আজঃ সোমবার ২০ মে ২০24
শিরোনাম

টহল ফাঁড়ির আঙিনায় জোড়া বাঘ, বনরক্ষীদের শ্বাসরুদ্ধকর ২০ ঘণ্টা

প্রকাশিত:রবিবার ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

বাগেরহাটের শরণখোলায় সুন্দরবনে টহল ফাঁড়ির আঙিনায় এসে পড়েছিল দুটি বাঘ। এই নিয়ে ২০ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করেছেন পাঁচ বনরক্ষী।

গতকাল শুক্রবার বেলা ২টা থেকে আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়িতে বাঘ দুটি অবস্থান করে। এরপর গভীর বনে ফিরে যায়।

এ নিয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত ফরেস্টার শেখ ফারুক আহমেদ বলেন, গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টার দিকে দুটি বাঘ চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ির পুকুর পাড়ে এসে বসে। এর বাঘ দুটি পানি পান করে পুকুর পাড়ে গড়াগড়ি শুরু করে। ফাঁড়ির আঙিনায় গড়াগড়ি, খুনসুটি ও ছোটাছুটি করে সারা বিকেল পার করে।

গর্জন শুনে টহল ফাঁড়ির অফিস থেকে বের হতে গিয়ে আঙিনায় জোড়া বাঘ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন পাঁচ বনরক্ষী। সন্ধ্যার পর বাঘ দুটি বনরক্ষীদের পুরোনো ব্যারাক ও রান্নাঘরের নিচে এসে অবস্থান নেয়। আজ খুব সকালে বাঘ দুটি আবার পুকুর পাড়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার দিকে বাঘ দুটি বনে ফিরে যায়।

ফরেস্টার শেখ ফারুক বলেন, টহল ফাঁড়ির আঙিনায় জোড়া বাঘ থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বনরক্ষীরা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ছিলেন। সুন্দরবনে এখন বাঘের প্রজনন মৌসুম চলছে। বাঘ দুটি সঙ্গম করতেও এসে থাকতে পারে।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে চরখালী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ মজুমদার বলেন, সুন্দরবনে ২৫ থেকে ৩০ বছর চাকরি করেও একটি বাঘ চোখে পড়ে না। সেখানে চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়িতে এক সঙ্গে জোড়া বাঘ দেখা একটি বিরল ঘটনা।’


আরও খবর



আশুলিয়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শরবত বিতরণ

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
সাভার প্রতিনিধি

Image

ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলামের দিক নির্দেশনায় এবং উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি, মোজাফফর হোসেন জয়ের সার্বিক সহযোগিতায়, তীব্র গরম ও তাপপ্রবাহে আশুলিয়ায় পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করেছে সামাজিক ব্লাড ডোনার টিমের স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা।

গতকাল সোমবার দুপুরে আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে, সামাজিক ব্লাড ডোনার টিমের শেরআলী মার্কেট শাখা এই শরবত বিতরণ করেছে।

শেরআলী মার্কেট শাখা টিম লিডার ইমাম হুসাইন বলেন, আমরা পানীয় লেবুর শরবতের পাশাপাশি খাবার সেলাইন ও পানির বোতল বিতরণ করছি। সামনের দিনগুলোতেও আমাদের অন্যান্য শাখা টিম এই কাজ চলমান রাখবে যতদিন তাবদাহ থাকবে। এছাড়াও দেশের এই বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে, আমাদের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি চলমান রয়েছে, যা বাস্তবায়নে আমাদের সকল শাখা টিম একযোগে কাজ করে যাচ্ছি।

সংগঠনটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ মোজাফফর হোসেন জয় এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও আজকের দর্পণের আশুলিয়া প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান খাইরুল, দৈনিক নয়া দিগন্তের আশুলিয়া প্রতিনিধি এবং আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য মোঃ মশিউর রহমানসহ আরও অনেকে এসময় এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

সাংবাদিক মোজাফফর হোসেন জয় জানান, কয়েকদিন ধরে বাড়ছে তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনসাধারণ। বিশেষ করে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়ছে চরম বিপাকে। রাস্তায় বেড় হলে প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণার্ত হচ্ছেন তারা। এতে করে হিটস্ট্রোকের সম্ভবনা রয়েছে। তাদের কথা ভেবেই শরীর শীতল রাখার জন্য সামাজিক ব্লাড ডোনার টিম এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ করে  আরও জানান, রাস্তায় বেড় হলে রোদ থেকে কিছুটা রক্ষার জন্য ছাতা ও একটি পানির বোতল সঙ্গে নিতে। যাতে হিটস্ট্রোকের মতো ঝুঁকি থেকে আমরা সকলে রেহাই পেতে পারি।

