আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। এমন ঘোষণার পর সিলেটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনকে ঘিরে বেশ আগ্রহী দেখা যাচ্ছে। প্রার্থী থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও ব্যাপক তোড়জোড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলার ১২টি উপজেলার অর্ধশতাধিক প্রার্থী মাঠে নামছেন। প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়নের জন্য তাদের লড়াই শুরু হচ্ছে। দল থেকে মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থী দেবে না বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর যারা প্রার্থী হবেন তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন দলটির সিলেটের নেতাকর্মীরা।
সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের মধ্যে থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পর দলীয় মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করা হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে বর্ধিত সভা করে সভার মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী দেয়া হবে। স্বতন্ত্রদের নিয়ে দলের অবস্থান পরবর্তীতে জানা যাবে।
সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ এবারও নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে চাইবেন। তার সঙ্গে টক্কর দিতে মাঠে নেমেছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, আওয়ামী লীগ নেতা নুরে আলম সিরাজী।
বিশ্বনাথ উপজেলায় বিএনপি'র নেতারাও প্রচারণায় থাকলেও দল নির্বাচনে অংশ না নিলে প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়া। তার বিপরীতে প্রার্থী হতে পারেন পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান। এছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলতাব হোসেন, জেলা যুবলীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী মজনু, যুক্তরাজ্য ডরসেট আওয়ামী লীগের সভাপতি চেরাগ আলী, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ-সভাপতি সামসাদুর রহমান রাহীম, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাহবুব মিয়া, চেয়ারম্যান আরশ আলী গনি, কাউন্সিলর ফজর আলী নৌকার মনোনয়নের জন্য মাঠে রয়েছেন। বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া, উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জয়নাল আহমদ মিয়া, প্রবাসী জাপা নেতা জয়নাল আবেদীন, খেলাফত মজলিস জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদের নামও শোনা যাচ্ছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন এবারো নৌকার টিকিট চাইবেন। গত বার তিনি নৌকা নিয়ে এ উপজেলা নির্বাচন করেন। তার সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুর রহমান নোমান।
দক্ষিণ সুরমার একাধিকবারের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবু জাহিদ। এবারো তিনি প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। তার সঙ্গে দলীয় ফোরামে নৌকার জন্য মনোনয়ন চাইছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আহমদ, যগ্ম সম্পাদক বদরুল ইসলাম, জেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সালেহ আহম হীরা, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ,যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা কফিল আহমদ চৌধুরী। জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক ছাত্রনেতা তাজ উদ্দিন এপলু, জামায়াত থেকে খায়রুল আফিয়ান চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা লোকমান আহমদের নাম রয়েছে আলোচনার শীর্ষে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী। তিনি এবারো নৌকার টিকিট চাইবেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুুর রহমান, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল ও ভাইস চেয়ারম্যান নাজিরা বেগম শিলা দলীয় ফোরামে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
বিয়ানীবাজারের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব মাঠে আছেন। তার সঙ্গে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন, আব্দুল বারী ও সাবেক ভিপি সাইফুল ইসলাম নীপু।
জকিগঞ্জের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান আহমদ চৌধুরী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া ভোটের মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন খালেদ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী জাবেদ, বর্তমান মেয়র আব্দুল আহাদ, স্বতন্ত্র হিসেবে মাওলানা মুফতি আবুল হাসান মাঠে রয়েছেন।
কানাইঘাটের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নগর কৃষক লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মুমিন চৌধুরী এবারো নৌকার প্রার্থী হতে মাঠে সরব রয়েছেন। তার সঙ্গে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান বাহার, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খয়ের, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন। প্রার্থী হতে মাঠে সরব রয়েছেন জেলা বিএনপি নেতা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ, জাপা নেতা শাহাবউদ্দিন।
জৈন্তাপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ মাঠে রয়েছেন। নৌকার টিকিটি চেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলী, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গফ্ফারও মাঠে। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তোফায়েল, এবিএম জাকারিয়া, বর্তমান চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম বাহার, প্রবাসী নেতা জামাল আবু নাসের, জাতীয় পার্টি নেতা ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বশির উদ্দিনের নামও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তালিকায় রয়েছে।
গোয়াইনঘাটের বর্তমান চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফারুক আহমদ নৌকার মনোনয়ন এবারো চাইবেন। তাকে পাল্লা দিতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাপ মিয়া। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হক, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফারুক আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাবউদ্দিন, সদস্য গোলাম কিবরিয়া রাসেল, জেলা পরিষদ সদস্য সুভাস দাস প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপন ও জসিম উদ্দিন দল নির্বাচনে গেলে প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন দুই বারের চেয়ারম্যান শামীম আহমদ। এছাড়া নৌকার জন্য লড়াইয়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মজির উদ্দিন, উপজেলা সভাপতি আলী আমজদ, সহ-সভাপতি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে পারেন মুক্তার হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান লাল মিয়া।