আফগানিস্তানে
বিধ্বংসী ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য
আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে ক্ষমতাসীন তালেবানরা। ভূমিকম্পে দেশটিতে এক হাজারেরও
বেশি মানুষ নিহত এবং অন্তত দেড় হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে জরুরি আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করছে জাতিসংঘ। ভারী বর্ষণ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রের অভাবে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী
ও উদ্ধারকারীরা সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছের গ্রামগুলো
সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, রাস্তা ও মোবাইল ফোন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়েছে। নিহতের সংখ্যা
আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
দুই দশকের মধ্যে দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প তালেবানদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারা গত বছর পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় ফিরে আসে। ভূমিকম্পটি খোস্ত শহর থেকে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানে এবং পাকিস্তান ও ভারতে পর্যন্ত কম্পন অনুভূত হয়েছিল।
মানবিক ও অর্থনৈতিক
সংকটে রয়েছে আফগানিস্তান। একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান কর্মকর্তা আব্দুল কাহার বলখি বলেন,
সরকারের পক্ষে জনগণকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অর্থ সহায়তা করা অসম্ভব।
তিনি বলেন,
সাহায্য সংস্থা, প্রতিবেশী দেশ এবং বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো সাহায্য করছে। কিন্তু
সাহায্যের পরিমাণ অনেক বেশি পরিমাণে বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ, এটি একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্প,
যা কয়েক দশক ধরে দেখা যায়নি।
জাতিসংঘের প্রধান
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সংস্থাটি দুর্যোগ মোকাবিলায় পুরোপুরি সক্রিয় হয়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চিকিৎসক দল, জরুরি ওষুধ, খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে পাকতিকার গায়ন ও বারমাল জেলায়। গায়ানের একটি পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ভূমিকম্পে বেঁচে
যাওয়া শাবির বিবিসিকে বলেন, একটা জোরে শব্দ হলো এবং আমার বিছানা কাঁপতে লাগল। ছাদ
পড়ে গেল। আমি ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছিলাম, কিন্তু আমি আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি কাঁধ
ও মাথায় আঘাত পেয়েছি কিন্তু আমি বেরিয়ে আসতে পেরেছি। আমি নিশ্চিত আমার পরিবারের সাত
বা নয় জন, যারা আমার সঙ্গে একই ঘরে ছিল, তারা মারা গেছে।
পাকতিকার একজন
চিকিৎসক বলেন, আহতদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরাও রয়েছেন। ভূমিকম্পের আগে আমাদের কাছে
যথেষ্ট লোক এবং সুযোগ-সুবিধা ছিল না। এখন ভূমিকম্প আমাদের সামান্য কিছু যা ছিল, তা-ও
নষ্ট করে দিয়েছে। আমি জানি না আমাদের কতজন সহকর্মী এখনও বেঁচে আছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত
এলাকার একজন স্থানীয় সাংবাদিক বিবিসিকে বলেন, ভূমিকম্পের পর মোবাইল ফোন টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত
হওয়ায় যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আফগানিস্তান
ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থিত। গত এক দশকে দেশটিতে ভূমিকম্পে সাত হাজারের বেশি মানুষ
নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয়। দেশটিতে ভূমিকম্পে
বছরে গড়ে ৫৬০ জন মারা যায়।