স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জাহিদ মালেক বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই স্বাস্থ্যখাতে প্রকৃত উন্নয়ন
এসেছে। আগে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬০ বছর, আর এখন ৭৩ বছর। এটি এমনি এমনি হয়নি।
আজ বুধবার সকালে
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি
একথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বলেন, দেশে টিকাদানে ৯৮ ভাগ সফলতা এসেছে, অথচ আগে ছিল মাত্র ২০ ভাগ। আগে দেশে শিশু
মৃত্যুহার ছিল ১৫০ জনের বেশি, আর এখন সেটি মাত্র ২৩ জন। আগে দেশে মাত্র ১০ ভাগ মানুষ
পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতো, এখন সেটি ৭৩ ভাগ হয়েছে। আগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল
৩ শতাংশ, আর এখন মাত্র দশমিক ৯৮ ভাগ মাত্র। আগে দেশের খর্বকায় মানুষ জন্ম নিত ৬০ ভাগ
মানুষ। কিন্তু এখন ঠিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ায় মাত্র ২৫ ভাগ এর নিচে খর্বকায় মানুষ জন্ম
নেয়। দেশে আগে তেমন কোনো স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ছিল না, এখন ২২টি ইনস্টিটিউট করেছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাত্র ৮টি মেডিকেল কলেজ ছিল, এখন ৩৭টি মেডিকেল কলেজ করা
হয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে।
তিনি বলেন,
স্বাধীনতার সময় দেশে স্বাস্থ্যখাত বলে কিছু ছিল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান প্রথম দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি তৎকালীন সময়ে বিসিপিএস, বিএমআরসি,
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরসহ চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেন। জাতির পিতার কন্যা
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য হাজার হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক
স্থাপন করেন। কিন্তু বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় এসে সেই ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও সেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করেছেন। এখন
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে কোটি মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে, ৩২ প্রকারের
ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেলিভারি সেবা ব্যবস্থাও শুরু হয়েছে। এখন
গ্রামের মানুষজন তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বাড়িতে বসেই পাচ্ছে।
দেশের মানুষের
স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। সেই বিষয়টি মনে রেখে দেশের স্বাস্থ্যখাত
বর্তমানে নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক জানান, ‘মায়েদের মাতৃত্বকালীন সেবার মান
বাড়াতে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। দেশের প্রায় ৪ হাজারটি ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার স্বাস্থ্যসেবা
কেন্দ্রের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি মায়েদের জন্য ৮ ঘণ্টার
পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা সেবাদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। খুব অল্প সময়ে আমরা দেশের সব
হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা সেবাদান কর্মসূচির ব্যবস্থা চালু করব।’
ইনস্টিটিউশনাল
প্র্যাকটিস প্রদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের ১২টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায়
বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নামমাত্র ‘ফি’ এর মাধ্যমে চালু করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এই সেবা দেশের সকল হাসপাতালে
চালু করা হবে।
সি-সেকশন সেবায়
প্রাইভেট মেডিকেলে মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট মেডিকেলে
বর্তমানে সি-সেকশন হচ্ছে প্রায় ৮০ শতাংশ যা উদ্বোগের বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
মতে সি-সেকশন হবার কথা মাত্র ১৫ শতাংশ। প্রাইভেট মেডিকেলে কেন এত বেশি হচ্ছে, তা নিয়ে
আমাদের ভাবতে হবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা
আইন শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স,
রোগী ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। কাজ শেষ পর্যায়ে
আছে। আগামী সংসদে এটি পাশ হলেই আইনটি কার্যকর হবে।
স্বাস্থ্যসেবা
বিভাগের সচিব ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য
শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
সাহান আরা বানু, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন,
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-এর সভাপতি ডাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি ডাঃ বর্দন জং রানা।
উল্লেখ্য, এবারের
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘Health For All’ যার বাংলা ভাবার্থ “সবার জন্য স্বাস্থ্য”।