারকে ত্বরান্বিত করে। তাছাড়া অক্টোবরে পুনরায় দাম কমে যাওয়া এবং তিন মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার দামের পতন জ্বালানি তেল ও পরিবহন মূল্য হ্রাসের জন্যও অনেকাংশে দায়ী। এদিকে ৫ অক্টোবর ২৩ সদস্যের ওপেক প্লাস দেশগুলোর পক্ষ থেকে যখন প্রাত্যহিক জ্বালানি তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেয়া হয়, তখন বৈশ্বিক বাজারে বেড়ে যায় তেলের দাম। তবে চীনের চাহিদাসংক্রান্ত উদ্বেগ, বিশ্ব অর্থনীতির ধীরগতি এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সুদের হারের কারণে পরিস্থিতি কিছুটা নমনীয় অবস্থায় রয়েছে।
যা-ই হোক, নভেল করোনাভাইরাসজনিত মন্দা থেকে দুবাইয়ের অর্থনীতির শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন ঘটে গত বছর। চলতি বছরও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের পাশাপাশি আবাসন খাতের অবদান উল্লেখযোগ্য। দুবাই পরিসংখ্যান কেন্দ্রের প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে আমিরাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দুবাইয়ের জিডিপি বেড়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।