দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে গেছে। রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে ব্যালট বিতরণ শুরু করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ সময় পুলিশ, আনসার সদস্যসহ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ব্যালট বুঝে নেন। ব্যালট পেপার দেয়ার সময় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা তা যাচাই করে হস্তান্তর করেন।
আজ ভোট শুরুর আগেই ৯৩ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছানো হবে। তবে দুর্গম এলাকায় ব্যালট শনিবারই (৬ জানুয়ারি) পৌঁছানো হয়।
ঢাকা মহানগরের রিটার্নিং অফিসার ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাইনি। আশা করি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। প্রথমবারের মতো ব্যালট পৌঁছে দিতে সবাই মিলেই কাজ করেছি। এরজন্য ব্যালট গ্রহণের জন্য আগে থেকেই কেন্দ্রের কর্মকর্তা প্রস্তুত ছিলেন। আর রাতভর কাজের মাধ্যমে ও যোগাযোগের কারণে কাজটি সহজ হয়েছে বলে জানান তিনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে ওঠে এবং বিরোধী দলগুলো অভিযোগ তুলে, যে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে, যে নির্বাচনের আগের রাতেই ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল ভোটের দিন সকালে ব্যালট পৌঁছানোর কথা বলেছিলেন। তার মতে, ‘অনেকের কাছ থেকে এই দাবি এসেছিল এবং এতে স্বচ্ছতা বাড়বে।’
এরআগে, শনিবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণে স্বচ্ছ ব্যালটবক্স, সিলসহ বিভিন্ন উপকরণ কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এদিকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে ভোটগ্রহণ। প্রায় ১২ কোটি ভোটার দেশের পরবর্তী শাসক নির্বাচন করবেন। তরুণ কিংবা নতুন ভোটারদেরও আবেগ-অনুভূতির কমতি নেই। সারা দেশে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার নতুন ভোটার মুখিয়ে আছেনে ভোট দেয়ার জন্য।
ইসির তথ্যানুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন।
নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০ জন। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৯৯ আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। এ ছাড়া সারা দেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এ ছাড়া দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন। এদের মধ্যে থাকছেন বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীও।