যুক্তরাজ্যে
যে মাত্রায় তাপপ্রবাহ চলছে, সে ধরনের চরম তাপমাত্রা পুরুষের তুলনায় নারীর জন্য অনেক
বেশি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন দেশের তাপমাত্রাজনিত পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে
বিশেষজ্ঞেরা এমন মত দিয়েছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
সম্প্রতি প্রচণ্ড
দাবদাহের কারণে বেসামাল অবস্থায় আছে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। স্পেন, পর্তুগালসহ
কয়েকটি দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত
রেকর্ড করা হয়েছে।
চরম তাপপ্রবাহের
কারণে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সরকার বিভিন্ন রাজ্যে দেওয়া সতর্কবার্তায় বলেছে—নারী, শিশুসহ ৭৫ বছরের বেশি বয়সিরা
এবং শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিরা উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন। অবশ্য নারীদের কেন
এ তালিকায় রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে ওই বার্তায় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
নেদারল্যান্ডসে
করা একটি গবেষণা প্রতিবেদন বলছে—তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পুরুষের তুলনায় নারী বেশি উচ্চঝুঁকিতে থাকেন।
বিভিন্ন তাপপ্রবাহ পরবর্তী সময়ে মারা যাওয়া মানুষের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওই গবেষণা
করা হয়। যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি এ গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
ফ্রান্সে ২০০৩
সালের তাপপ্রবাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন—একই বয়সিদের মধ্যে তুলনা করলেও
পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু ১৫ শতাংশ বেশি।
ডাচ ও জার্মান
গবেষকদের করা অন্য এক গবেষণায় দেখা যায়—গরমের কারণে নারী ও পুরুষভেদে ঝুঁকির মাত্রায় ভিন্নতা রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের
২৩ বছরের তাপমাত্রাসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এমন অভিমত দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে
বলা হয়—পুরুষের তুলনায় নারীর গরমজনিত মৃত্যুহার বেশি। বিশেষ করে, চরম গরমের
মধ্যে বসবাসকারী বয়স্ক ব্যক্তিদের (৮০ বছর) মধ্যে এ প্রবণতা বেশি।
আমস্টারডামের
ভি ইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যাবিষয়ক অধ্যাপক হেইন দানেন বলেন, তাঁর গবেষক দলটি ধারণা
করছে—নারীর
শরীরে ঘাম কম হওয়ার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
হেইন দানেন
আরও বলেন, তরুণদের তুলনায় বয়স্ক ব্যক্তিদের ঘামের পরিমাণ অর্ধেক। আর, পুরুষের তুলনায়
নারী অর্ধেক ঘামেন। অর্থাৎ, বয়স্ক নারীদের মধ্যে ঘেমে শরীরের তাপমাত্রা ছেড়ে দেওয়ার
হার সর্বনিম্ন।
গবেষক দল আরও
বলেছে—গরমের
কারণে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমে (হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, রক্তনালী) যে চাপ তৈরি হয়, তার
সঙ্গেও নারীর গরমজনিত ঝুঁকি বেশি হওয়ার সংযোগ থাকতে পারে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে
বলা হয়—কার্ডিওভাস্কুলারজনিত রোগে (হৃদরোগ, স্ট্রোক) নারীর আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা
বেশি। আর, সে কারণে গরমের মধ্যে তাঁরা উচ্চ মৃত্যুঝুঁকিতে থাকতে পারেন।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের
উষ্ণতা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক অধ্যাপক ওলি জায় বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে—অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্থ্যবান নারী
সর্বোচ্চ মাত্রায় ঘামলেও তা সমবয়সি স্বাস্থ্যবান পুরুষের তুলনায় কম।
ওলি জায় আরও
বলেন, ‘ঠিক এ কারণেই তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যু বা অসুস্থতার তালিকায় নারীর সংখ্যা
বেশি কি না, তা আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। লিঙ্গভেদে আলাদা প্রভাব পড়ার এ প্রবণতার
সঙ্গে বয়সের সংযোগ আছে কি না, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
পোর্টসমাউথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মাইক টিপটন ফলিত শরীরবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মাইক টিপটন মনে করেন,
তাপপ্রবাহের কারণে নারী বেশি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন, কারণ—ডিম্বস্ফুটন পরবর্তী সময়ে তাঁদের
শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।