তরমুজের জন্য বিখ্যাত দ্বীপজেলা ভোলা। ইতোমধ্যেই তরমুজ কাটায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। চরের পর চর জুড়ে চলছে তরমুজ কাটা ও বিক্রির মহোৎসব। ফলন হয়েছে খুবই ভালো। আগাম তরমুজ করেছেন যারা তাদের মুখে হাঁসি ফুটলেও সবেমাত্র পেকে আসা তরমুজ চাষিরা পড়েছেন বেকায়দায়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি তাদের স্বপ্ন কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে।
অন্যদিকে পাড় হওয়ার অপেক্ষায় তরমুজ ভরা ট্রাকগুলো ঘাটে আটকে আছে ফেরীর অপেক্ষায়, কবে পাড় হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দ্বীপ জেলা ভোলার বিভিন্ন উপজেলার চরাঞ্চল গুলোতে কৃষকদের খেতে এখন তরমুজ আর তরমুজের সমারোহ। কাটা ও বিক্রিতে ব্যাস্ত কৃষক। তবে তরমুজ চাষের বড় এলাকা হচ্ছে চরফ্যাশন উপজেলার একাদিক বড় চর। ভোলার তরমুজ সুস্বাদু ও মিস্টি বলে সারা দেশেই ভোলার তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই আগাম তরমুজ চাষ করেছেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়।
কৃষকরা জানায় বিগত বছরের চেয়ে এবার তরমুজ চাষে খরচ পড়েছে বেশি। দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতির ফলে তাদের খরচও বেশি হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোলার বিভিন্ন চর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাইকাররা আসতে শুরু করেছে। অনেক বেপারী'রা আগাম তরমুজ কিনে দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে খুচরা বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা এ প্রতিবেদককে জানান তরমুজ খেতের কানি কিনেছেন প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকায়। এক কানি জমিতে ২/৩ হাজার তরমুজ ফলন হয়। বাজারে যেটা বড় সাইজ ১২ থেকে ১৫ কেজি ওজন সেটা বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৪শ’ ৫০ টাকায়। বিভিন্ন সাইজের তরমুজের বিভিন্ন দাম।
তবে বর্তমানে চিত্র উল্টো। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা অনেকেই বড় ধরনের লোকশান থেকে বাঁচতে আধাপাকা তরমুজ কাটতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। তাতে বাজারে বেড়ে গেছে সরবরাহ, কিন্তু আশানুরুপ দাম মিলছেনা। বড় ধরনের বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি হলে পথে বসতে হবে কৃষকদের। তাই তারা আগেভাগেই তরমুজ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এবার কৃষকরা চরের অনাবাদি জমিগুলোতেও তরমুজ চাষ করেছেন। খেতের মধ্যে তরমুজ কেটে স্তুপ করে তা ট্রলারে ও ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন মোকামগুলোতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তরমুজ চাষিদের আশা অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে, পাইকাররাও হতাশার মধ্যে পড়েছে।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুয়ায়ী, এ বছর ভোলায় তরমুজের আবাদের লক্ষমাত্র ছিলো ১১ হাজার ২শ’ ৪৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে তার চেয়ে বেশী ১৮ হাজার ৩শ’ ৮৩ হেক্টর জমিতে ভোলা জেলায় তরমুজের আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রশারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাসান ওয়ারেসুল কবীর জানান, ভালো তরমুজ হয়েছে। এটাকে বম্পার তরমুজ হয়েছে বলে বলা যায়। কৃষি বিভাগ তাদের সর্বক্ষনিক পরামর্শ দিয়ে আসছে। আশা করা যায় তারা এবার লাভবান হবেন।
আজকের দর্পণ/পরান আহসান/ ভোলা