কনস্টেবল মিজান, পিয়ন তাকে খুব টানাহেঁচড়া করছে। তার গায়ের চামড়া উঠে গেছে, তার ব্যাগ তল্লাশি করে ওই চিঠিটা পেয়েছে, যেই চিঠিটা এক সোর্স দিয়েছিল। তখন বলছে, এই চিঠিটা আপনি কোথায় পেলেন?
সোমবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মিঠু সচিবালয়ে রোজিনার টিকা নেওয়া এবং পরে পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ‘হেনস্তার শিকার হওয়ার’ বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, শুধু টিকা নেওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি থেকে আগের দিন তারা ঢাকায় এসেছেন। তারা এক সঙ্গে বেলা ২টা ২০ মিনিটে সচিবালয়ে ঢোকেন এবং টিকা নেন ২টা ২৬ মিনিটে। এরপরে ও যখন বের হয়ে আসে, আমি ওকে বললাম, টিকাটা নিয়েছ, চলো, বাসায় চলো। ও আমাকে বলল যে, ’আমাকে একজন আছে তথ্য দেবে।’ তারপর আমি গাড়ি টান দিয়ে চলে গেছি মহাখালী।
এরপর কী ঘটেছিল, তার বর্ণনা দিয়ে মিঠু বলেন, “ও আমাকে যেটা বলেছে, ওকে ওর এক সোর্স তথ্য দিয়েছে, ভ্যাকসিনের কোর কমিটি অনুমোদন দিয়েছে, তাতে তিনটা কোম্পানির নাম লেখা আছে, যেটা কনফার্ম কিছু না। ওই চিঠিটা ও পড়েও নাই। কাগজটা হাতে নিয়ে উপরে গিয়ে সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে তথ্য আছে কি-না, আপডেট আছে কি-না নেবে।”
রোজিনা যখন সচিবের পিএসের রুমে গেলেন, সেখানে পিএস ছিলেন না বলে জানালেন মিঠু।
“পিএসের রুমের যে কনস্টেবল মিজান, তাকে সে (রোজিনা) জিজ্ঞেস করে পিএস সাহেব কোথায়। কনস্টেবল মিজান বলে, ’উনি বাইরে গেছেন, আপা বসেন’। ও বলছে, ’উনি না থাকলে আমার বসা ঠিক হবে?’ বলছে, ’অসুবিধা নাই, বসেন।”
স্বামীর ভাষ্য, এরপর রোজিনা ওই কক্ষে বসে পত্রিকা পড়তে শুরু করেন। এর পরপরই কনস্টেবল মিজান ভেতরে ঢোকেন।
“ওই ছেলে এসে বলে যে, ‘আপনি এখানে ছবি তুলেছেন, ফাইলের।’ ও বলছে যে, ‘আমি কোনো ছবি তুলি নাই আজকে।’ তারপর (মিজান) বলে, ‘মোবাইল দেন।’ মোবাইল নিয়ে দেখছে যে, কোনো ছবি তোলে নাই। তখন বলছে, ’আপনি ব্যাগে কোনো কাগজ নিছেন’। বলছে যে, ’না আমি ব্যাগে কোনো কাগজ নিই নাই’।”
এর ভেতরে দুজন অতিরিক্ত সচিব ওই কক্ষে আসেন এবং অন্যরা মিলে রোজিনাকে ‘হেনস্তা’ শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন মিঠু।
তিনি বলেন, “কনস্টেবল মিজান, পিয়ন তাকে খুব টানাহেঁচড়া করছে। তার গায়ের চামড়া উঠে গেছে, তার ব্যাগ তল্লাশি করে ওই চিঠিটা পেয়েছে, যেই চিঠিটা এক সোর্স দিয়েছিল। তখন বলছে, ’এই চিঠিটা আপনি কোথায় পেলেন?’ ও বলছে, ’আমার এক সোর্স দিয়েছে।’
“তখন বলছে, ‘সোর্সের নাম বলেন।’ ও বলছে, ‘সাংবাদিকদের সোর্সের নাম বলার নিয়ম নাই। তখন সে বলছে, ‘নাম না বললে আপনি এখান থেকে নিয়েছেন। তখন ও বলছে, ‘যদি বলেন আমি এখান থেকে নিয়েছি, তাহলে নিয়েছি।’
“এরপর তার মোবাইল তল্লাশি করে বাড়ির কিছু ছবি ও আগের কিছু নিউজের স্ক্রিনশট ছিল। পীড়াপীড়ির এক পর্যায়ে সে সোর্সের নাম বলে দিয়েছে। এরপর তাকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা ওখানে আটকে রাখছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ১২ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের জন্য রোজিনা ‘অব্যাহতভাবে হুমকি’ পেয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী।
তিনি বলেন, “ওকে ওই নিউজ করার পর বারবার টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে, ‘দেখে নেব’।”