বর্তমান সময়ে
দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে খুনের চেয়ে ভয়াবহ অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। নর্থ
সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন ট্রাস্টির আগাম জামিন আবেদনের শুনানিকালে রবিবার (২২ মে)
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে
গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এদিকে জামিন
আবেদনের শুনানি শেষে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন
আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর
করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। ট্রাস্টি
বোর্ডের চার সদস্য হলেন- এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
আদালতে আসামিদের
পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল
এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
এর আগে গত ১২
মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা
ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়
জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক
মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী ঢাকায় এ মামলা করেন বলে কমিশনের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান
জানান।
মামলার আসামীরা
হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ডের
চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং
অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
এজাহারে বলা
হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)
ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন ও সম্মতির
মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩
হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে
অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও
বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরে বিক্রেতার কাছ
থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর
করে রাখেন। এরপর নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
‘অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর
মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন।’
মামলায় আসামিদের
বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের
৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
আইন-২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব
ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস
অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও
অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।