ওয়াশিংটন— সুপ্রিম কোর্ট শীঘ্রই গর্ভপাতের
সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করবে— এই সম্ভাবনায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শনিবার আমেরিকা জুড়ে রাস্তায়
নেমেছিল গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থকরা। এ সময় প্রজনন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
কর্মীদের উচ্চকিত কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, "আমার শরীর, আমার ইচ্ছা " স্লোগান।
ফাঁস হওয়া
খসড়া মতামত যে আদালতে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠরা উল্লেখযোগ্য রো বনাম ওয়েডের রায়কে
বাতিল করতে ভোট দেবে এ রকম খবর শোনার পর কর্মীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে এবং ভবিষ্যতের
জন্য সংঘবদ্ধ হতে দেশ জুড়ে সমাবেশ করে। এ দিকে রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলি কঠোর
বিধিনিষেধ কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত।
সুপ্রিম কোর্টের
উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে রওয়ানা হবার আগে জ্বালাময়ী ভাষণ শোনার জন্য রাজধানী ওয়াশিংটন
ডি.সি.তে, হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটন মনুমেন্টে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে
জড়ো হয়। সুপ্রিম কোর্টটি এখন দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঘিরে রাখা
হয়েছে।
প্রতিবাদে শামিল
হয়েছিলেন, সামান্থা রিভারস নামের ৬৪ বছর বয়সী ফেডারেল সরকারের একজন কর্মচারী, যিনি
গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি
নিচ্ছেন। তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার এই বয়সে, এখনও এই বিষয়ে
প্রতিবাদ করতে হচ্ছে।"
ওয়াশিংটনের
৩৪ বছর বয়সী ক্যাটলিন লোহার একটি কালো টি-শার্ট পরে এসছিলেন, যার উপরে ছিল সুপ্রিম
কোর্টের প্রয়াত বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গের "ভিন্নমতের" প্রতীকী
কলার এবং একটি নেকলেস, যেখানে লেখা ছিল "ভোট"।
লোহর বলেন,
"আমি মনে করি, নারীদের তাদের দেহ এবং তাদের জীবন নিয়ে কী করতে হবে, তা বেছে নেওয়ার
অধিকার থাকা উচিত। আমি মনে করি না গর্ভপাত নিষিদ্ধ করলেই গর্ভপাত বন্ধ হয়ে যাবে। এটি
কেবল গর্ভপাতকে অনিরাপদ করে তুলবে।"
পিটসবার্গ থেকে
ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনা এবং টেনেসির ন্যাশভিল থেকে লুববক, টেক্সাস পর্যন্ত, হাজার
হাজার মানুষ ব্যানস অফ আওয়ার বডিস বা "আমাদের শরীরে নিষিদ্ধ" ইভেন্টে অংশগ্রহণ
করেছিল। আয়োজকরা আশা করেছিলেন, দেশব্যাপী শত শত প্রতিবাদী অনুষ্ঠানের মধ্যে, সবচেয়ে
বড়টি শিকাগো, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং অন্যান্য বড় শহরে অনুষ্ঠিত হবে।
এক জনমত জরিপে
দেখা যায়, বেশিরভাগ আমেরিকান গর্ভপাতের অধিকার সংরক্ষণ করতে চায় - অন্তত গর্ভাবস্থার
প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে সুপ্রিম কোর্ট চাইছে রাজ্যগুলিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক। যদি
তাই হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক রাজ্য, বিশেষ করে দক্ষিণ এবং মধ্য-পশ্চিমে,
দ্রুত গর্ভপাত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শিকাগোর সমাবেশে
যোগদানের জন্য ৮০ মাইল ভ্রমণ করেন তিশা কিমন্স নামের এক মেয়ে। তিনি বললেন, তিনি গর্ভপাত
নিষিদ্ধ করতে প্রস্তুত ঐ রাজ্যের নারীদের জন্য ভয় পান। তিনি আরও বলেন, তিনি যদি ১৫
বছর বয়সে আইনী গর্ভপাত না করতেন, তবে তিনি আজ আর বেঁচে থাকতেন না।
রকফোর্ড, ইলিনয়-এর
একজন ম্যাসেজ থেরাপিস্ট কিমন্স বলেন, "আমি ইতোমধ্যেই নিজের ক্ষতি করতে শুরু করেছিলাম,
এবং আমি একটি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার চেয়ে বরং মরে যেতে চাই।"
নিউইয়র্কে,
ম্যানহাটনের দিকে মিছিল নিয়ে রওয়ানা হবার আগে, ব্রুকলিন ব্রিজ পেরিয়ে হাজার হাজার
মানুষ ব্রুকলিনের কোর্টহাউস প্লাজায় জড়ো হয়, যেখানে আরেকটি সমাবেশের পরিকল্পনা করা
হয়েছিল।
রবিন সিডন,
যিনি মন্টক্লেয়ার, নিউ জার্সির সমাবেশের জন্য ভ্রমণ করেছিলেন, তিনি বলেন, জাতি এমন
একটি জায়গায় রয়েছে যে ব্যাপারে গর্ভপাত অধিকার সমর্থকরা দীর্ঘকাল ধরে ভয় পেয়ে
আসছিল।
টেক্সাসে, যেখানে
গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার জন্য একটি কঠোর আইন রয়েছে, কংগ্রেসের সর্বশেষ গর্ভপাত বিরোধী
ডেমোক্র্যাটদের একজনের প্রতিদ্বন্দ্বী সান আন্তোনিওতে মিছিল করেন।
শিকাগোতে, কেজিরস্টেন
নাইকুইস্ট নামে একজন নার্স বলেন, "ফেডারেল নির্বাচন যতটা, প্রতিটি ছোট নির্বাচনে
ভোট দেওয়াও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।"
রো বনাম ওয়েডকে
কোডিফাই করার জন্য সিনেট যথেষ্ট ভোট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ার তিন দিন পর শনিবারের
সমাবেশগুলি অনুষ্ঠিত হল৷ স্পনসরদের মধ্যে উইমেন মার্চ, মুভ অন, প্ল্যানড প্যারেন্টহুড,
আল্ট্রাভায়োলেট, মুভঅন, এসইআইইউ এবং অন্যান্য সংস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ফাঁস হওয়া
মতামত অনুসারে, বিচারপতি স্যামুয়েল আলিটো এবং ব্রেট কাভানো, রো বনাম ওয়েডকে বাতিল
করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সারা
দেশে ক্যাম্পাস চ্যাপ্টারসহ একটি গর্ভপাত বিরোধী অ্যাডভোকেসি গ্রুপ, স্টুডেন্টস ফর
লাইফ অফ আমেরিকা, বলেছে, তারা শনিবার ওয়াশিংটনসহ যুক্তরাষ্ট্রের নয়টি শহরে পাল্টা
বিক্ষোভ করছে।