দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অনবদ্য ভূমিকা রাখছে বৃহত্তর শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। তিন দশকের বেশি সময়ের প্রচেষ্টায় নানা খাতে বিস্তৃত হয়েছে ব্যবসা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ। সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। যখন বিদেশে অর্থপাচারের মহোৎসব, তখনও দেশের টাকা দেশে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শিল্পগ্রুপটি। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সমৃদ্ধ করতে যখন দুর্বার দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে, ঠিক তখনই ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপকে ধ্বংসের পাঁয়তারা শুরু হয়। এই শিল্প গ্রুপকে আক্রমণ দেশের অগ্রযাত্রায় টুঁটিচেপে ধরার শামিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানী তথ্য বলছে, গত সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) বসুন্ধরা শিল্প পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে প্রশ্নবিদ্ধ যে মামলা দায়ের হয়েছে, এর পেছনে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিয়েছে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে নেতৃত্বদাতা চিহ্নিত চক্রের সদস্যরা। এই চক্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার একাধিক মামলাও রয়েছে। গত এক যুগ ধরে বিদেশে বসে রাষ্ট্র, সরকার, বঙ্গবন্ধু পরিবারসহ দেশের খ্যাতনামা ও প্রতিথযশা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।
জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে পুঁজি করে ফের বসুন্ধরা গ্রুপ তথা রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তে মেতে উঠেছে চক্রটি। দেশে-বিদেশে নানা প্রান্তে অবস্থানরত চক্রের সদস্যরা প্রত্যেকের জায়গা থেকে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। আর, এই চক্রটিকে উসকে দিয়ে অর্থের জোগান দিচ্ছেন ভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু সামশু এবং তার ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন।
তথ্য মতে, এই চক্রটির ইন্ধনে বসুন্ধরা শিল্প পরিবারের চার সদস্যসহ আটজনকে আসামি করে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে কথিত ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। মামলায় বসুন্ধরার চেয়ারম্যান, এমডিসহ কয়েকজন স্বনামধন্য ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে ওই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় দূরতম সম্পর্ক নেই।
এর আগে একই ঘটনাকে পুঁজি করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের উদ্দেশ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেছিলেন নুসরাত। পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১৮ আগস্ট আদালত ওই মামলা থেকে বসুন্ধরার এমডির নাম প্রত্যাহারের আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যাপক অবদান সর্বমহলে প্রশংসিত। ১৯৮৫ সাল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ শিল্পায়ন, আবাসনসহ নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িত। বর্তমানে এই গ্রুপের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে সিমেন্ট, বিটুমিনসহ বহু খাতে। বর্তমানে দেশজুড়ে নানা খাতে ৪৫টির বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই গ্রুপের। সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের। আর, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্প গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল দেশের অন্তত এক কোটি মানুষ। আবাসন খাতের প্রবৃদ্ধিতে শুধু বসুন্ধরা গ্রুপের অবদান প্রায় ২১ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য শিল্প গ্রুপের চেয়ে সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নেও সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে এই শিল্প গ্রুপ। প্রান্তিক পর্যায়ে ২০ হাজার ৭৮০ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে বিনাসুদে ঋণ প্রদান করেছে।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিল তিল করে বিস্তৃতি পাওয়া এই শিল্প গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান দেশের একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। ব্যবসায়িক দুরদর্শীতার মধ্য দিয়ে তিনি দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি হতাশাগ্রস্ত লাখ লাখ বেকার তরুণ-যুবকের ঘুরে দাঁড়ানোর প্লাটফর্ম গড়ে তোলেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এই শিল্প গ্রুপকে আধুনিক, যুযোপযোগী এবং দেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করে তোলার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সায়েম সোবহান আনভীর। তাঁদের মতো সম্মানিত ও অনুকরণীয় ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসানোর অপচেষ্টায় বিস্ময় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার অন্যতম কুশীলব