উল্লেখ্য এই সংগঠনটির উদ্যোগে এর আগেও ফ্রী ব্লাড গ্রুপিং ও রক্ত দেওয়াসহ নানা রকম সামাজিক কাজ করে আসছে।


আরও খবর



‘বুবলীর আগের সংসারে একটি মেয়ে আছে’

প্রকাশিত:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:সোমবার ২২ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
বিনোদন ডেস্ক

Image

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী সবসময় থাকেন আলোচনায়। এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত তার সিনেমা দেয়ালের দেশ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। তিনি পারিবারিক জীবন নিয়েও বেশ সমালোচিত। বুবলীর অতীত নিয়ে কথা বললেন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা সুরুজ বাঙালি।

ঈদ উপলক্ষে টিভি অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বুবলী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি (বুবলী) এখনও শাকিব খানের স্ত্রী। তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয়নি, তবে আলাদা থাকছেন। বীরের কথা ভেবে তারা সময় নিচ্ছেন।

বুবলী জানান, শাকিবের বাসায় গেলে অপু-জয়ের সঙ্গে দেখা হয় বুবলী ও বীরের। একবার বীর ও শাকিবের সাথে রুমে সময় কাটাচ্ছিলেন বুবলী, এ সময় জয়কে নিয়ে উপস্থিত হন অপু। বুবলীর এমন মন্তব্যে নেট দুনিয়ায় শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর শুনে নাকি বিরক্ত শাকিব ও অপু।

একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা সুরুজ বাঙালি। তিনি বলেন, বর্তমানে শাকিব-অপু দুজনেই ভালো আছে, তাদের মধ্যে বুবলী ঢুকে সবকিছু নষ্ট করতে চাইছে।

তিনি আরও বলেন, বুবলী শাকিব খানের লেজ ধরে এই পর্যন্ত আসছে। তাকে ধরে ১০টি ছবিও করেছে। তাকে শাকিবই উপরে উঠাইছে। আর বুবলী কিন্তু আগে থেকেই বিবাহিত, এটা শাকিব জানতো না। তার আগের ঘরে একটি মেয়েও আছে। এটা পরে জানতে পেরে শাকিব তাকে এড়িয়ে চলেছে। কিন্তু বীরতো শাকিবের রক্তের তাই শাকিব বীরকে কখনওই ফেলে দেবে না।

বুবলীকে নিয়ে সুরুজ আরও বলেন, বুবলী চায় বীরকে দিয়ে শাকিবের সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে। যেখানে শাকিব-অপু এখন এক হয়ে গেছে তখন তার এর মধ্যে নাক গলানোর কি দরকার?

শবনম বুবলী ২০১৬ সালে বসগিরি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পে তার অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি শ্রেষ্ঠ নবীনশিল্পী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। বর্তমানে বুবলী জনপ্রিয় সব সিনেমা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন দর্শকদের।


আরও খবর



সুন্দরবনে ২২ বছরে ৩২ বার আগুন, তদন্ত হলেও সমাধান নেই

প্রকাশিত:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

Image

২২ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ৩২ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবার এর কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে সেসব তদন্ত প্রতিবেদন ও দুর্ঘটনা এড়াতে করা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। ফলে নিয়মিত বিরতিতে আগুন লাগছেই। রবিবার (৪ মে) চাঁদপাই রেঞ্জের ছিলা এলাকায় আগুন লাগে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। অগ্নিনির্বাপণে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বনরক্ষী ও স্থানীয়রা।

অগ্নিকাণ্ড এড়াতে বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জোরালোভাবে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ তিনটি হলো, সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া নদী ও খাল খনন, অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটার পরপর ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে নজরদারির ব্যবস্থা করা, চাঁদপাই রেঞ্জের ভোলা নদীর কোলঘেঁষে বনের পাশ দিয়ে কাঁটাতার অথবা নাইলনের রশির নেট দিয়ে বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

সুন্দরবন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় তিনটি সুপারিশই বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে সুফল পাওয়া যাবে। আগুন নেভানোর কাজ চলছে।

