রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের
উদ্যোগে হল ডাইনিং-এ চালু হচ্ছে মিল সিস্টেমের খাবার । আগামী ১ অক্টোবর থেকে এই সিস্টেম
চালু হবে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সৈয়দ আমীর আলী হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান
খুবই নিম্নমানের ও স্বাদহীন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
খাবারের মান উন্নয়নে কয়েক দফায় হল প্রশাসনের সাথে বসেছে শিক্ষার্থীরা। সবশেষ ২৫ সেপ্টেম্বরে
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে বিশেষ এক মতবিনিময় সভায় বসে হল কর্তৃপক্ষ। সেখানে শিক্ষার্থীদের
সকল সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চান হল প্রভোস্ট।
এসময় হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। ফলে
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হলের ডাইনিংয়ে মেসের ন্যায় মিল সিস্টেম চালু করার
সিদ্ধান্ত নেন হল প্রভোস্ট।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিনের খাবারের টোকেন আগের দিন ডাইনিং চলাকালীন ডাইনিং
কাউন্টার থেকে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। দুপুর ও রাতের খাবারের
মূল্য ৩৫ টাকা করে নির্ধারিত হয়েছে। আগের দিনের ইস্যুকৃত টোকেন ছাড়া কাউকে খাবার দেওয়া
হবে না বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই সিস্টেমে প্রতিমাসের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে দুইজনকে ম্যানেজার করা হবে।
যারা খাবারের টোকেন সংগ্রহ করবেন তাদের মধ্যে দুইজন ও ডাইনিং কর্মচারীদের মধ্যে একজন
মিলে সকালে বাজার করবেন।
সপ্তাহে কোন দিনে কী রান্না হবে তার একটা চার্ট করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে দেখা
যায়, প্রতি রোববার দুপুরে মুরগি, সবজি ও ঘন ডাল এবং রাতে মাছ, সবজি ও ডাল ভর্তা পরিবেশন
করা হবে। সোমবার দুপুরে মাছ ভুনা, সবজি ও ডাল এবং রাতে একটি ডিম ভাজি, ভর্তা ও ঘন ডাল
পরিবেশিত হবে। মঙ্গলবার দুপুরে মুরগি ভুনা, সবজি ও ঘন ডাল এবং রাতে খিচুড়ির সাথে একটি
ডিম ভাজি, ভর্তা ও ডাল থাকবে। বুধবার দুপুরে মাছ, সবজি, যেকোনো একটি ভাজি ও ডাল এবং
রাতে ডিম, আলু ও মুড়িঘন্ট থাকবে। বাকি তিনদিনের মেন্যুর তালিকা কী হবে তা পরে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের হলের ডাইনিংয়ের খাবারের
মান খুবই বাজে। আমরা খেতেই পারি না। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থীর যে পরিমাণ ক্যালোরি দরকার
তা এই খাবার থেকে পাওয়া কখনোই সম্ভব না। আমরা পুষ্টিহীনতায় ভুগী। এই সমস্যা নিরসনে
আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এই সিস্টেমের ফলে আমাদের খাবারের মান ভালো হবে বলে আশা করছি।
শিক্ষার্থী এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে হলের সহকারী বাবুর্চি মো. কুরবান আলী বলেন,
শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগে আমরা খুবই খুশি। তাদের টাকায় তারা বাজার করে এনে দিবে আর
আমরা শুধু রান্না করে দেব। এতে আমাদের বিন্দুমাত্র কোনো আপত্তি নেই।
এ বিষয়ে সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মাহমুদুল হক বলেন,
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা
কম টাকায় ভালো মানের খাবার পাবে বলে আশা করছি। তাছাড়া ডাইনিং কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের
মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে যে, ডাইনিংয়ে
প্রতিদিন একই খাদ্য পরিবেশন করা হয়। মেস সিস্টেম চালুর ফলে এই সমস্যা নিরসন হবে। কারণ
শিক্ষার্থীরা যা বাজার করবে, তারা তাই খাবে।