কে এই সারোয়ার : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় বাদিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন। এই সারোয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে নাশকতা ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের একাধিক মামলা। নুসরাতের মামলায় অন্যতম কুশীলব হিসেবে সক্রিয় বিতর্কিত এই ব্যক্তি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যারিস্টার সারোয়ারের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানী। তার বাবা আব্দুল হাকিম হাওলাদার ছিলেন মুসলিম লীগের সদস্য এবং চিহ্নিত রাজাকার। উত্তরাধিকার সূত্রে পরিবারের সকল সদস্যই বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন। একসময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ২০০৪ সালের দিকে সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালে পরিচয় হয় তারেক রহমানের সঙ্গে। এরপর তারা একসঙ্গে বসে করেন ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার নীলনকশা। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে।
অনুসন্ধানী তথ্য বলছে, সারোয়ার তার স্ত্রী শেখ সোনিয়াকে নিয়ে অসংখ্যবার পাকিস্তান ভ্রমণে যান। ইসলামাবাদে অবস্থিত পাঁচতারকা হোটেল সেরেনায় বসে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাথে একাধিকবার বৈঠকও করেন তারা। এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। এমনকি আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার ছকও আঁকেন বেশ কয়েকবার।
বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২০১৩ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জ্বালাওপোড়া, নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের নেতৃত্বেও ছিলেন সারোয়ার। এ সংক্রান্ত মামলায় পাঁচ মাস জেলও খাটেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর থেকে বিএনপির টিকিটে নির্বাচনের জন্য সারোয়ারকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছিলেন তারেক রহমান। এখনও দেশের বাইরে বসে গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ও অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা এই সারোয়ার। অনলাইনে আইপি টিভি এবং ফেসবুকে নামে বেনামে পেইজ খুলে চালিয়ে যাচ্ছেন ভয়াবহ অপপ্রচার। দেশের সাধারণ মানুষের আবেগ ও সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন সার্বক্ষণিক। মুনিয়া ইস্যুকে পুঁজি করে শুরু থেকেই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করে আসছিল চক্রটি। বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধারসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসানোর অপচেষ্টা চক্রটির রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের সর্বশেষ সংযোজন।
অর্থের জোগানদাতা বিচ্ছু সামশু সিন্ডিকেট : অন্যদিকে, বিচ্ছু সামশু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারি করোনা ভ্যাকসিন চুরি, ইয়াবা ব্যবসার গোমর ফাঁস, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, ব্যাংকার মোর্শেদ হত্যাসহ একাধিক অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন বিভিন্ন গণমাধ্যম। এর জের ধরে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং এমডির বিরুদ্ধে এর আগেও মামলা করেছেন হুইপ সামশুল। মুনিয়া ইস্যুতে নুসরাতকে ‘দাবার গুটি’ বানিয়ে ফের অপতৎপরতা শুরু করেছেন।
অনুসন্ধান বলছে, মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। শারুনের বিরুদ্ধে মুনিয়াকে হত্যার অভিযোগও উঠেছিল। বিচ্ছু সামশু এবং তার ছেলের বিপক্ষে কেউ অবস্থান নিলেই নেমে আসে ভয়ংকর নির্যাতন। প্রতিশোধ নিতে শারুন চৌধুরী এতটাই ভয়ংকর হয়ে ওঠেন যে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজের বান্ধবী মুনিয়াকে হত্যা করে করেন। আর, নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মুনিয়ার বোন নুসরাতকে কোটি টাকা দিয়ে বশ করে সাজানো মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন।
ধর্ষণ ও হত্যা মামলার ছয় নম্বর আসামি শারুন চৌধুরীর সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিম। তথ্য মতে, মুনিয়ার সঙ্গে শারুনের পরকীয়া প্রেমের জের ধরে স্বামীর সংসার ছেড়ে এসেছিলেন মিম। শারুনের নানা অপকর্মের স্বাক্ষী থাকায় এবং শারুনের বিরুদ্ধে মামলা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে নুসরাতের মামলায় এই মিমকেও ফাঁসানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি প্রথম মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাকে সত্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করায় নতুন মামলায় আসামি করা হয়েছে নিরপরাধ বাড়ি মালিক দম্পতিকেও। এ ছাড়া এ মামলায় আসামি করা হয়েছে গত মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকেও। যিনি গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে শারুন চৌধুরী সম্পর্কে স্পর্শকাতর বহু তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন।