মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নে জাল দলিল সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় সরকারী এক দিঘী দখলের পায়তারা চলছে। আর পায়তারায় জড়িত থাকার সঙ্গে নাম উঠে এসেছে একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার। তার সঙ্গে রয়েছে ইউপি সদস্যও। আবার ওই নেতা আ'লীগ দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন প্রায় দুই বছর আগে। জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার তৈলকাই মৌজার ১৪৪ শতাংশ দিঘী গিলে খেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এদের একজন হচ্ছেন বালিগাঁও ইউনিয়ন আ'লীগের বহিস্কৃত সভাপতি মো. আওলাদ হোসেন হালদার। তার শরীক হচ্ছেন একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. সালাউদ্দিন শেখ। তাদের সহযোগী হিসেবে স্থানীয় তৈয়ব আলী শেখ ও শাহীন ঢালী নামে আরো দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি জোরপূর্বক দিঘী থেকে মাছ ধরে নিয়ে বিক্রি করায় দখলের পায়তারা ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এনিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, দিঘীর কচুরীপানা পরিস্কার করে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। স্থাণীয়রা জানান, মূলত: সরকারি সম্পত্তি দখলে নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে তারা প্রথমে দিঘী থেকে জেলে দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করেছে। আমরা শুনেছি এ দিঘী ভরাট করে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করবে তারা।
স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, মগাই দিঘী নামে পরিচিতি পূর্ব বালিগাঁও গ্রাম ঘেষে দিঘীর তৈলকাই মোজায় আয়াতন ১ একর ৪৪ শতাংশ। সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত দিঘীর আশপাশের লোকজন ব্যবহার ও মাছ ধরে ভোগ করে আসছিল। কিন্তু গায়ের জোরে দিঘীটি ভূমিদস্যু চক্রটি দখলের পায়তারা করায় স্থাণীয়দের মনে ক্ষোভ বিরাজ করলেও ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: বেতাগীতে ভিজিএফের চাল জব্দের তদন্ত নিয়ে ধোঁয়াশা
স্থানীয়ভাবে আরও জানা যায়, ওই দিঘীর সিএস রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন কুমুদিনি বিবি। তিনি মারা যাওয়ার পরে তার বংশ পরস্পর মালিক হলেও এদের অনেকে ভারতে চলে যাওয়ায় পরে সরকারি খাস সম্পত্তি হয়ে যায়। রেকর্ডে খাস হয়ে যাওয়ায় কুমুদিনি বিবির কিছু ওয়ারিশ এদেশে থাকলেও তারা দীঘিটা ভোগ দখল করতো না। আশে-পাশের লোকজনই দিঘিটা ভোগ দখল করতো। কিন্তু সম্প্রতি দখলকারী চক্রটি একটি খাজনার রশিদ ও নামজারী দেখাইয়া সম্পত্তিটা দখল করার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আমরা শুনেছি তারা দিঘীর জাল দলিল করে নায়েবকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদের নামে নামজারী করে নিয়েছে। আমাদের ইউনিয়নের বলই গ্রামের টগর খান নামের এক ব্যাক্তি আছে। তার মাধ্যমে জাল দলিলটা করা। শুনেছি তার কাছ হতে এই জাল দলিল সৃষ্টি করে পরে নায়েবকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে সরকারি সম্পত্তিটি তারা তাদের নামে নামজারী করে নিয়েছে। এখন তারা দখলে যাওয়ার পায়তারা করছে।
স্থাণীয় তৈলকাই গ্রামের আব্দুর রশীদ (৯০) বলেন, তৈলকার মৌজার এ দীঘিটা চারপাশের যাদের জমি আছে তারা খায়। দীঘিটা কুমুদিনি বিবি নামে একজন সনাতন ধর্মালম্বী মহিলার নামে ছিল। এখন সরকারি সম্পত্তি হয়ে যাওয়ায় এলাকার লোকজনই খায়। কুমুদিনি বিবির কিছু নাতীরা দীঘী তাদের মালিকানা দাবী করলেও তারা ভোগ দখল করতো না। বর্তমানে ইউনিয়নের প্রভাবশালী লোক জোর করে দীঘিটা দখলে নিতে চাচ্ছে।
তৈলকাই গ্রামের শাহ আলম শেখ (৬০) বলেন, এটা হচ্ছে স্থাণীয় নবারুন দাশ গুপ্তের দাদী কুমুদিনী বিবির নামে ছিল। তাদের পূর্ব পুরুষরা জমিদার ছিল। আগে থেকেই স্থানীয় গরীবরা বা পাশে যাদের জমি ছিল তারা দিঘীটি ব্যবহার করতো। এতে তাদের বাধা ছিল না। বর্তমান খাস জমি হয়েছে। সবাই এখন খাচ্ছে। এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন হালদার, তৈয়ব আলী শেখ, সালাউদ্দিন মেম্বার আরও তাদের সঙ্গের লোকজন মিলে দীঘিটা দখলের চেষ্টা করছে।
পূর্ব বালিগাঁও গ্রামের আব্দুর রহিম (৫০) বলেন, আমাদের আশেপাশের লোকজন দিঘীটা ব্যবহার করতো। মাস খানেক আগে নেতা দেলোয়ার এসে বলেন, আমি এ জমি লিজ আনছি বলে জেলে দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে দিঘীর পাশের লোকজনের সাথে দেলোয়ারের কথা কাটাকাটি হয়। এতেও জোর করে দিঘীর মাছ ধরে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বালিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সভাপতি মো. আওলাদ হোসেন হালদার বলেন, আমরা মালিক থেকে সম্পত্তি ক্রয় করেছি। কাগজপত্রে দেখার বিষয় বললে তার সামনে এলে বলবেন তিনি।
অপর অভিযুক্ত তৈয়ব আলী শেখ বলেন, আমরা স্বপন দাস গুপ্ত থেকে ক্রয় করেছি। আমাদের দলিলে ১৪২ শতাংশ ক্রয় রয়েছে। আমরা চারজন ক্রয় করেছি। সন্ধ্যায় আওলাদ হালদারের অফিসে আসলে সবার সাথে কথা হবে বলে জানান। তখন কোন দাগে কিনেছি বলা যাবে।
স্বপন দাস গুপ্ত বলেন, আমি তৈলকাই মৌজায় কোন সম্পত্তি বিক্রি করি নাই। বিক্রি করেছি পূর্ব বালিগাঁও মৌজার সম্পত্তি। পরিমাণ ৩২ শতাংশ। এর বাইরে কোন মৌজার একটুও বিক্রি করি নাই। এ বিষয়ে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রাশেদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানলাম। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।