নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ অভিযোগ মানুষ দিতে থাক। আমার উপরেও তো বিগ বসেরা আছেন। তাদের ছায়াতো রয়েছে আমার মাথার উপরে। তারা দেখবেন সব কিছু
ঘুষ ছাড়া সেবা মিলে না কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। অভিযোগ রয়েছে, নামজারি ও খারিজসহ জমিজমা সংক্রান্ত যে কোন কাজেই প্রকাশ্য টাকা নেন উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। অর্থ লেনদেনের একের পর এক ছবি ভাইরাল হলেও নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসন। এতে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে ওই ভূমি কর্মকর্তার কাছে।
সম্প্রতি একটি বে-সরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন। ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না তিনি। জমিজমা সংক্রান্ত কাজে ঘুষ নেয়া যেন তার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নামজারি ও খারিজ নিতে নজরুলকে দিতে হয় ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। জমির পরিমাণ ও ব্যক্তির অবস্থা দেখে টাকার অংকটা আরো বেড়ে যায়। জমিজমার বিষয় খোঁজ নিতে গেলেও ঘুষ দিতে হয় তাকে। প্রশাসন নির্বিকার থাকায় প্রকাশ্যেই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
ঘুষের টাকা ফেরত নেয়া আশিকুর রহমান জানান, তিন মাস আগে তাদের ১৯ শতক জমির খারিজের জন্য সরকারি ফি বাদে অতিরিক্ত আট হাজার টাকা দাবি করেন। আমরা সে টাকা দুই দফায় তাকে দেই। পরে তিন মাস পার হয়ে গেলেও তিনি খারিজ না দিয়ে আরো বিশ হাজার টাকা দাবি করেন।
ওই অফিসের অফিস সহায়ক ইউসুব আলী জানান, বেশ কিছু দিন আগে অফিসে আমার সামনেই স্যার আশিকুরের কাছে খারিজের জন্য ২০ হাজার টাকা চেয়েছেন।
ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম জানান, তার একটা খারিজের জন্য ৫ হাজার টাকা নিয়ে ৫ মাস ধরে ঘুরাচ্ছেন তাকে। বিধবা রোদেলা বেগম জানান, তার জমি খারিজের জন্য ৬ হাজার টাকা দাবি করেন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, ৩ হাজার টাকা দেয়ার পর আর টাকা দিতে না পারায় খারিজ হয়নি।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল কালাম জানান, তার কিছু জমির খাজনা দিতে গেলে ওই কর্মকর্তা ৮২ হাজার টাকা দাবি করে কয়েক দিন ঘোরাঘুরির পর উপরের লোক ধরে তা ১৫ হাজার টাকায় সমাধান হয়েছে।
আন্ধারীরঝাড় ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ খোকন উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নামজারি ও খারিজসহ জমিজমা সংক্রান্ত যে কোন কাজের জন্য ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার বা তারও বেশি প্রকাশ্য ঘুষ নেন উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। শুধু ঘুষ নিয়েই খান্ত হননি তিনি। হয়রানিও করছে সাধারণ মানুষদের। তিনি কারো তোয়াক্কা করেন না। দিন দিন তার অন্যায় কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে।
অভিযোগের কথা নিজেও স্বীকার করে নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ অভিযোগ মানুষ দিতে থাক। আমার উপরেও তো বিগ বসেরা আছেন। তাদের ছায়াতো রয়েছে আমার মাথার উপরে। তারা দেখবেন সব কিছু।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, সাব রেজিস্ট্রি অফিস বলেন, ভূমি অফিস বলেন, বিআরটিএ অফিস বলেন কোথায় অভিযোগ নেই, সব অফিসে অভিযোগ আছে। অভিযোগকারীরা যদি লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।