চট্টগ্রামের কক্সবাজার
মহাসড়কের পটিয়া মনসা বাদামতলা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক যুবকের। লাশ ময়নাতদন্তে
পাঠানো হয় মর্গে। এরপর বাধে ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে দ্বন্দ্ব। নিহত যুবক হিন্দু না মুসলিম,
তাকে সৎকার করা হবে নাকি কবর দেওয়া হবে এই বেড়াজালে আটকে ২৩ দিন ধরে চমেকের হিমঘরে
পড়ে আছে ২৯ বছর বয়সী ওই যুবকের মৃতদেহ।
২৯ জানুয়ারি দুপুরে
তেলবাহী লরিচাপায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তার। একই ঘটনায় রউফুল হাসান নামে আরো এক যুবক
গুরুতর আহত হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন
তিনি।
নিহত যুবকের পরিবার
শুরু থেকেই দাবি করে আসছিল রতন দাস সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তাই হিন্দু ধর্মের
নিয়ম মেনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে চায় তারা। কিন্তু তার সহপাঠীদের দাবি, রতন ২০২০ সালের
১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার একটি মাদরাসায় মাওলানা হারুন এজাহারের
কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের দাবি, এর পর থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন
ও ইসলাম ধর্মের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতেন। তাই মুসলিম হিসেবে তার লাশ দাফন করতে আগ্রহী
সহপাঠীরা।
বিষয়টি প্রমাণ
করতে সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন হাফেজ ক্বারী আকরাম
হোসাইন। এখন আদালতের রায়ের অপেক্ষায় নিহত যুবকের পরিবার ও সহপাঠীরা।
হলফনামা সূত্রে
জানা গেছে, ওই যুবকের নাম রতন দাস (২৯)। বাড়ি মিরসরাই উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামে।
তার বাবার নাম মনো দাস ও মায়ের নাম সন্ধ্যা রানী দাস। রতন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান
হওয়ায় ধর্ম পরিবর্তনের পরও মাকে নিয়ে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন
এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
হলফনামাটির বিষয়ে
অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহত যুবক দুই বছর আগে মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ
করার জন্য জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নাম পরিবর্তন করে আহমাদ হয়েছেন। যার নোটারি নম্বর-
১১০৫৪৪। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ছবিও রয়েছে। হলফনামামূলে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট
সম্পাদন করেছি।
নিহত যুবকের সহপাঠী
শফিউল বাশার বলেন, সে (রতন) ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর বলে গেছে- যদি কখনো আমার আগে তার
মৃত্যু হয় তাহলে মুসলিম হিসেবে দাফন করতে। বিষয়টি আদালতে প্রমাণ করতে আমরা সব কাগজপত্র
সংগ্রহ করেছি। দুই-এক দিনের মধ্যে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বিষয়টি প্রমাণ করব।
নিহতের মা সন্ধ্যা
রাণী দাস বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো আইন নেই মায়ের কাছ থেকে তার ছেলেকে আলাদা করার। আমি
মহামান্য আদালতের কাছে আশা করছি আমার ছেলের লাশ আমার কাছেই ফিরিয়ে দেবেন।
মামলাটির তদন্ত
কর্মকর্তা পটিয়া হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক রুহুল আমিন বলেন, লাশটি বিগত ২৩ দিন পর্যন্ত
হাইওয়ে থানার দায়িত্বে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে। তদন্ত
শেষ পর্যায়ে। দ্রুত রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করব। আদালতের সিদ্ধান্তে লাশ হস্তান্তর
করা হবে।
৩০ জানুয়ারি পটিয়ার
সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রটেট বিশ্বেশ্বর সিংহ ধর্ম শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত
মৃতদেহ চমেক হাসপাতালের হিমাগারে রাখার নির্দেশ দেন। ২ মার্চের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন
দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি।