জায়গা সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের পুরোনো ভবনে সম্প্রসারণ করা হয়েছে শিশু ওয়ার্ড। কিন্তু সেই ভবনের বিম ও কলামের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের ধস ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে গাছের খুঁটির। এ অবস্থা ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালটি পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সরিয়ে আনা হয়। সে সময় হাসপাতালটি ৫০ শয্যার ছিল।
১৯৯৭ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ২০১৪ সালে হাসপাতাল ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল চত্বরে নতুন একটি ১০ তলা ভবন বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৭ তলা পর্যন্ত ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এর প্রায় ২০ মাস পর ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর নতুন ভবনটি বুঝে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সেই ভবনে শুরু হয় হাসপাতালের কার্যক্রম। কিন্তু নতুন ভবন পেলেও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি থেকে যায় পুরোনো ভবনেই।
এদিকে শয্যাসংকটের কারণে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পুরোনো ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে শিশু ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হয়। এখন ওয়ার্ডের সেই কক্ষের বিম, কলামে ফাটল দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে গাছের খুঁটি বসিয়ে ছাদ ও বিম ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অনেক রোগী। যেসব শিশুর অভিভাবকেরা ওয়ার্ডে জায়গা পাননি, তাঁরা বারান্দায় বিছানা পেতে শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। সেই ওয়ার্ডের ছাদের কোনো কোনো স্থানে বিম ও কলামে ফাটল ধরেছে। খসে পড়েছে পলেস্তারা। বারান্দায় গাছের খুঁটির ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সেখানে ঝুলিয়ে দিয়েছে ফেস্টুন। আর তাতে লেখা রয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, এখানে রোগীর অবস্থান করা যাবে না।
জ্বরে আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাচ্ছেন আকচা ইউনিয়নের বামনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। সকাল সাড়ে ৮দিকে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। সে সময় বিমের নিচে ঠেস দেওয়া খুঁটি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা নিতে এসে না আবার হতাহত হয়ে যাই! সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এখানে রোগী রাখা ঠিক নয়।
হাসপাতালের শিশুরোগের চিকিৎসক শাহিন সাজ্জাদ বলেন, শিশু ওয়ার্ডটি ৪৫ শয্যার হলেও এখানে তিন থেকে চার গুণ রোগী ভর্তি থাকে। প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে আবার কম করে হলেও দুজন স্বজন থাকেন। প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ খুঁটির আশপাশ দিয়ে যাতায়াত করেন। হাসপাতালের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সবাই ঝুঁকিতে থাকেন।
এমন পরিস্থিতিতে ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী কি না, তা পরীক্ষা করতে গণপূর্ত বিভাগে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গণপূর্তের বিভাগের একটি দল হাসপাতাল ভবন পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। আর ভবনটি সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বিমের নিচে খুঁটি বসিয়ে দেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ফিরোজ জামান বলেন, ‘পুরোনো ভবন হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে গণপূর্ত বিভাগ বিমের নিচে খুঁটি বসিয়ে দিয়েছে। সেই এলাকায় রোগীরা যাতে অবস্থান না করেন, আমরা সেটা দেখভাল করছি।’
এ বিষয়ে জানতে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে ওই বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম কে এম নুরুল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালের বিষয়টি শুনেছি। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ। সেটা সংস্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংস্কারের কাজ শুরুর আগে ধস ও ফাটল ঠেকাতে খুঁটি দিয়ে রাখা হয়েছে। এখন সেখানে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনটি সংস্কার করা হবে।