কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
সুস্বাদু গরুর নেহারি ও হালিমের স্বাদ গ্রহণ করতে দূর দূরান্ত থেকে আগত ভোজন পিয়াসী মানুষের ভিড় জমেছে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের একটি ছোট গ্রামে। প্রিয় খাবারের তালিকায় উঠে এসেছে এই মুখরোচক খাবারটি। বিক্রিও হচ্ছে জম্পেশ। দোকান মালিক অল্প টাকা বেতনের বাবুর্চিয়ানা কাজ করত কিন্তু তিনি এখন বাবুর্চি থেকে লাখপতি হয়ে গেছেন। তিনি এই ব্যবসা করে সফলতার মুখ দেখেছেন, কাজ শুরু করেছেন পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট একটি নিজস্ব ভবনের।
বলছিলাম গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ-হরিণহাটি গ্রামের আজিজ মামার কথা। দোকানটির মালিক মোঃ আজিজুল ইসলাম আজিজ এই দোকানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার খাবার বিক্রি করেন। তার প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা লাভ থাকে। কোন কোন মাসে লাভের পরিমাণটা লাখ টাকায় পৌঁছায়। বিশেষ করে তার দোকানের সুস্বাদু গরুর নেহারির খ্যাতি মানুষের মুখে মুখে। গাজীপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে হাজারো মানুষ এখানে আসে কেবল তার তৈরি গরুর নেহারির স্বাদ পরখ করতে। এভাবে হালিম ও নেহারি বিক্রি করে আজিজ মামা এখন লাখপতি।
প্রথমদিকে ছোট্ট পরিসরে শুরু হলেও, সময়ের ব্যবধানে দোকানের কার্যক্রম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এসব সুস্বাদু খাবার বিক্রির কাজ। তবে এই খাবারটি পরিবেশন করার পূর্বে খাবার প্রস্তুতির অনেক কাজ থাকে। সেই কাজটি বাড়ি থেকে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে পরিষ্কারভাবে সম্পন্ন করে তারপর বিকেলে পরিপূর্ণ খাবার মানুষকে পরিবেশন করেন। খাবার পরিবেশন এর পূর্ব পর্যন্ত এই খাবারটি প্রস্তুত করতে তাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। খাবারটির সুস্বাদু হওয়ায় ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাড়ির মত পরিবেশন করায় সকলেই তৃপ্তি সহকারে খাবারটি খেতে পারছে। আর এসব পরিচালনায় তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে মাত্র দুজন লোকই বিরতিহীন পুরো দিন কাজ করছেন।
আজিজ মামার সফলতার গল্প বেশ লম্বা। এই ব্যবসা করে কিনেছেন জমি। গড়ে তুলছেন নিজস্ব বাসভবন। পাঁচজন সদস্য বিশিষ্ট পরিবার তার স্ত্রী সহ দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক তিনি। তার দুই কন্যা আলেমা শেষ করেছেন এবং পুত্র সন্তানকে হেফজ করছেন। ব্যবসায় তার স্ত্রী তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
স্থানীয় বাঁশতৈল এলাকার বাসিন্দা মোঃ মারুফ বলেন, এখানে তৈরিকৃত হালিম ও নেহারি অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক ভালো। কোন ধরনের ভেজাল কিছু দেয় না। জিনিসটি অনেক সুস্বাদু করে তৈরি করেন এবং সুন্দর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করেন। যার কারণে আমরা মাঝে মাঝেই বন্ধু-বান্ধব মিলে দূর থেকেও এখানে খেতে আসি।
বিক্রেতা আজিজ মামা বলেন, আমি একজন বাবুর্চি ছিলাম। আমার মনে হল মানুষকে আমি ভালো কিছু খাওয়াবো সেই চাওয়া থেকেই সাত-আট বছর পূর্বে আমার এই ব্যবসা শুরু। আমার এই ব্যবসায় আমি এবং আমার স্ত্রী দুজন মিলে কাজ করছি। আমার স্ত্রী আমাকে প্রচুর পরিমাণে সহযোগিতা করছে। আসলে নিহারি ও হালিমের দোকান বর্তমানে অলিগলি সব জায়গাতেই আছে কিন্তু আমার এখানে যে খাবারটা সুস্বাদু ও পরিবেশন করা হয় সুন্দর পরিবেশে এবং কোন প্রকার ভেজাল মেশানো হয় না। তাই অনেক দূর দূরান্ত থেকে লোক আমার এখানে এসে ভিড় জমায়। কোনাবাড়ী, জয়দেবপুর, মির্জাপুর, ধামরাই ও টাঙ্গাইল এসব এলাকা থেকে আমার এখানে লোক আসে এবং অন্যান্য দুরের জেলা থেকেও অনেক লোকজন আসে। আমার এখানে প্রচুর পরিমাণে ফোনে অর্ডার আসে আমার এখান থেকে এখন অনেক পার্সেলও দেওয়া হচ্ছে। শাহীন স্কুলের মত বড় প্রতিষ্ঠান থেকেও আমার এখানে পরিচালকসহ বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকাও পরিবার নিয়ে খেতে আসে। শুধু তাই নয় থানার পুলিশ ভাইয়েরা এবং উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আমার এখানে এসে এই খাবার খেয়ে যায়। এটা আমার অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।