চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানাধীন বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড় রক্ষায় জেলা প্রশাসন অভিযানে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫০ স্থাপনা উচ্ছেদ ও উদ্ধার হলো ২.৮৮ একর সরকারি খাস জমি। এই দুই দিনের অভিযানে পাহাড় কাটার ১৫ টি হটস্পট চিহ্নিত, পাহাড় কর্তনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে মামলা
রবিবার (৯ জুলাই) সকাল ১০:০০ টা থেকে বিকাল ৪:৩০ টা পর্যন্ত আকবর শাহ থানাধীন ফয়েজ লেক সংলগ্ন বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড় কেটে নির্মিত স্থাপনা ও ঘর উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনের চারজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়সমূহ রক্ষার্থে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (HRPB) কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নং-৯১১৪/২০২২ এবং আপীল বিভাগের সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপীল নং-২৪৯২/২০২২ রায় বাস্তবায়নে এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৬তম তম সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেমেছে জেলা প্রশাসক।
পাহাড় ও প্রকৃতি রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: তৌহিদুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি), কাট্টলী সার্কেল মো: উমর ফারুক; সহকারী কমিশনার (ভূমি), চান্দগাঁও সার্কেল মো: মাসুদ রানা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি), বাকলিয়া সার্কেল জামিউল হিকমাহ।
উচ্ছেদ অভিযানে সিএমপি'র ৮০ জন ফোর্স, আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালি উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসান, র্যাব-৭ দুটি টিম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম; মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, পিডিবির টিম, কর্ণফুলী গ্যাস প্রতিনিধি, ওয়াসা প্রতিনিধি এবং ৪০ জন আনসার ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানা, আকবর শাহ থানা, খুলশী থানা, সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর-আলীনগর এলাকা এবং অন্যান্য পাহাড়ি এলাকায় আইন ভঙ্গ করে, স্বত্ত্ব ব্যতিরেকে, অযৌক্তিকভাবে পাহাড় কেটে যে সকল স্থাপনা/ঘর গড়ে উঠেছে সেসকল স্থাপনা অবিলম্বে উচ্ছেদ করা হবে জানায় জেলা প্রশাসন।
এ বিষয় বিবেচনায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নির্দেশনায় মোতাবেক চট্টগ্রামের পাহাড় সমূহ পুনরুদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম আজকে দ্বিতীয় দিনের মতো সম্পন্ন হয়েছে। পাহাড়ের অবৈধ ও বিধি-বহির্ভূতভাবে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে স্থাপনা উচ্ছেদের প্রথম ধাপে চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা আকবর শাহ থানাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৮, ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে আকবর শাহ এলাকাতেই শুধু পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটেছে। বিভিন্ন এনজিও এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের রমরমা কার্যক্রমে আকবর শাহ এলাকার পাহাড় সমূহে ঘর-বাড়ি স্থাপন সহ অন্যান্য বসবাসের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ বস্তিগুলোতে বিভিন্ন দাতা ও দাতব্য সংস্থার ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। এখানকার ড্রেন, টয়লেট, রাস্তা এমনকি স্কুলিং কার্যক্রম চলে এদের অর্থায়নে।
দ্বিতীয় দিনের অভিযানে উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ২.৮৮ একর খাস জমি সহ মোট ৫ একর পাহাড়ি জায়গা থেকে আনুমানিক ৩৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের পর জায়গা যাতে পুনরায় অপদখল না হয় এজন্য পিলার ও কাঁটা তারের বেষ্টনী স্থাপনা করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের রায় বাস্তবায়নে এবার পাহাড় রক্ষায় চলমান অভিযানে পাহাড়ি ভূমি থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ/অপসারণের পাশাপাশি যেসকল ব্যক্তি জমিতে পাহাড় কর্তন করা হয়েছে এবং পরিবেশের বিনা অনুমোদনে স্থাপনে নির্মাণ করা হয়েছে সেসকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আলাদা নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।
অভিযানে যেসকল ব্যক্তি আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কেটেছে কিংবা পাহাড় কাটায় ইন্ধন যোগান দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরেজমিন অবস্থা পরিদর্শন করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। উদ্ধারকৃত পাহাড়ি এলাকার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।