যুবলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় ঠাকুরগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক।
বুধবার (১০ মে) ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মামুনুর রশিদের আদালতে মামলা করেন তিনি।
মামলার আসামীরা হলেন- ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন, এস.আই খোকা চন্দ্র রায়, এ.এস.আই মো: মোতালেব, এস.আই মো: হাফিজ, অপারেশন ইনচার্জ মো: লতিফ।
দায়রা ও জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়রা ও জজ আদালতে আসাদুজ্জামান পুলক নামের এক ব্যক্তি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি মামলার বাদীকে চিকিৎসার জন্য সিভিল সার্জনকে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন >> লোহাগড়ায় দুই বছর ধরে ভাঙ্গা সেতুতে ঝুকি নিয়ে চলছে পারাপার
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওসি কামাল হোসেন ঠাকুরগাঁও সদর থানায় যোগদানের পর থেকেই এলাকায় ত্রাস এর রাজত্ব কায়েম করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। ঘুষ-বাণিজ্য বালু মহলের লিজ গৃহীতারদের কাছ থেকে মাসিক মাসহারা আদায়ের জন্য হুমকি প্রদর্শন করতেন। অপরাধ ছাড়াই সাধারণ মানুষকে থানায় ধরে নিয়ে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে ছেড়ে দেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ মূলক কমর্কাণ্ডের সাথে তিনি জড়িত। কিন্তু যুবলীগ নেতা পুলক মাসহারা দিতে রাজী না হওয়ায় তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওসি কামাল হোসেন।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঠাকুরগাঁও সাধারণ পাঠাগার চত্বরে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় দর্শনার্থী হিসেবে যান জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকি। এ সময় ওসি মো. কামাল হোসেন, এএসআই খোকা চন্দ্র রায়, মো. মোতালেব, মো. হাফিজ ও অপারেশন ইনচার্জ মো. লতিফ অন্যায়ভাবে তাকে আটক করে মারধর করতে থাকে। পরে আসাদুজ্জামান পুলক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলে ওসি কামাল হোসেনসহ অন্য আসামিরা তাকে মারধর করে পুলিশের পিকআপে তুলে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় ওসি আসাদুজ্জামান পুলকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, অন্যথায় তাকে ক্রসফায়ারে দেবে বলে হুমকি দেন। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিতে পারায় আসাদুজ্জামান পুলককে থানা হেফাজতে রেখে ওসিসহ অন্য আসামিরা নির্মমভাবে মারধর করতে থাকে। নির্যাতনের একপর্যায়ে ওসির লাঠির আঘাতে আসাদুজ্জামান পুলকের বাম হাতের হাড় ভেঙে যায়।
পরে রবিবার (৩০ এপ্রিল) আসাদুজ্জামান পুলককে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত বুধবার (২ মে) আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হয়ে আসাদুজ্জামান পুলক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আট দিন ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ আদালতে মামলাটির আবেদন করেন যুবলীগের এ নেতা।
এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক বলেন, ওসিসহ বাকি পুলিশ কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে যে অন্যায় করেছে আর কেউ যেন এরকম অন্যায়ের শিকার না হন। আদালতের আদেশে আমি সন্তুষ্ট।
এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।