
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছেন কৃষকরা। এলাকার ফসলি মাঠগুলোর দিকে তাকালে চোখে পড়ে শুধু পেঁয়াজগাছের সবুজ ডাঁটা ও কদম ফুলের আকৃতির মতো সবুজ সাদা শুভ্র ফুল আর ফুল। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে এবার চার উপজেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯৮ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮০৬ হেক্টর জমিতে।
সকাল হলেই এসব বীজ ক্ষেতের পরিচর্যায় কেউ সেচ, কেউ আবার পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে, আবার কেউবা হাতের আলত ছোঁয়ায় পরাগায়ন করতে ব্যস্ততম সময় পার করছেন। এলাকার অনেক নারী-পুরুষ এসব কাজ করছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌমাছি না থাকায় বীজ উৎপাদনে মানুষের হাতের ছোঁয়ায় করছেন পরাগায়ন। এতে স্থানীয়দের যেমন আয়ের সুযোগ হয়েছে, তেমনি এই বীজ দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে আশা করছেন উপজেলার উদ্যোক্তারা।
পেঁয়াজের বীজ ক্ষেতের কৃষক অনুকুল রায় জানান, আগের মতো আর মৌমাছি দেখা যায় না। দিন দিন বিষ দেওয়ায় মৌমাছি কমে গেছে। তারা প্রায় ২৫ জন সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করেন। দিনমজুর মবারক হোসেন বলেন, সকাল ৯টার দিক আসি বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে হাজিরা পাই ৪৫০ টাকা। আমার কাজ পানি দেওয়া। পেঁয়াজের পরাগায়ন করা। আর মাচা দিয়ে পেঁয়াজ ফুলগুলা যাতে দাঁড়ায় থাকে, সে কাজ করি।
চাড়োল ইউনিয়নের কৃষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি এইবার ১৬ একর জমিতে পেঁয়াজ করছি বীজ উৎপাদনের জন্য। এর আগেরবারও আমি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করেছিলাম, তখন ভালো লাভ হয়েছিল। আমার দেখাদেখি এইবার অনেক কৃষক পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করছের। এবার দেশে পেঁয়াজ চাষিদের কাছে ভালো বীজ পৌঁছানোর উদ্দেশ্যেই বেশি করে বীজ উৎপাদন করছি, যাতে করে চাষিরা ভালো বীজ পান ও বেশি করে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারেন। আমার ১৬ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পেঁয়াজের ফুল ও পরাগায়ন ভালো হয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে ১৬ একর জমিতে ৪০-৪৫ লাখ টাকার বীজ বিক্রয় হবে বলে আশা করছি।
উপজেলার রায়পুর গ্রামের কৃষক নাজমুল হোসেন বলেন, আমি গতবার ৪ একর জমিতে পেঁয়াজবীজ উৎপাদন করেছিলাম। লাভ হয়েছিল ভালোই। তাই এবার জমি বাড়িয়ে ৮ একরে বীজ উৎপাদন করব। পেঁয়াজ রোপণের মাত্র ৪ মাসের মধ্যে গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায়। আর গাছে ফুল আসার পর থেকে টানা ৩০ দিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হাতের ছোঁয়ায় পরাগায়ন করতে হয়। তাহলে ভালো বীজ ও ফলন পাওয়া যায়। এই আবহাওয়া যদি থাকে, তাহলে এইবারও লাভবান হব।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জেলায় ব্যাপক পরিসরে পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হচ্ছে। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে এবার চার উপজেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭৯৮ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮০৬ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে এ পর্যন্ত ১৬০ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। এ ছাড়াও ১১৩ হেক্টর জমিতে শুধু পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৯০০ কেজি করে মোট ১০২ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতিকেজি বীজের দাম ২ হাজার করে ধরা হলে শুধু ঠাকুরগাঁও জেলায় ২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকার পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হবে। এভাবে পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।