কাঁচা কিংবা পাকা, তেঁতুল নাম শুনলে প্রায় সব বয়সীদেরই জিভে জল আসে। টকজাতীয় এ ফলটিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা কিনা ক্যানসার, হৃদরোগ ছাড়াও ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। আবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও তেঁতুল অনন্য।
যুগের পর যুগ ধরে রূপচর্চা ছাড়াও চিকিৎসার ক্ষেত্রজুড়ে আছে টকজাতীয় এই ফল। তবে উপকারী গুণের বাইরেও লোভনীয় এই ফলটি নিয়ে নানা নেতিবাচক কথাও শোনা যায়। তেঁতুল খেলে বুদ্ধি কমে যায়, রক্ত পানি হয়ে যায় কিংবা পিরিয়ডের সময় ফলটি খেলে পেটব্যথা ছাড়াও অতিরিক্ত রক্তস্রাব হয়- বয়োজ্যেষ্ঠদের মুখে এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। তাহলে কি আসলেই তেঁতুল এমন ক্ষতিকর?
নানা গুণসমৃদ্ধ তেঁতুলে আছে ভিটামিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান। এক কাপ বা ১২০ গ্রাম তেঁতুলে ৪৩ শতাংশ ভিটামিন বি-১, ১৫ শতাংশ ভিটামিন বি-৩ ও ১৪ শতাংশ ভিটামিন বি-২ পাওয়া যায়। পাশাপাশি এই পরিমাণ তেঁতুলে ক্যালসিয়াম থাকে ৭ শতাংশ, আয়রন ১৯ শতাংশ, ম্যাগনেশিয়াম ২৬ শতাংশ ও ১৬ শতাংশ পটাশিয়াম থাকে। এছাড়াও ভিটামিন ‘সি’, ‘কে’ ও ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ১২০ গ্রাম তেঁতুলে থাকে ২৮৭ ক্যালরি- এমনটাই জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন।
টকজাতীয় লোভনীয় এই ফলটির ব্যবহার নিয়ে ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় তেঁতুল অনন্য ভূমিকা রাখে। ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে ফলটির পাতা ছাড়াও গাছের বাকল ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়। আবার কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও ডায়রিয়া, জ্বর ও ম্যালেরিয়ার মতো চিকিৎসায়ও তেঁতুলের পানীয় ব্যবহার হতো।
ওয়েবসাইটটিতে প্রকাশিত ওই নিবন্ধটি লেখেন তুরস্কের মারমারা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ইন্টার্ন চিকিৎসক পিনার কুরু। যেখানে তেঁতুলকে ভিটামিন ছাড়াও ফাইটোকেমিক্যাল, এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের (যা মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণী বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় তৈরি করতে পারে না) সহজলভ্য ও স্বস্তা একটি ফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তেঁতুলের এমন উপকারী সব গুণের কথা উঠে এসেছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য সরবরাহকারী আমেরিকান করপোরেশন ওয়েব এমডিতে। এতে বলা হয়েছে, রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর তেঁতুলের ব্যবহার নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখা টকজাতীয় এই ফলটি প্রাচীনকাল থেকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে মানুষ।
ওয়েব এমডিতে লোভনীয় ফল তেঁতুলের উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তেঁতুল থেকে ট্রিপটোফান ছাড়াও প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। ফলটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদর্শ প্রোটিনের মান পূরণ করে। পাশাপাশি তেঁতুল থেকে পাওয়া প্রোটিন অ্যামিনো অ্যাসিড, টিস্যু তৈরি ও মেরামতের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে।
তেঁতুলের এমন উপকারী নানা দিকের কথা পাওয়া যায় বিবিসি গুড ফুডের ওয়েবসাইটেও। যেখানে বলা হয়েছে, তেঁতুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। পাশাপাশি টকজাতীয় এই ফলটি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ও কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। সেই সঙ্গে লিভারের সুরক্ষামূলক কাজের পাশাপাশি তেঁতুল প্রাকৃতিক অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বা জীবাণু নিরোধক হিসেবেও কাজ করে।
তবে ওয়েবসাইটটির প্রশ্নোত্তর অংশে তেঁতুল সবার জন্য নিরাপদ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, উপকারী ফলটি কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সক্ষম তেঁতুল ডায়াবেটিস থাকলে সতর্কতার সঙ্গে খাওয়া উচিত।
অন্যদিকে, দেশের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটে তেঁতুল রক্ত পানি করে বা বুদ্ধি কমায় এমন ধারণাকে কুসংস্কার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, লোভনীয় এই ফলটি রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে, কাঁচা তেঁতুল খেতে টক, পাকা ফল টক–মিষ্টির এক ভিন্ন স্বাদ। এটি খাবারে স্বাদ বাড়ায়। তাই মাংসের রোস্ট ছাড়াও পোলাও, খিচুড়িতে এর ব্যবহার হয়। এছাড়াও তেঁতুলের টক, ভর্তা, ডাল অনেকেরই প্রিয়। আবার তেঁতুল দিয়ে তৈরি করা যায় আচার, সস, জ্যাম, চাটনিসহ হরেক রকমের খাবার। এমনকি তেঁতুলের বীজ নকশি শিল্পেও ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে, টকজাতীয় এই ফলটির পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে ইউনিসেফ বলছে, ঋতুকালে রক্তস্রাবের সঙ্গে খাবারের কোনো সম্পর্ক নেই। পিরিয়ডের সময় খাওয়া যাবে না এমন কিছু নেই।