শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
পরিবর্তনের দৃশ্যপটে পাল্টে গেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। সরকারি এই দপ্তরকে ঘিরে ইতোমধ্যে উন্নয়ন-সৌন্দর্য, সেবা এবং উৎপাদন-সব মিলেই এক জনবান্ধব কর্মপরিবেশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি উদ্যোক্তা সমন্বয়ক ডা. মো. রায়হান পিএএ। তিনি মুজিব বর্ষ, ডেল্টা প্লান, এসডিজি, বার্ষিক কর্ম সম্পাদনা চুক্তি, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল এবং ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান পিএএ এই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণের পরই এই দপ্তর ও হাসপাতালের দৃশ্যমান ইতিবাচক সেবা বান্ধব পরিবর্তন এসেছে। সবমিলে- ‘সেবার সৌন্দর্যে উৎপাদন উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ বিভাগ শেরপুর’ -এই স্লোগানে সরকারি এই সেবাদানকারী দপ্তরটি মডেল হিসেবেও হিসেবেও দাড়িয়েছে দেশের অন্যান্য সরকারি দপ্তরসমূহের নিকট।
ডা. রায়হান পিএএ জানান, তিনি ১৯ অক্টোবর ২০২১ থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার পরেই সরকারের প্রাণিসম্পদ নিয়ে যে মিশন-ভিশন এবং ২০৪১’- সালের যে ভিশন রয়েছে সেটি বাস্তবায়নের জন্য কিছু ইনোভেটিভ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ‘অ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট’ জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন এবং সেবা সহজিকরণে ইতোমধ্যে তিনি শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে উদ্ভাবনী আাইডিয়াগুলি সরেজমিন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন যা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয়ভাবে সারাদেশেই অভুতপূর্ব সাড়া ফেলেছে।
সরেজমিন ঘুরে শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের নানামুখি পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। দৃষ্টিনন্দন গারডেনিং দৃশ্য এবং সৌন্দর্যের চিত্র শোভা পাচ্ছে হাসপাতালটির পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই। ইতোপূর্বের জরাজীর্ণ ক্যাম্পাসটি ফিরেছে বৈচিত্রময় রুপে।
এই দপ্তর ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন, সেবা সহজিকরণের জন্য সেবা সহজিকরণ ডেস্ক ও প্রাণিসম্পদ কর্ম বন্টন ডিসপ্লে, খামারি উদ্যোক্তাদের বিশ্রামের দৃষ্টিনন্দন ওয়েটিং কর্ণার, তথ্য সমৃদ্ধ মায়বী অপেক্ষণ, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল অনুসরণে সেবা অপ্রাপ্তি অভিযোগ বক্স স্থাপন অভিযোগ প্রাপ্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ, সেবা সহজিকরণে খামারিদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানের জন্য আলাদা আলাদা সংশ্লিষ্ট শাখা বিন্যাস, সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আইডেন্টিটি কার্ড প্রদান, তথ্য প্রাপ্তির দৃশ্যমান বোর্ড স্থাপন, সকল সেবা মুল্যের দৃশ্যমান তথ্য প্রদর্শন, অফিস ভবনের নান্দনিক সংস্কার, নিরাপত্তা সার্চ লাইট স্থাপন, পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তা যুক্তকরণ, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অফিস প্রাঙ্গন ল্যান্ডস্ক্যাপিং, অসুস্থ প্রাণির জন্য প্রাণিকল্যাণ শেড নির্মাণ, পোস্টমর্টেম কর্ণার, অপারেশন কর্নার, পেটসসেবা কর্নার, ভ্যাক্সিন কর্নার, ছয় ধরনের ঘাসের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন, ডিজিটাল তথ্য ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন, প্রাণিসম্পদ মূরাল/গ্যালারী, সার্জিক্যাল কর্নার, ডিসপোজাল পিট এবং যানবাহন রাখার জন্য পার্কিং জোন স্থাপন। কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে সকল স্টার্ফদের দৃষ্টিনন্দন কর্পোরেট ডেক্স স্থাপন এবং আধুনিক সম্মেলন কক্ষ ও খামারি সমাবেশ কিংবা খামারি বান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ মুক্ত মঞ্চ স্থাপন। জবাবদিহিতা আর সচ্ছতার জন্য আধুনিক ডিজিটাল অফিস ব্যাবস্থাপনা, ফাইল রেজিস্ট্রার শ্রেনিবিন্যাস, ডিজিটাল নথি ব্যাবস্থাপনা, জাতীয় ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ, দৈনিক চিকিৎসা এবং খামার পরিদর্শন বাহিস ওয়েব সাইটে তথ্য সংরক্ষণ, হালনাগাদ প্রাণিসম্পদ পরিসংখ্যান ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন।
জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা রায়হান পিএএ বলেন, সেবা কিভাবে সহজভাবে দেওয়া যায় এবং সেবা গ্রহীতা কিভাবে সেবা ভোন্তিমুক্ত গ্রহণ করতে পারেন সে-বিষয়ে কিছু কৌশল বাস্তবায়ন করেছি।
এদিকে, তৃণমুল পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ সেবাকে তরান্বিত করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ইউনিয়ন প্রাণিসম্পদ সেবা টিম গঠন করে দূর দুরান্তের খামারিদের সময়, মূল্য ও ভিজিট কমিয়ে গুনগত সেবাদান করে যাচ্ছে শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।
বগুড়া-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান সরেজমিন এই উন্নয়ন ও সেবাদান চিত্র পরিদর্শন করে বলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.রায়হান একজন নিবেদিত জনবান্ধব ডায়নামিক কর্মকর্তা তার নেতৃত্বে প্রাণিসম্পদের অভুতপুর্ব উন্নয়ন সাধন হচ্ছে যা সকল সরকারি দপ্তর ও সরকারি কর্মচারীদের জন্য আদর্শ হতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম ফেরদৌস আলম (প্রাণিসম্পদ-২) বলেন, সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা প্রতিটা কর্মকর্তার কাছ থেকে বের হয়না। আমি মনে করি ডা. রায়হান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটা ‘অ্যাসেট’ (অর্জন)।
প্রসঙ্গত: ডা. রায়হান স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি বানিজ্যিক ভিত্তিক দেশি মুরগির অরগানিক খামার মডেল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়ন সহ দেশি মুরগির জাত সংরক্ষণে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।এই কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় অনেক স্বীকৃতিও অর্জন করেছেন; জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক (ব্যক্তিগত সাধারণ শ্রেনীতে) এসি আই দীপ্ত কৃষি অ্যাওয়ার্ড, বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা দের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ২য় স্থান অর্জনসহ স্বর্ণপদক রেক্টর্স মেডেলসহ অন্যান্য অনেক সম্মাননাও পেয়েছেন।