কৃষ্ণসাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসার ঘোষণায় আবারো বিশ্ববাজারে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তের কারণে খাদ্যশস্যের সরবরাহ সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে। ফলে আবারো আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে নিম্ন আয়ের ও খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো। সরবরাহ সংকটে এসব দেশে আগামী বছরের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে অতীতের যেকোনো সময়ের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার অব্যাহত বাড়াতে থাকলে বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। কিন্তু রাশিয়ার খাদ্যশস্য রফতানি চুক্তি থেকে সরে আসার কারণে বাজার পরিস্থিতি আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। অন্যদিকে শীর্ষ খাদ্যশস্য রফতানিকারক দেশ ইউক্রেনের রফতানি আবারো তলানিতে নামার সুযোগ নিতে পারে অন্যান্য শস্যসমৃদ্ধ দেশ। এসব দেশ শস্যের দাম ব্যাপক বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে ইউক্রেনের প্রধান ক্রেতারা বিকল্প উৎস থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে শস্য কিনতে বাধ্য হবে।
তথ্য বলছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত ইউক্রেন প্রতি মাসে গড়ে ৬০ লাখ টন খাদ্যশস্য রফতানি করত। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া দেশটিতে হামলা চালালে কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর দিয়ে রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। দেশটি তখন থেকে জুলাই পর্যন্ত শুধু স্থল, রেল ও নদীপথে স্বল্প পরিমাণ শস্য রফতানি করতে সক্ষম হয়। তবে জুলাইয়ের শেষ দিকে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দেশ দুটির মধ্যে খাদ্যশস্য রফতানি নিয়ে একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে আবারো কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য ও তেলবীজ রফতানি শুরু হয়। সম্প্রতি দেশটি ব্যাপক লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সেভাস্তোপলে ড্রোন হামলার পর শনিবার ইউক্রেনের সঙ্গে শস্য রফতানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ খবর জানিয়েছে সিএনএন। ওই হামলার জন্য মস্কো কিয়েভকে দায়ী করেছে। তারা বলছে, শস্য চুক্তিতে ব্যবহূত জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। হামলায় একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও দাবি তাদের। অবশ্য হামলার দায় স্বীকার করেনি ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট অফিসের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেছেন, এ হামলার দাবি কাল্পনিক। মস্কো ‘ব্ল্যাকমেইল’ করার জন্য এমন দাবি করছে।
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য তারা ইউক্রেনের সঙ্গে শস্য রফতানি চুক্তি স্থগিত করবে। চুক্তি অনুযায়ী, মানবিক কারণে যেসব জাহাজ শস্য পরিবহন করছে, তাতে হামলা করায় রাশিয়া এখন আর এ চুক্তির প্রতি আস্থাশীল নয়। ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর এ হামলার সঙ্গে তারা ব্রিটিশ সেনাদের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ তুলেছে। তবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগকে ‘মহাকাব্যিক মিথ্যাচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।