পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার ১নং বলদিয়া ইউনিয়নে দিন দিন অস্বাভাবিক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ওই ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলেও ওষুধ স্প্রে করা সহ ডেঙ্গু নিধনে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছেনা।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এডিস মশার লার্ভা নিয়ে জরিপে ওই ওই ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের গড় ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই) ৮০ শতাংশ। গত এক মাসে এই ওই ইউনিয়নে তিন শতাধীক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই শ্রমিক ও দিনমজুর।
হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে বলদিয়া ইউনিয়ন থেকে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ জন রোগী আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বশেষ গত ২৪ ঘন্টায় ওই ইউনিয়ন থেকে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ইউনিয়নের ডুবি গ্রামের নৌকা চালক দিনমজুর আব্দুর রব মিয়া জানান, তিনি ও তার স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮ দিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুজনের চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে তিনি এখন হিমসিম খাচ্ছেন।
একই ইউনিয়নের উড়িবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা রোগী পলাশ জানান, তিনি পেশায় একজন শ্রমিক। এলাকার আমড়ার আড়তে তিনি কাজ করেন। আড়তের পাশে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে প্রচুর মশা। সেই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫ দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার শরীরে কোন পরিবর্তন আসছেনা।
ওই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের রাজাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মুক্তা বেগম পেশায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে তিনিও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তিনি জানান, তার ইউনিয়নের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাদান কার্যক্রম করতে গিয়ে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নটি খুবই অনুন্নত এলাকা। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এলাকাটিতে সরকারি লোকজনের আসা-যাওয়া কম। ফলে নাগরিকের বহু সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আয়তনে উপজেলার সর্ববৃহৎ ওই এলাকার অধিকাংশ লোকই কৃষিকাজ, কাঠের মিস্ত্রী ও নানা ধরনের কাজে শ্রমিকের কাজ করে থাকেন। ওই এলাকায় কচুরিপানা পচিয়ে সেটা দিয়ে ভাসমান সবজি চাষ করা হয়। এছাড়াও নানা ধরনের কাঠ পুকুর বা ডোবায় ভিজিয়ে রেখে সেটা দিয়ে নৌকা সহ নানা ধরনের ফার্নিচার তৈরি করা হয় ওই এলাকায়। ধারনা করা হচ্ছে পচা কচুরীপানা ও কাঠ ভিজানো পুকুর বা ডোবার পানিতে এমনকি ভিজা কাঠের গুড়িতই এডিস মশার জন্ম হচ্ছে।
বলদিয়া ইউনিয়নের জিরবাড়ী প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আমির হোসেন জানান, আমাদের ইউনিয়নে দিনদিন ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই প্রতিটি ঘরে রোগীতে সয়লাব হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত এই এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোন কার্যক্রম নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান জানান, আমাদের এই এলাকাটি ডোবা নালায় ভর্তি এখানকার লোকজনের মধ্যে সচেতনতার চরম অভাব রয়েছে। এলাকার ডোবা নালা ও বিভিন্ন পচনশীল দ্রব্যের মাধ্যেমে এলাকায় মশা সহ নানা ধরনের রোগের জীবানু তৈরি হয় বলে এই ইউনিয়নে নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। বর্তমানে এই ইউনিয়নে ডেঙ্গু একটি মহামারির রূপ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমার এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত এই এলাকার মানুষদের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিসহ মশা নিধক ওষুধ স্প্রে করার দাবী জানান তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, আমাদের এই হাসপাতালের ভবনটি মাত্র ১৯ বেডের হলেও এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চাপ বহুগুনে বেড়ে গেছে। তাই রোগীদের চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সদের চরম বেগ পোহাতে হচ্ছে।