আবহাওয়া, ত্বকের ধরণ সবকিছু বিবেচনায় রেখে বেছে নিতে হয় ক্রিম। অনেকে আবার দিনে ও রাতে একই ক্রিম ব্যবহার করেন, যা উচিত নয়। যে ক্রিমই ব্যবহার করেন না কেন, তা হতে হবে ভালো মানের। বয়স, ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে হবে ক্রিম। সাধারণ, শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র ও স্পর্শকাতর এই পাঁচ ধরনের ত্বক দেখা যায়। একটা সময় পর্যন্ত ত্বক এমনিই ভালো থাকে।
প্রয়োজন হয় না বাড়তি যত্ন নেওয়ার। কিন্তু ৩০ বছরের পর থেকে দেখা দিতে পারে সমস্যা। তাই আগে থেকেই সচেতন হওয়া ভালো। ত্বককে সব সময় ময়েশ্চারাইজড রাখতে হবে। এ জন্য বেছে নিতে হবে ভালো ব্র্যান্ডের ভালো মানের ক্রিম। শুষ্ক ত্বকের জন্য ভারী ক্রিম, তৈলাক্ত ত্বকে পানি বেশি আছে এমন ক্রিম আর স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য মানানসই ক্রিম লাগাতে হবে।
রেগুলার স্কিন কেয়ার বা ত্বকের যত্নে সচেতন হলে আপনি নিশ্চয় জানেন, সকালের ও রাতের স্কিন কেয়ার রুটিনে কিছুটা পার্থক্য আছে। সকালে যে প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়, রাতে সাধারণত সেগুলো ব্যবহার হয় না। আবার রাতের প্রোডাক্টগুলো দিনে ব্যবহার করা হয় না। কারণ দুই সময়ের প্রোডাক্ট ত্বকে দুইভাবে কাজ করে। দিনে প্রয়োজন হয় ত্বকের সুরক্ষার। আর রাতে ত্বকের সেলগুলো নিজ থেকে রিপেয়ার হওয়া শুরু করে। তাই তো রাতের ঘুমকে বলা হয় বিউটি স্লিপ।
ত্বকের যত্নে দিনের ক্রিম : ডে ক্রিম সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি, ধুলাবালি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এগুলো হয় হালকা ঘনত্বের। এতে তেল চিটচিটে ভাব থাকে না। ত্বকের সঙ্গে দ্রুত মিশে যায়। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করে এবং ভেতর থেকে কোমল করে তোলে। ডে ক্রিমে এসপিএফ থাকে, ফলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক থাকে সুরক্ষিত। কিছু কিছু ডে ক্রিমে ভিটামিন সি, কোজিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই থাকে। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এসে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে এমন উপাদান ডে ক্রিমে ব্যবহার করা হয় না।
যে কারণে ব্যবহার করবেন : ডে ক্রিমের রয়েছে ইউভি রে থেকে প্রটেকশন, যা ত্বকের বলিরেখা অথবা রিংকেল প্রতিরোধ করে। ডে ক্রিমে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। এ ছাড়া বাইরের ধুলাবালি থেকে স্কিনকে রক্ষা করে। শুষ্কতা রোধ করে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে।
ত্বকের যত্নে রাতের ক্রিম : রাতে স্কিন রিপেয়ারের কাজ করে এই ক্রিম। নাইট ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বককে সারা রাত ধরে ময়েশ্চারাইজড রাখে। ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে। ক্রিম ব্যবহারের সময় ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করা হয়। ফলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। স্কিন টোন ইভেন রাখে, বলিরেখা কমায়। এ ছাড়া রাতে ঘুমানোর সময় নিয়মিত নাইট ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বক রুক্ষ হয় না। ত্বক হয় নরম ও কোমল।
কেন ব্যবহার করবেন : সারা দিন ত্বকের ওপর নানা অত্যাচার হয়। যেমন ধুলোবালি লাগা, দূষণ, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি, কাজ ও মানসিক চাপের প্রভাব। এসব কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয়, তা ঠিক করার কাজটা হয় রাতে। একে বলে ত্বকের রিজেনারেশন। এ ছাড়া ঘুমের মাধ্যমে ত্বক থেকে বিষাক্ত উপাদান বের হয়। ঘুমের সময় কোলাজেন বাড়ে। কোলাজেনকে বলে ত্বকের বিউটি ফ্যাক্টর।
মূলত, ঘুমের সময় ত্বক ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত থাকলে বা ধুলোবালি, ময়লা, মেকআপ, ঘাম জমে থাকলে ত্বক এসব কাজ ভালোভাবে করতে পারে না। এতে সৌন্দর্য হারায় ত্বক। হয়ে যায় রুক্ষ ও নির্জীব। এ জন্যই ঘুমের আগে যত্নটা জরুরি।
যেভাবে ব্যবহার করবেন : শুধু ভালো ব্র্যান্ডের ক্রিম বেছে নিলেই হবে না। ত্বকে ক্রিম লাগাতে হবে সঠিক উপায়ে একটু সময় নিয়ে। প্রথমে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার লাগিয়ে নিতে পারেন। তারপর ব্যবহার করুন ক্রিম। ত্বককে ওপরের দিকে তুলে ধরে মুখে ক্রিম মালিশ করতে হবে। ফেসওয়াশও ব্যবহার করুন একই নিয়মে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখের ত্বক নিচের দিকে ঝুলে পড়বে, এটাই নিয়ম। গলায় ভাঁজ পড়ে সবার আগে। মুখের ক্রিমটা পুরো গলাতেও লাগাতে হবে। এতে মুখ ও গলার স্কিনটোন হবে একইরকম। নিচ থেকে ওপর দিকে ক্রিম লাগাতে হবে। গলার নিচের অংশেও ক্রিম লাগাবেন নিয়মিত। না হলে একটা সময় পর দেখা যাবে, মুখের ত্বক টান টান আছে, কিন্তু গলা ও নিচের অংশের চামড়া কুঁচকে গেছে।