সুন্দরবনে ২২ বছরে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৯০ একর বনভূমি। উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো ২০০২ সালের ২২ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের কটকাতে। ওই ঘটনায় পুড়ে যায় প্রায় এক একর ছন বন। এরপর ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলি ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় পুড়ে যায় তিন একর বনভূমি। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর আড়ুয়াবেড় এলাকায় পুড়ে যায় প্রায় ৯ শতক ছন বন। ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল ধানসাগর স্টেশনের অধীন কদলতেজী এলাকায় পুড়ে যায় প্রায় তিন একর বন। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর একই এলাকার তুলাতলায় পুড়ে যায় ৪.৫ একর বনভূমি। এরপর ২০০৬ সালের ১৯ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের তেরাবেকা এলাকায় আগুন লাগে। এর কিছু দিন পর ১১ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়ায়ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

এর একদিন পর কলমতেজির টহলফাঁড়ির খুটাবাড়িয়া এলাকার দেড় একর, ১ মে নাংলির পঁচাকুড়ালিয়া এলাকার ৫০ শতক, তিন দিন পর ধানসাগর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় ২.৫ একর বনভূমি। ২০০৭ সালে ৩ দফায় (১৫ জানুয়ারি, ১৯ মার্চ ও ২৮ মার্চ) একই এলাকার প্রায় ১৫ একর বনভূমি পুড়ে যায়। ২০১০ সালের ২০ মার্চ ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী এলাকায় প্রায় পাঁচ একর বন পুড়ে যায়। পরে ২০১১ সালের মার্চ মাসে দুই দফা বনে আগুন লাগে। এতে প্রায় সাড়ে তিন একর বন পুড়ে যায়। প্রায় ১০ একর বনভূমি পুড়ে যায় ২০১৪ সালের ২৫ মার্চের অগ্নিকাণ্ডে। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকার আগুন লাগে। ১৩ এপ্রিল একই এলাকায় ফের আগুন লাগে। পুড়ে যায় ৮.৫ একর বন।

১৮ এপ্রিল আব্দুল্লাহর ছিলায় এবং ওই বছরের ২৭ এপ্রিল তুলতলার বিলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ২০১৭ সালের ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন মাদ্রাসার ছিলা এলাকায় আগুন লাগে। ২০২১ সালের গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুড়েছে দানসাগর টহল ফাঁড়ি এলাকার প্রায় চার শতক বনভূমি।

প্রতিটি আগুন লাগার ঘটনার পরে আগুনের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ ও পরে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে সুপারিশসহ রিপোর্টও পেশ করে। তবে সেসব রিপোর্টের প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায় না।

জানা গেছে, শুধু আগুনেই পুড়ছে না সুন্দরবন। বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদই ধ্বংস করে চলছে প্রতিনিয়ত একশ্রেণির চক্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পেট্রোলিং আর জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বাঘ, হরিণ হত্যাসহ বনের সম্পদ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এই অবস্থার মধ্যে অক্সিজেনের অফুরন্ত ভাণ্ডার দেশের ফুসফুসখ্যাত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনে আয়তন ছিল বর্তমানের দ্বিগুণ। কমতে-কমতে বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন এখন দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির সর্বমোট ৫১ ভাগ। ২৪ ঘণ্টায় দুবার সমুদ্রের জোয়ারের লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয় সুন্দরবন।

সংরক্ষিত এই বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেসকো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। বর্তমানে যা সমগ্র সুন্দরবনের ৫২ ভাগ এলাকা। এখানে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। এ ছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, লোনা পানির কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তর জলাভূমিও। সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৪ দশমিক এক বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এ ছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ এক হাজার ৬০৩ দশমিক দুই বর্গ কিলোমিটার।

এই জলভাগে ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খালে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার।

ইতোমধ্যেই সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে এক প্রজাতির বন্য মহিষ, দুই প্রজাতির হরিণ, দুই প্রজাতির গণ্ডার, এক প্রজাতির মিঠা পানির কুমির।

করোনাকালে গোটা সুন্দরবনে সর্বোচ্চ সতর্কতা রেড অ্যালার্ট জারি করে পর্যটক, জেলে-বনজীবীদের বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বন অধিদফতর। এই নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যেও হুমকিতে পড়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনকে আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য বনে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য রোধে বনরক্ষীদের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। অসাধু বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নুরুল কবির বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা বনজীবীদের বিড়ি সিগারেটের আগুনে অনেক সময় আগুন লাগে। এ জন্য আমরা বনজীবী ও স্থানীয়দের সচেতন করেছি। সচেতনতামূলক কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ মতে ওয়াচ টাওয়ার করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাঘ, হরিণ হত্যার পাশাপাশি খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও আগুন দস্যুদের হাত থেকে সুন্দরবন রক্ষায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পেট্রোলিংসহ সব ধরনের পাহারা জোরদার করা হয়েছে।


আরও খবর



সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড : যা বলছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ০৫ মে ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। রোববার (৫ মে) বিকেলে এ বিবৃতি দেয় মন্ত্রণালয়টি। এতে বলা হয়, বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া ক্যাম্পের বনাঞ্চলের আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। আগুন গাছের ওপরে বা ডালপালায় বিস্তৃত হয়নি, শুধু মাটির ওপরে বিক্ষিপ্তভাবে বিস্তৃত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনাস্থলে বন বিভাগের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট, নৌবাহিনী, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সিপিজি, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনগণ অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করছেন। এছাড়া বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও অগ্নিনির্বাপণে ওপর থেকে পানি ছিটিয়ে সহায়তা করেছে।

শনিবার (৪ মে) দুপুর আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় আগুন লাগার ঘটনা প্রথম উদঘাটিত হয়। আগুন লাগার ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বন বিভাগের কর্মীরা স্থানীয় কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আগুন লাগার চারপাশে ফায়ার লাইন কাটার কাজ শুরু করেন।

কিন্তু ওই সময় ভাটার কারণে খালে কোনো পানি না থাকায় আগুনে পানি দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে রাতেই বন বিভাগের নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট ও পানি দেয়ার মেশিন এনে, সেটি রেডি করে পাইপ লাগিয়ে সেট করে রাখা হয়। পরে রোববার ভোর থেকেই বন বিভাগের কর্মী, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় জনগণ, সিপিজি, সিএমসির লোকদের নিয়ে আগুন লাগার স্থানে চারদিকে ফায়ার লাইন কাটার পাশাপাশি পানি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ পুরোদমে শুরু করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগুন লাগার স্থানের চারদিকে প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে ফায়ার লাইন কেটে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। তবে যেহেতু আগুন মাটির নীচ দিয়ে গাছের শিকড়ের মধ্যে দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে, কাজেই সতর্কতার সঙ্গে আগুন নেভাতে হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আগামী কয়েক দিন এখানে অগ্নি নির্বাপণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চলমান রাখা হবে। কেননা ফরেস্ট ফায়ার আপাতত নিভে গেছে বা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে মনে হলেও আবার যে কোনো সময় এটি নতুনভাবে সৃষ্টি ও বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয়ে তদন্তের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ সুন্দরবনের আগুন নির্বাপণ কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি ও সমন্বয় করছেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অবহিত আছেন এবং তিনি নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। এ কর্মকাণ্ড সরেজমিনে তদারকি করতে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সুন্দরবনের ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি ও কর্মপন্থা বিষয়ে আজ সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় খুলনায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।


আরও খবর



জিআই সনদ পেল দেশের ১৪ পণ্য

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

Image

টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যের ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই সনদ দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির মাল্টিপারপাস হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে সনদ তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশীকাঁথার জিআই সনদ তুলে দেওয়া হয়।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মেহনতি মানুষ শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্য সাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে। মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।

ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি বা টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল নামে একটি শাড়িকে জিআই স্বীকৃতি দেয়। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) এর কাছ থেকে অনুমোদনও পেয়ে যায় তারা। বিষয়টি বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। টাঙ্গাইল বাংলাদেশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হওয়ার পরও ভারত কীভাবে তা নিজেদের পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায়, সেট প্রশ্ন তোলেন শাড়ির ব্যবসায়ী, আইনজ্ঞ ও অধিকার কর্মীরা।

এরপর বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো উদ্যোগী হয়। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ৬ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির আবেদন করে। পরে তা অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশ করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়ি, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা ও গোপালগঞ্জের রসগোল্লার ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির সনদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন শিল্পমন্ত্রী।


আরও খবর