আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনে। আবার সেই সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্কও। এখানে মূলত আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। যদিও সব আসনে জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল অংশ নিয়েছে, তবে মূল লড়াই হবে নৌকা, ট্রাক, লাঙল-হাতুড় ও ঈগল প্রতীকে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সমর্থকদের মধ্যে বাড়ছে উৎকণ্ঠা।
তবে সকলের চাওয়া, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই প্রভাবমুক্ত, সংঘাত ও সহিংসবিহীন নির্বাচন হোক। উত্তেজনাকর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন হয় শান্তিপূর্ণ, এমনটাই চাওয়া ভোটারদের। পাশাপাশি সবাই যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে তাদের ভোট দিতে পারে, তাই নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সবাই ও আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তারা।
এদিকে একটি পক্ষ-প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়ি, গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মৌন বিরোধ ও বিভেদের সৃষ্টি হয়েছে। তাই সব আসনেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও সংসদীয় আসন তিনটি। এই তিনটি আসনের মোট ভোটার ১১,৪৬,৯৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৩, নারী ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৭ এবং হিজড়া ভোটার ৪ জন। এ ছাড়া এবার ভোটকেন্দ্র বেড়েছে বলে জানা গেছে নির্বাচন অফিস সূত্রে।
ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) : এই আসনের ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬০৯ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪০ হাজার ৯৮৩ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬২২ জন। এবং হিজড়া ভোটার ৪ জন।
১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম, ১৯৯৬ আবারো তিনি জয়ী হন, ২০০১ সালে রমেশ চন্দ্র সেনকে পরাজিত করে জয়ী হন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী, ২০০৮ সালে মির্জা ফখরুলকে পরাজিত করে জয়ী হন রমেশ চন্দ্র সেন, ২০১৪ তে ওয়ার্কার্স পার্টির ইমরান হোসেন চৌধুরী পরাজিত করে রমেশ চন্দ্র সেন জয়ী জন, ২০১৮ সালে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীকে পরাজিত করে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রমেশ চন্দ্র সেন। এবারও তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এ আসনে জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজী (লাঙল), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা যুব মহিলালীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা আখতার (ঈগল), ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) রফিকুল ইসলাম ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি-এনপিপি (আম) প্রতীকে রাজিউল ইসলাম নির্বাচন করছেন। এখানে মূলত লড়াই হবে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের মধ্যে। এলাকায় উন্নয়ন করার ফলে রমেশ চন্দ্র সেন এবারও জয়লাভ করার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার আংশিক) : ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম। এবার আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে তাঁর ছেলে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজনকে। এ আসনের নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুন নাহার বেগম (লাঙল), বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) প্রার্থী রিম্পা আক্তার, স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী আসলাম জুয়েল (ট্রাক), এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের (সোফা)। এখানে মূলত লড়াই হবে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকে। তবে দ্বিমুখী লড়াই হলেও ক্লিন ইমেজের হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী আসলাম জুয়েল জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৩জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩হাজার ৬৬৮ জন, আর নারী ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩০৫টি।
তবে এ আসনের ১৬টি ইউনিয়নের ৪৮টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: মাহবুবুর রহমানের বরাবরে গতকাল একটি তালিকা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী আসলাম জুয়েল। এসময় তিনি রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও নৌকার পক্ষের ১৪জন প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবং তাদের পরিবর্তনের জন্যও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দেন এই প্রার্থী।
ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) : জেলার পীরগঞ্জ- রানীশংকৈল দুটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নয় নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫ নম্বর আসন। এই নির্বাচনী এলাকা ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬০ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭০ জন এবং এবং নারী ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯০ জন।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তাকে এবারেও দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ী) গোপাল চন্দ্র রায়, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) খলিলুর রহমানসরকার, স্বতন্ত্র (ঈগল) আশা মনি। তবে লড়াই হবে লাঙল ও হাতুড়ি প্রতীকের মধ্যে।
তবে সব আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর। ফলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কার পক্ষে নির্বাচন করবেন, সেই ভাবনায় রয়েছেন তারা এবং নির্বাচন-পরবর্তী কী হবে, এমন হিসাব-নিকাশ কষছেন তারা। তাই কেউ কেউ পছন্দের প্রার্থীর হয়ে প্রকাশ্যে নির্বাচনি গণসংযোগে অংশ নিলেও, অনেকে আছেন অদৃশ্য হয়ে।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: মাহবুবুর রহমান জানান, ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে এবং যে কোনো অনিয়ম ঠেঁকাতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃখলা বাহিনী মাঠে কাজ করছে। কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে যৌথবাহিনী থাকবে। তাদের সঙ্গে সাদা পোশাকসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য কর্মকর্তারা থাকবেন।