রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতিজুড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। রেকর্ড উচ্চতায় মূল্যস্ফীতির চাপ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়াচ্ছে ফেডারেল রিজার্ভ। বাড়ছে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকিও। এমন আশঙ্কায় ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন ভোক্তারা। উচ্চব্যয়ের কারণে চাপে রয়েছেন উৎপাদকরাও। সব মিলিয়ে নিম্নমুখী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক কার্যক্রম। এ নিয়ে টানা চতুর্থ মাসের মতো অক্টোবরে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির শিল্পোৎপাদন ও পরিষেবা কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে।
চলতি মাসে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সের (পিএমআই) সমীক্ষায় শিল্পোৎপাদন ও পরিষেবা উভয় খাতের প্রতিষ্ঠান দুর্বল চাহিদার কথা জানিয়েছে। রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের যুক্তরাষ্ট্রের কম্পোজিট পিএমআই চলতি মাসে ৪৭ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমেছে। কম্পোজিট পিএমআইয়ে উৎপাদন ও পরিষেবা খাত অন্তর্ভুক্ত থাকে। গত মাসেও এ সূচক ৪৯ দশমিক ৫ পয়েন্টে ছিল। পিএমআই ৫০ পয়েন্টের নিচে সংকোচন এবং এর উপরে প্রসারিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে। এর আগে ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে কভিডের প্রথম ধাক্কায় কম্পোজিট পিএমআইয়ে এমন সংকোচন দেখা গিয়েছিল। কোভিড মহামারী বাদ দিলে এ পরিস্থিতি ২০০৭-০৯ সময়ে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর ব্যবসায়িক কার্যক্রম এত দ্রুত সংকুচিত হয়নি।
এসঅ্যান্ডপির প্রধান বাণিজ্যিক অর্থনীতিবিদ ক্রিস উইলিয়ামসন একটি বিবৃতিতে বলেন, অক্টোবরে মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি আরো ঘনীভূত হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আস্থাও তীব্র আকারে খারাপ হয়েছে। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং আর্থিক কড়াকড়ির কারণে নিম্নমুখী পরিষেবা কার্যক্রম পুরো ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। তবে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের এ পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মন্থরতাকে অতিরঞ্জিত করতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী সমীক্ষা ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট দেখিয়েছে, উৎপাদন ও পরিষেবা খাতগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।
যদিও বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে মার্কিন মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সংকুচিত হয়েছে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে বলে আশা করা হচ্ছে। রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা দশমিক ৮ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন, যার গড় অনুমান ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ফেডারেল রিজার্ভ আক্রমণাত্মকভাবে আর্থিক নীতি কঠোর করায় অর্থনীতি ধীর হয়ে যাচ্ছে। গত মাসেও ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে। আগামী সপ্তাহে আবারো সুদের হার বাড়াবে বলেও আশা করা হচ্ছে। ফ্ল্যাশ কম্পোজিট নতুন ক্রয়াদেশ সূচক সেপ্টেম্বরের ৫০ দশমিক ৯ পয়েন্ট থেকে কমে চলতি মাসে ৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বছরের শুরুর দিকের মতো ব্যবসাগুলো পণ্যের দামও বাড়াতে পারছে না। চাহিদা কমার কারণে দাম বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ থেকে পিছু হটছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
চলতি মাসে শিল্পোৎপাদন খাতের পিএমআই ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে। দেশটির উৎপাদন খাতের কার্যক্রম ২০২০ সালের জুনের পর প্রথমবারের মতো সংকুচিত হলো। সেপ্টেম্বরে এ সূচক ৫২ পয়েন্টে ছিল। রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা এ সূচক ৫১ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। নতুন ক্রয়াদেশের সূচকও ২০২০ সালের লকডাউনের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া পরিষেবা খাতের পিএমআই সেপ্টেম্বরের ৪৯ দশমিক ৩ পয়েন্ট থেকে কমে ৪৬ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ব্যয় ও চার্জ করা মূল্য উভয়ই ধীর হওয়ার কথা জানিয়েছে। এটি মূল্যস্ফীতির চাপ সহজ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।