করোনা মহামারী শুরুর ধাক্কার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাছাই নিয়ে রক্ষণশীল দল যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন সাধারণ মানুষও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা। ব্রিটিশ নাগরিকরা নিজেদের সঞ্চয় ভেঙে জরুরি কেনাকাটা সারছেন। ব্লুমবার্গ নিউজ পরিচালিত এক দল অর্থনীতিবিদের প্রাক্কলনে দেখা গেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। করোনা মহামারী থেকে চলতি বছরে দেশটির অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন অন্যান্য প্রথম সারির অর্থনীতির মতো যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে।
ব্রিটিশ ডাক বিভাগের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত মাসে যুক্তরাজ্যের পোস্ট অফিসে ৩৩২ কোটি পাউন্ড নগদ অর্থ সঞ্চয় হয়েছে। জুনের চেয়ে তা ১০ কোটি পাউন্ড বেড়েছে। জুলাইয়ে ৮০ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড নগদ অর্থ তুলেছেন সঞ্চয়কারীরা। ২০২১ সালের একই মাসের চেয়ে যা ২০ শতাংশ বেড়েছে এবং মাসওয়ারি বেড়েছে ৮ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে এ উপাত্ত রাখা শুরুর পর সর্বোচ্চ অর্থ তোলা হয়েছে বলে জানায় ব্রিটিশ ডাক বিভাগ। ৪০ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। জীবনমানের ব্যয় বৃদ্ধিতে এবং আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় সঞ্চয় ভেঙে জরুরি প্রয়োজন মেটাচ্ছে ব্রিটিশ নাগরিকরা। প্রাত্যহিক জীবনযাপনে ব্রিটিশ নাগরিকরা যখন হিমশিম খাচ্ছে, সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা নিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে চলছে আরেক লড়াই। ৪০ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলার কৌশল নিয়ে তর্কে জড়াচ্ছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও সাবেক অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক।
ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের দাবি তুলেছেন অনেকে। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ চার্লি বিন। বরিস জনসনের সরকার চলতি বছরের শুরুতে যে সহায়তা প্যাকেজ দিয়েছে তা যথেষ্ট মনে করছেন না তারা। ব্রিটিশ সংবাদপত্র অবজারভারে লেখা এক মতামতে জরুরি বাজেট প্রণয়নের পরামর্শও দিচ্ছেন গর্ডন ব্রাউন। বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ায় অনেক পরিবার জ্বালানি দারিদ্র্যে পড়বে বলে আশঙ্কা সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর। প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ট্রাস ও সুনাকের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। কীভাবে ব্রিটিশ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে তা নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন এ দুই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।
কিছুটা এগিয়ে ট্রাস বলছেন, তিনি দায়িত্ব পেলে অবিলম্বে কর ছাড়ের ঘোষণা দেবেন। এদিকে ট্রাসের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী সুনাক জানান, এ ধরনের পদক্ষেপ কার্যকরে অনেক সময় লাগবে এবং যারা প্রকৃতই সংকটে রয়েছেন তাদের তেমন কাজে আসবে না।
ইউগভ পরিচালিত এক জরিপের বরাতে দ্য টাইমস জানায়, অধিকাংশ ভোটার এমন প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন যিনি কর ছাড় নয় বরং মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির ওপর নজর দেবেন। মূল্যস্ফীতির ফলে ভোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকছেন। এতে অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিওই গত সপ্তাহে সতর্ক করে জানায়, চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে মন্দায় পড়তে পারে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। এমনকি পুরো ২০২৩ সালও সংকোচনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে।
ব্রিটিশ পরিবারগুলোয় সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। অক্টোবর থেকে খানাপ্রতি ইউটিলিটি বিল ৪ হাজার পাউন্ড দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছরের একই মাসের চেয়ে যা চার গুণ বেশি।