
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
বরগুনার বেতাগীতে বর্ষার আগেই বিষখালী নদীর ভাঙনের মুখে পড়ায় আতঙ্কিত ও ভাঙনরোধে কাজ শুরু না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছে বাসিন্দারা।
কাজ শুরুর আগেই ফের শহর রক্ষা বাঁধের একাধিক স্থান ও সড়কে ফাটল ধরায় কাঠ বাজার ও লঞ্চঘাট এলাকা রক্ষায়ই এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে ভাবে ধেয়ে আসছে তাতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করা না হলে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে চরম সমস্যায় পড়তে হবে এবং ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।
ইতোপূর্বে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লঞ্চঘাট, বন্দর, ছোট ছোট কলকারখানা, শত শত দোকান পাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে ভেড়িবাঁধ, ধানের খেত, মসজিদ ও মাদ্রাসা। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নব নির্মিত মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, যাত্রী ছাউনি, ভেড়িবাঁধ, বদনীখালী ও শহরের বাকী এলাকা।
শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা মো: শাহ আলম রুবেল বলেন, ‘ভাঙনের কবলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি, বাপ-দাদার বসতভিটাও চলে যাচ্ছে। এখনো ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু না করে এভাবে চলতে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?’ নদীর পাড়ের বাসিন্দা শ্রমজীবী আব্দুর রব বলেন, ‘বর্ষা চলে এসেছে, জানি না এবার আমাদের কপালে কী আছে। বিষখালী এখনই যেভাবে ভাঙছে, বর্ষা এলে কী অবস্থা হবে ভেবেই বুক কাঁপছে।’
জানা গেছে, স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত বছরের ২২ ফ্রেরুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১১তম সভায় বরগুনা জেলাধীন পোল্ডার নং ৪১/৭ এ বেতাগী শহর রক্ষা সহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষা কল্পে ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
কিন্ত ভাঙন তীব্রতর হলেও অদ্যাবধি ভাঙন প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
কাঠ বাজার এলাকার ঝালকাঠী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্পের মালিক মো: সোহেল হাওলাদার বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে তাঁর দোকান এলাকায় ভাঙন বেড়েছে। বর্তমানে পাকা সড়কে ফাটলে তার প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে নদীর ভাঙন চলে এসেছে। ঐ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হতে আর সময়ের ব্যাপার মাত্র। সামনের বর্ষায় ভাঙন আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে। এভাবে অব্যাহত থাকলে ভাঙনের কারণে স্থানীয়দের অনেক পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে। বহুদিন ধরে শুধূই শুনে আসছি কাজ শুরু হচ্ছে, কাজ শুরু হবে। কিন্ত কোন অগ্রগতি দেখছিনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে তিনি ঐ এলাকায় সরজমিনে গিয়ে রক্ষা বাঁধের ভাঙনের অবস্থা পর্যক্ষেন ও পরিদর্শন করে এসেছেন। যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তায়ন প্রক্রিয়া চলমান। সেহেতু সেখানে সংস্কার কাজ করার সুযোগ কম। মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে তবুও বাঁধের উপর নির্মিত সড়কটি সংস্কারের জন্য স্যারের সাথে কথা বলে প্রস্তাব পাঠানো যায় কিনা তা বিবেচনায় রয়েছে।’
বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম পান্নার সাথে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বেতাগী পৌর সভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির জানান,‘ ইতোমধ্যে দরপত্র দাখিল করা হয়েছে। ঠিকাদার চূড়ান্ত করার পর আশা করি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: সুহৃদ সালেহীন বলেন, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন পূর্বক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং যথা শীঘ্র সম্ভব টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত শেষে কাজ শুরু করা হবে।