সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি:
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ঘনঘন অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করছে সাভার তিতাস অফিস। ঘুরেফিরে একই এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করছে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনভাবেই যেন লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না এ সকল অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের।
বুধবার ৩০ মার্চ সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কাটগড়া বেঙ্গল মোড় থেকে শুরু করে নিক্কণ হাউজিং মাঠ পর্যন্ত, এক থেকে দেড় কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে তিতাস। তিতাসের সাভার জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোঃ সায়েম এর নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
এর আগে একই জায়গায় দুই থেকে তিনবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা করে তিতাস। কথিত আছে সকালে কেটে গেলে রাতেই পুনরায় অবৈধ সংযোগ চালু হচ্ছে এ সকল এলাকায়। শতশত লাইন ও মাইলের পর মাইল অবৈধ গ্যাস লাইনের পাইপসহ গ্যাসের চুল্লি জব্দ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে অবৈধ সংযোগ দাতা মূল হোতারা। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারিরা। লাইনে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের প্রেসার থাকায়, অতিরিক্ত অবৈধ লাইন সংযোগের ফলে বৈধ সংযোগকারীরা পাচ্ছে না চাহিদা মোতাবেক গ্যাস।
আশুলিয়া উন্নয়ন ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার বাকির হোসেন মৃধা বলেন, তিতাস কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই অপরাধীদেরকে ধরছেন না বলে আমি মনে করি। তাদের সদিচ্ছা থাকলে এটা তাদের কাছে কোন বিষয় না। এর কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন রাষ্ট্রীয় স্বার্থ থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছে তাই প্রতিয়মান হচ্ছে আমাদের কাছে। তিনি আরো বলেন আশুলিয়া উন্নয়ন ফোরাম থেকে খুব দ্রুতই একটি মানববন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে যেখানে এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে।
অভিযান পরিচালনাকৃত এলাকার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়টি একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিছু অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ এলাকা থেকে বারবার টাকা উঠিয়ে অবৈধ লাইন সংযোগ দিচ্ছে। যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে নিজেদের পকেট ভরছে। আমরা না চাইলেও কিছু কিছু সময় বাধ্য হয়ে তাদেরকে টাকা দিতে হয়। আর বারবার লাইন না কেটে আমাদের লাইনগুলো বৈধ করে দিক। না হয় যারা আমাদের কাছ থেকে বারবার টাকা নিচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুক।
এ ব্যাপারে সাভার তিতাস অফিসের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মান্নান বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের চিহ্নিত করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। আজকে আমরা যেখানে অভিযান চালিয়েছি এর আগে এখানে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন আজকের অভিযানে কাউকে জরিমানা অথবা আটক করা হয়নি শুধুমাত্র লাইনের পাইপ জব্দ করা হয়েছে।
এবিষয় ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোঃ সায়েম বলেন, আশুলিয়ার কাঠগড়ার বেঙ্গলমোড় ও নিক্কণ হাউজিং মাঠ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৫০০ বাসাবাড়ির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কুচক্রি মহল আমাদের মূল সরবরাহ লাইন থেকে নিম্নমানের এবং ঝুঁকিপূর্ণ পাইপ ব্যবহার করে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে অবৈধ সংযোগ দিয়েছে। অভিযানে ওইসব লাইন বিচ্ছিন্নসহ পাইপলাইন তুলে ফেলেছি। যারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, তিতাসের সাভার জোনাল বিপণন অফিসের উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ আনিসুজ্জামান রুবেল ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মান্নানসহ তিতাসের কারিগরী টিমের সদস্যগণ।
ঘটনাস্থলে যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন ছিল।