দেশে ডলারের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কয়েক দিন ধরে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে দাম ওঠানামা করছে। কিন্তু অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন
রেকর্ড ১০৩ টাকা দরে ডলার বিনিময় হচ্ছে। খোলা বাজারে ডলারের দাম নিয়ে এ তুঘলকি কাণ্ড
নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সামনে দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকে
কেউ কেউ ডলার কিনেও রাখছেন। আর মানি এক্সচেঞ্জ পয়েন্টগুলোতে যে যার মত দামে ডলার ক্রয়
করছেন। তবে সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা দামে ডলার বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও ব্যাংকগুলোও
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দামে ক্রয় করলেও তার চেয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দরে বিক্রি
করছে। আর দাম নিয়ন্ত্রণে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কোনো হাত নেই বলে জানা গেছে। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল ও মালিবাগ এলাকায়
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতে ডলার খুচরা ক্রয়-বিক্রি করছে। তারা
এক ডলার ৯৯ থেকে ১০০ টাকা দামে ক্রয় করে ১০১ থেকে ১০৩ টাকা দরে বিক্রি করছে। আর কয়েকটি
ব্যাংক ১ ডলার ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা দরে বিক্রি করছে।
পাইওনিয়ার এক্সচেঞ্জ হাউসে ডলারের দাম
জানতে চাইলে দায়িত্বরত এক কর্মী বলেন, ‘প্রতি ডলার ১০৩
টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমরা এক ডলার কিনছি ৯৯ থেকে ১০০ টাকা দরে। এক দিন পরে আরও
বাড়তে পারে। কারণ, বাজারে ডলার চাহিদানুযায়ী সরবরাহ একেবারে কম।’
দিলকুশায় সোবহান নামে এক ব্যক্তি বলেন,
‘আগামী মাসে ইউএস
যাব কিন্তু ডলারের দাম দিন দিন বাড়ছে। তাই কিছু ডলার কিনতে এলাম। কিন্তু কেউ ১০৩ টাকার
নিচে ডলার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী
পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলার নিয়ে অস্থিরতা
আছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে গভীর পর্যবেক্ষণ রেখেছে। চাহিদা ও মজুতে বিষয় মাথায়
রেখে সম্প্রতি পাঁচবার ডলারের দাম বৃদ্ধি করেছে। তবু ডলারের মজুত কমছে, বিশেষ করে আমদানি
বৃদ্ধিতে ডলার সংকট বেশি হয়েছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে ঘাটতি কমে আসবে। তখন পুনরায়
ডলারের দাম নির্ধারণ করা যেতে পারে। খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটের দাম কত হবে তা বাংলাদেশ
ব্যাংক ঠিক করে দেয় না। সেখানে দাম বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো
হাত নেই। তবে এ কথা সত্য যে, অনেক ব্যাংক আন্ত-ব্যাংক ডলারের দামের তুলনায় বেশি দামে
ডলার বিক্রি করছে। এটা খুব বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে ব্যাংকগুলো সাধারণত খোলা বাজারের
তুলনায় তেমন একটা বেশি ডলার কেনা-বেচা করে না। আর খোলা বাজারে যে পরিমাণ ডলার ক্রয়-বিক্রয়
তা আমলে নেওয়ার মতো নয়। কারণ, পরিমাণটা খুব একটা বেশি নয়।’
বাংলাদেশ মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ
কে এম ইসমাইল হক বলেন, ‘ডলার নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা কম দামে ডলার সংগ্রহ করতে পারি না। যেন ডলারের হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ৯৯
থেকে ১০০ টাকা দরে ডলার কিনে তা ১০২ টাকার কমে বেচতে পারি না। ডলারের চলমান নিরসনে
সরকারের বিশেষ নজরদারি দরকার।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার ডলারের
দর বেঁধে দিয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু তাদের বেঁধে দেওয়া এ রেট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো
মানছে না। এখন ব্যাংকে এলসি করতে গেলে ডলারের বিপরীতে নেওয়া হচ্ছে ৯৩ থেকে ৯৪ টাকা।
আবার কোনো কোনো ব্যাংক ৯৬-৯৭ টাকাও নিচ্ছে। আর বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের
জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০
পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার
সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের ৩ আগস্ট থেকে দুই-এক
পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মত ৮৫ টাকা ছাড়ায় ডলারের দাম। চলতি
বছরের ৯ জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকা হয়। গত ২৩ মার্চ আন্তব্যাংক লেনদেনে ৮৬ টাকা ২০
পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা, ১০ মে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা এবং গত সোমবার ৮৭
টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায় ডলারের মূল্য। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
এদিকে আমদানির চাপে ধারাবাহিকভাবে ডলার
বিক্রি করায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের (রিজার্ভ) ওপর চাপ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ
তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ আগের সব রেকর্ড ভেঙে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের
মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। দেশের ওই রিজার্ভ ১১ মে ৪১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১৯৩
কোটিতে নেমে এসেছে।