দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বাংলাদেশে একমাত্র পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রায় ২০ টি শকুন এখন অবমুক্তির অপেক্ষায়। দিনাজপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ ও আহত শকুন উদ্ধার করে শকুনের বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কেন্দ্রে নিবিড় পরিচর্যা করে রাখা হয়। সুস্থ্য হলে আবার তাদেরকে অবমুক্ত করা হয় মুক্ত আকাশে।
প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত বিলুপ্ত প্রায় এই শকুন। কিন্তু শীত মৌসুমে বাংলাদেশে চলে আসে কিছু শকুন। দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া এসব শকুন অনেক সময়ই অসুস্থ হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নামে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব শকুনের পরিণতি হতো মৃত্যু। দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্টে বাংলাদেশে একমাত্র শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের ফলে পাল্টেগেছে পরস্থিতি। প্রতি বছর প্রায় ২০/২৫টি উদ্ধার করা শকুন পরিচর্যা করে অবমুক্ত করা হয়।
সিংড়া ফরেস্ট বনবিভাগের কর্মকর্তা (রেঞ্জার) হরিপদ দেবনাথ জানান, শীত মৌসুমে অন্যদেশ থেকে আসা ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়া শকুনকে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে এই পরিচর্যা কেন্দ্রে এনে রেখে সুস্থ করে তোলা হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সেই শকুনগুলো অবমুক্ত করা হয়।
বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্টে পরিচর্যা কেন্দ্রে দ্বায়িত্বে থাকা ভেটেনারী চিকিৎক খাদিজা বেগম জানায়, পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা ২০টি শুকুন অনেক ভালো রয়েছে। তাদের জন্য আরো ১টি খাঁচা দরকার। শকুনই একমাত্র প্রাণি যা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণি খেয়ে হজম করতে পারে। কিন্তু বড় বড় গাছ না থাকার ফলে ও খাদ্যের অভাব ছাড়াও বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাকের যথেষ্ট ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে।
শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম দিপু জানায়, ২০১৪ সাল হতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ২০১৬ সাল হতে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে এই কেন্দ্রটি চালু করা হয়। গত ২০১৬ সাল হতে ২০২১ সাল পযন্ত উদ্ধার করে আনা ১৪৯ টি শকুন কয়েক মাস নিবিড় পরিচর্যায় রেখে সুস্থ হলে আবারো প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০২২ সালে ৩২ টি শকুন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেলেও ২০ টি শকুন এ পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে। বাকি ১২ টি শকুন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেলেও তাদেরকে সাময়িক চিকিৎসা শেষে অবমুক্ত করা হয়।
বীরগঞ্জের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে শকুন পরিচর্যা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে শকুন দেখাশুনা ও তদারকীর দায়িত্বে থাকা হাবিবুর রহমান জানায়, বেলাল হোসেন নামে এক ব্যাক্তি কে দিয়ে চিকিৎসাধীন ২০ শকুনের জন্য একদিন পর পর ১০ কেজি বয়লার মুরগি দেওয়া হয়। এছাড়াও স্যালাইন, পানি ও ওষুধ নিয়োমিত দেওয়া হয়।