মুনিয়ার মৃত্যু
নিয়ে তার বড়বোন নুসরাতের করা দ্বিতীয় মামলাটিও টিকছে না। এই মামলা তদন্ত করছে পুলিশ
ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে
তারা এই মামলা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিবেন। এই ব্যাপারে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে
কোনো কিছুই বলতে এখন পর্যন্ত রাজি হননি।
শুধু এটুকুই বলেছে,
মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে যে,
নুসরাতের প্রথম মামলার ভাগ্যই দ্বিতীয় মামলাটিও বরণ করতে যাচ্ছে। এই মামলায় সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ যে প্রমাণ সেটি অনুপস্থিত থাকায় এই মামলাটিও টিকছে না।
যেদিন মুনিয়া
মারা গেছে, সেদিন মুনিয়ার ফ্ল্যাটে যাদেরকে নুসরাত তার মামলায় অভিযুক্ত করেছেন তাদের
কেউই যাননি। শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া কোনো হত্যাকান্ড সম্ভব নয়। আর একারণেই মুনিয়ার
মৃত্যুকে হত্যাকান্ড বলে যে মামলা নুসরাত তানিয়া করেছেন সেই মামলাটিতে এই অভিযুক্তদের
সম্পৃক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই জানা গেছে।
উল্লেখ, গুলশানের
একটি ফ্ল্যাটে মুনিয়া একা থাকতেন। এপ্রিলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পরপরই
তার বড় বোন নুসরাত তানিয়া একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেন গুলশান থানায়।
গুলশান থানা দীর্ঘ তিন মাস এই মামলাটি তদন্ত করে।
আইনপ্রয়োগকারী
সংস্থার সদস্যরা পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে
সেখানে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় নি বলে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তদন্ত
প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।
কিন্তু আদালতে
এই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নুসরাত তানিয়া না রাজি দরখাস্ত দেন। নারাজি দরখাস্তটি
যখন আদালত নাকচ করে দেন তার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নুসরাত তানিয়া ৮ নাম্বার নারী ও শিশু
নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী হত্যা ও ধর্ষণের
অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তখন আদালত এই মামলার তদন্তের দ্বায়িত্ব দেন পিবিআইকে। পিবিআই
এখন এই মামলার তদন্ত করছে।
যেকোনো হত্যাকান্ড
সংঘটিত হতে গেলে অভিযুক্তদের শারীরিকভাবে সেখানে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মামলার
তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, যাদেরকে অভিযুক্ত হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তাদের
একজনও ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত
না থেকে কিভাবে হত্যাকান্ড করা সম্ভব সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তাছাড়া মুনিয়ার মৃত্যুর
সময় ধর্ষণের কোনো আলামতও পাওয়া যায় নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চত করেছে। কাজেই
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ ধারা অনুযায়ী হত্যা ও ধর্ষণ একই সাথে বা ধর্ষণের কারণে
হত্যা কোনোটাই সংঘটিত হয়নি। আর এটি সংঘটিত না হওয়ার কারণে এই মামলায় যাদেরকে অভিযুক্ত
করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হবে না বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
তবে পিবিআই এই বিষয়ে আরো কিছু জিনিস তদন্ত করছে বলে একাধিক দ্বায়িত্বশীল সূত্রে জানা
গেছে।
বিশেষ করে, মুনিয়ার হাতে যে আঘাতের চিহ্ন আছে সেটি কেন এবং মুনিয়ার বাসায় সর্বশেষ তিনজন কারা গিয়েছিল তাদের সনাক্ত করা এবং মুনিয়ার সাথে অন্য কার কি ধরনের সম্পর্ক ছিল সেই সম্পর্কের কারণে মুনিয়া মৃত্যুবরণ করেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা, এসমস্ত তদন্তগুলো শেষ হলেই আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।