
জুয়েল রানা, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রান্তিক কৃষক বেল্লাল, সলেমান, কাদের ও ফুল মিয়া এছাড়া আরও অনেকে। সবাই গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। চলতি মৌসুমে আবাদ করেছেন বোরো ধান। বাড়তি খরচ, খড়া আর নানা রোগবালাই কাটিয়ে ইতোমধ্যে ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কাটা-মাড়াইও করেছেন। এরই মধ্যে দেখা দিয়ে শ্রমিক সংকট। সেই সাথে আকাশের বিরূপ আচারণ। ক্ষেতের এই পাকা ধান ঘরে তুলতে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আকাশে মেঘ দেখলেই কেপে ওঠে বুক, এমনটা জানালেন এই কৃষকরা।
সরেজমিনে শনিবার উপজেলার নিভৃত অঞ্চলে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে দুলছে পাকা ধান। এখনো শতাধিক হেক্টর ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় জমির ধান ঘরে ওঠানো নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা কালবৈশাখী ঝড় হলে ধানের যে পরিমান ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য।
জানা যায়, একসময় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ধান কম আবাদ করা হয়েছিল। সেই সময়ে শ্রমিকের কোন সংকট ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে প্রত্যেক বছরের ধানের আবাদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদের পেশা বদলের কারণে শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। এই শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় সমলয় পদ্ধিতি ধানের আবাদ ও কাটা-মাড়াইয়ের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন। যা দিয়ে কৃষকের স্বল্প সময় ও খরচে দ্রুত ধান কাটা-মাড়াই করা সম্ভব। কিন্তু এসব মেশিন চাহিদার তুলনা অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকের কোন কাজে আসছে না। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে একযোগে ধান কাটার উপযোগি হয়ে এসেছে। দিগন্ত মাঠে দুলছে সোনালী শীষ। ব্লাস্ট রোগ, খড়া আর বাড়তি খরচ সামাল দিয়ে এখন এসব ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম হিমসিম খাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন জেলার আশপাশ এলাকা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এর প্রভাব পড়তে পারে উপজেলার গ্রাম অঞ্চলেও। কখনো কখনো মেঘে ঢাকছে পুরো আকাশ। এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কৃষকের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না বলে জানান কৃষকরা।
শ্রমিক বুলু মিয়া বলেন, এক সময়ে শ্রমিকের অভাব ছিলনা। গ্রামের অর্ধেক বাসিন্দা ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সেইসব শ্রমিকরা অন্য পেশায় স্বাবলম্বির কারণে তারা আর ধান কাটার কাজ করেন না। বর্তমানে এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াই ৪ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। দহবন্দ ইউনিয়নের কৃষক হযরত বেল্লাল বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগে ৪৪ শতক জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ধান কাটা-মাড়াই করতে সময় লাগছে। অধিক মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তারাপুর ইউনিয়নের কৃষক কৃষক সলেমান জানান, গত বোরোতে ৩ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করছিলেন। চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদের বাড়তি খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধার-দেনা করে এই আবাদ করেছি। ক্ষেতের সবগুলো ধান পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এখনো কাটতে পারিনি। বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক কাদের মিয়া বলেন, আকাশের গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেপে ওঠে। এই বুঝি শিলাবৃষ্টি শুরু হবে। জমিতে পাকা ধান অথচ কৃষি শ্রমিক সংস্কটের কারনে ধান কাটতে পারছি না। সরকারের সেই হারভেস্টর মেশিন খুঁজেও পাওয়া যায় না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসেস আফরুজা বারী বলেন, আমরা কৃষকের পাশে আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কৃষকের ধান কাটা-মাড়াই করে দিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশিদুল কবির জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ধান ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ৮০ ভাগ ধান পেকেছে সেইসব কৃষকদের ধান কাটার জন্য বলা হচ্ছে। সেই শ্রমিক সংকট থাকলে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে কাজ করতে পারবেন।