লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটে একটি সেতুতেই বদলে যেতে চলেছে চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের ভাগ্য। বদলে যেতে চলেছে এখানকার অর্থনীতির চিত্র। এলজিইডি'র অধীনে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার দীর্ঘ নির্মাণাধীন সেতুটি সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ওকড়াবাড়ি বাজার সংলগ্ন কিশোরঘাট এলাকার সতী নদীর উপর। খুনিয়াগাছ, রাজপুর, মহেন্দ্রনগর ও হারাটি ইউনিয়ন ঘেঁসে বয়ে চলা এই সতী নদীর দুই পাড়ে বসবাস করছে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ স্বাধীনতার পর থেকে এই নদীর উপর প্রায় এক কিলোমিটার পর পর থাকা কয়েকটি সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। যদিও নতুন নির্মিতব্য এ সেতুর স্থান হতে কয়েক কিলোমিটার দূরে এই নদীর উপর একটি ত্রিমোহনী সেতু রয়েছে। তবে নদীটির দুই পাড়ে বিস্তৃর্ণ জনপদ রয়েছে। যেখানাকার মানুষজন বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ জেলা সদরে যাতায়াত করে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটি সেতুর মুখ দেখেনি চার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার অবহেলিত এই মানুষগুলো। সেই সেতুর স্বপ্ন আজ একটু একটু করে দৃশ্যমান হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, সতী নদীর অপর পাশে থাকা গ্রামগুলো থেকে জেলা ও উপজেলা সদরের অবস্থান ১৫ থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ওকড়াবাড়ি, মহেন্দ্রনগর, বড়বাড়ি হাটসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার যেতে হয় এই নদী পেরিয়েই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বারবার সরকার বদলেছে কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছিল কেবল মুখে মুখেই। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে সেতু করার ওয়াদা দিলেও নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়ে গেলে আর খবর নেননি। বর্তমানে সদর উপজেলার এতো উন্নয়নের পরও একটি সেতুর আক্ষেপ ছিল এলাকাবাসীর। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া, কৃষকদের সার, বীজসহ উৎপাদিত কৃষিপণ্য আনা-নেয়া, গর্ভবতী মহিলাসহ অসুস্থ মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাকোগুলো দিয়েই। প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে বর্ষার সময় এ দুর্ভোগ বাড়ে কয়েকগুণ। সেসময় সাঁকো থেকে পড়ে অনেকে আহত হয়েছেন। এমনকি সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে দুই জন মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় কৃষক আজিবর রহমান বলেন, আমার বাড়ি থেকে জেলা সদরে যাওয়ার পথ একটিই। সারাজীবন বাঁশের সাকো দিয়ে মালামাল পারাপার করেছি, সন্তানদের স্কুলে আনা-নেয়া করেছি। এখন সেতুটি হলে সেই দুর্ভোগ শেষ হবে, যাতায়াত অনেক সহজ হবে। কিশোরঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়েই স্কুলে আসাযাওয়া করে।
হারাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক খন্দকার বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছিল না। একটি সেতুর অভাবে বহু মানুষের জীবন-জীবিকায় প্রভাব পড়তো। সেই ভোগান্তি এখন শেষ হতে চলেছে সেতুটি হওয়ার মধ্য দিয়ে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, অবশেষে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জনভোগান্তির কথা ভেবে। যে গতিতে নির্মাণ কাজ চলছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট, দ্রুত চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলে এলাকার প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের কথা ভেবে বিগত প্রায় পাঁচ বছর আগে তৎকালীন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু সাঈদ দুলালের একটি ডিও লেটার সহ 'উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম উন্নয়নে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ' প্রকল্পের আওতায় কিশোরঘাট এলাকায় সতী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন প্রস্তুত করে অধিদপ্তরে একটি চিঠি পাঠানো হয়। কয়েকদফা যোগাযোগের পর ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর অধিদপ্তর সেতুটি করার জন্য অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী ওই বছরই ১৫ নভেম্বর টেন্ডার আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। টেন্ডারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিএইচবি-এসএস জেভি সেতু তৈরির কাজটি পায়। এরপর গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপণ করেন।
এলজিইডি'র লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান বলেন, সেতুটির কাজ ইতিমধ্যেই পয়ষট্টি ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যেই সেতুটির কাজ শেষ হলে চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগে পরিসমাপ্তি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।