কাশ্মীরে সংঘাত
ঘিরে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে
গিয়েছিল। পরস্পর সন্দেহ থেকে তারা পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনেরও প্রস্তুতি শুরু করছিল।
যদিও পরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় দুপক্ষের উত্তেজনা প্রশমিত হয়। নিজের
আত্মজীবনীতে এই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ‘নেভার গিভ অ্যান ইনচ: ফাইটিং ফর
দ্য আমেরিকা আই লাভ’ শীর্ষক বইটি
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী অঞ্চল কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে স্বাধীনতার পর অন্তত দুটি বড়সড় যুদ্ধ হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে দুই দেশই তাদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে। যদিও এ উপত্যকার ‘জম্মু ও কাশ্মীর’ ভারতের অধীনে রয়েছে। আর ‘আজাদ কাশ্মীর’ রয়েছে পাকিস্তানের অধীনে। কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদে উসকানির জন্য বরাবরই পাকিস্তানকে দোষারোপ করে আসছে ভারত। যদিও ইসলামাবাদ বরাবরই এ অভিযোগ নাকচ করেছে।
এ নিয়ে উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পুলওয়ামা জেলায় জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়কে সেনাবাহী বহরে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৪০ সেনা নিহত হন। হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। নয়াদিল্লি এ হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। যদিও ইসলামাবাদ তা নাকচ করে দেয়। এরপর পাকিস্তানের সীমান্তে দেড় শতাধিক যুদ্ধবিমান নিয়ে মহড়া চালায় ভারত। এমনকি পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ভারতের বিমান হামলায় ৩০০ জনের প্রাণহানির খবরও জানায় নয়াদিল্লির সংবাদমাধ্যম। পাকিস্তান ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে তাদের একজন পাইলটকেও আটক করে। যদিও পরে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। সেসময় দুই পক্ষই সীমান্তে ভারী সমরাস্ত্র মোতায়েন করে।
ওই উত্তেজনার প্রসঙ্গ টেনে পম্পেও তার আত্মজীবনীতে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের চিরবৈরিতা যে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরমাণু অগ্নিকূপের মুখে এসে পড়েছিল তা হয়তো অনেকে ভালোভাবে জানেও না। আমি জানি না ঠিক কীভাবে এটা বোঝানো যায়, তবে সত্য হলো, এটা (পরমাণু যুদ্ধ) একেবারে নিকটে ছিল।
১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে পম্পেও তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ভিয়েতনামের হ্যানয় সফরে ছিলেন। সেই রাতের স্মৃতি কখনো ভুলবেন না জানিয়ে পম্পেও বইয়ে লিখেছেন, সেসময় তিনি (ঘুম থেকে) জেগে যান। তিনি কথা বলেন ভারতের ‘কাউন্টারপার্ট’র (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমকক্ষ) সঙ্গে। পম্পেওর ভাষ্যে, ফোনের ওই প্রান্ত থেকে তাকে বলা হয়, তিনি (কাউন্টারপার্ট) বিশ্বাস করেন যে পাকিস্তান হামলার জন্য পরমাণু অস্ত্র প্রস্তুত করছে। তিনি পম্পেওকে জানান, ভারতও তার পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের চিন্তাভাবনা করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই মন্ত্রী বলেন, আমি তখন তাকে হুট করে কিছু করতে মানা করি এবং পরিস্থিতি সুরাহায় এক মিনিট সময় চাই। এরপর তিনি তার সঙ্গে হ্যানয় সফররত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তারপর তিনি তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাবেদ বাজওয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার সঙ্গে কয়েক দফায় আলাপে ভারতীয় ‘কাউন্টারপার্ট’র বক্তব্য তুলে ধরেন পম্পেও।
পম্পেও বলেন, তখন তিনি (জাবেদ বাজওয়া) বলেন যে এটা (পাকিস্তানের পরমাণু প্রস্তুতি) সত্য নয়। যেটা ভাবছিলাম, তিনি বলছিলেন যে, ভারতই পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ মিশনের কর্মকর্তারা উভয়পক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, অন্য পক্ষ পরমাণু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে না। এই ভয়াবহ পরিণতি এড়াতে সেই রাতে আমরা যা করেছিলাম তা অন্য কোনো দেশ করতে পারতো না। অবশ্য পম্পেওর এই দাবি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।