বাজারে তিন নিত্যপণ্য- পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের
বাড়তি দরে রীতিমতো অসহায় ভোক্তা। কয়েক মাস ধরেই এসব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি। বাজার নিয়ন্ত্রণে
সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। বরং নীতিনির্ধারকদের
এক প্রকার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে দাম।
পরিস্থিতি এমন- প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ
৬৫ টাকা নির্ধারণ করলেও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। আর কেজিপ্রতি আলু ৩৬ টাকা নির্ধারণ
করলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। প্রতি পিস ডিম ফের ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে নতুন
করে ব্রয়লার মুরগির দাম ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাসাধারণ
দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আর বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।
এদিকে কয়েক মাস ধরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট
ডিম, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কারসাজি করছে। সম্প্রতি সেই চক্র অতি মুনাফা করতে প্রতি
পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৫-১৬ টাকায় নিয়ে ঠেকায়। আলুর কেজি ৫০ ও পেঁয়াজ সর্বোচ্চ
১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করে। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের দাম
১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫-৩৬ এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
তিন দফায় ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তারপরও মূল্য সহনীয় করতে পারছে না জাতীয়
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে সাত দিনে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা,
আলু ৫ টাকা ও প্রতি পিস ডিম ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ক্রেতার পণ্য তিনটি বাড়তি দামেই
কিনতে হচ্ছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের
(ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে ক্রেতারা জিম্মি। এমনকি তারা সরকারের
আদেশও মানছে না। দেখা গেছে দেশে যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, বিক্রেতারা সেটা
কার্যকর না করে ক্রেতার কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেছে। কিন্তু যেসব তদারকি সংস্থা
এই মূল্য কার্যকর করবে তারাও যেন অসাধুদের কাছে এক প্রকার অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। ফলে
ক্রেতারা কোনো প্রকার সুফল পাচ্ছে না। তাই তদারকি সংস্থার কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ বলে
মনে হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, শান্তিনগর
কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতি
পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। যা দুই দিন আগেও ১৪ টাকা ছিল। আর এক সপ্তাহ আগে ১৩ টাকায়
বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ
আগে ৮০-৮৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৪৫ টাকায়
বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার
মুরগি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. আল
আমিন বলেন, বাজারে এলেই হাহাকার লাগে। সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছেই, কমছে না। প্রতি
সপ্তাহেই কিছু না কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু সে হারে আয় নেই। ফলে পরিবার নিয়ে হিমশিম
খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে অসাধু ব্যবসায়ীরা আলু, পেঁয়াজ ও ডিম নিয়ে কারসাজি
করছে। তা এখনো অব্যাহত আছে। বাজারে তদারকি সংস্থারাও কোনো প্রতিকার করতে পারছে না।
যে কারণে ক্রেতাদের বাড়তি দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে। কিন্তু সব সময় এমন পরিস্থিতিতে সরকার
পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। এবারও সেটাই করেছে। কিন্তু কার্যকর যারা করবে তারা নির্বিকার।
কাওরানবাজারে পণ্য কিনতে আসা রিয়াজুল হক
বলেন, শুধু পেঁয়াজ, আলু ও ডিম নয়, বাজারে অন্যান্য সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ক্রেতারা
বাড়তি দামে কিনতে কিনতে নাজেহাল হয়ে পড়ছে। সরকারসংশ্লিষ্টদের সেদিকে কোনো নজর নেই।
সব নজর রাজনীতিতে। সাধারণ মানুষ কীভাবে দুই বেলা খেয়ে বেঁচে থাকবে এদিকে কোনো খেয়াল
নিচ্ছে না। পাশাপাশি বাজারে সরকারের যেসব সংস্থার তদারকি করা দায়িত্ব, তারা সেটা করছে
না। ফলে ক্রেতাদের প্রতিনিয়ত ঠকতে হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের
সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাজারে যে তদারকি করা হচ্ছে না সেই তথ্য
ঠিক নয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে সপ্তাহের প্রতিদিন সারা দেশের বাজারে তদারকি
করা হচ্ছে। অনিয়মের দায়ে আইনের আওতায় এনে জরিমানা করা হচ্ছে। তবে এবার অনিয়ম করলে জরিমানার
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
শুক্রবার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে,
বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ থাকলেও দাম আকাশছোঁয়া। সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু সবজির
দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেক্ষেত্রে বাজারে প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি
হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা। প্রতি কেজি করলা, কচুমুখি, বরবটি, টমেটো
বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। আর ঢেঁড়স, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে
দেখা গেছে। তবে তুলনামূলক কম দামের মধ্যে মুলার কেজি ৫০-৬০ টাকা আর পেঁপে বিক্রি হচ্ছে
৪০-৫০ টাকায়।
এদিকে ছুটির দিন মাছের বাজারেও যেন স্বস্তি
নেই। সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনে পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া মাছ। খুচরা বাজারে
এসব মাছ প্রতি কেজি ২২০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কেজিপ্রতি রুই, কাতলা, মৃগেল
বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪৫০ টাকায়।