সুনামগঞ্জ ১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও সেলিম আহমেদ। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে তাদের সঙ্গে দলের পদধারী অসংখ্য নেতাকর্মী প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-মধ্যনগর-তাহিরপুর-জামালগঞ্জ) আসনে টানা তিন বারের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় নৌকার প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকারের বিজয়ের পথ মসৃণ ছিল। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন কেটলি প্রতীকে ও সেলিম আহমেদ ঈগল প্রতীকে ভোটের মাঠে অবস্থান করায় নির্বাচন হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
এবার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিস ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ বলয় একাট্টা হয়ে প্রচারণায় নেমেছেন।
অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের পক্ষে আঁটঘাট বেঁধে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। সেইসাথে বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডাঃ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে রতনের নির্বাচনী বিভিন্ন সভায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন।
এছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি শামীমা আক্তার খানম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, সদস্য শাহরিয়ার বিপ্লবসহ তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর উপজেলার অনেক নেতাকর্মী রতনের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। রনজিতের পক্ষেও জোড়ালো অবস্থানে রয়েছেন চার উপজেলার দলীয় প্রথম সারির নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ সেলিম আহমেদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জোড়ালো অবস্থান নিয়েছেন। এ আসনে আটজন প্রার্থী থাকলেও রতন রনজিত ও সেলিমের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে- এমনটাই বলছেন সাধারণ ভোটাররা।
এ আসনে চারটি উপজেলার ২৩ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬০৮ জন। যার মধ্যে ধর্মপাশায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩১, মধ্যনগরে ৭৯ হাজার ৮৯০, তাহিরপুরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৩ ও জামালগঞ্জে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৪ জন। মধ্যনগর উপজেলা বাস্তবায়নসহ উব্দাখালী সেতু চালু হওয়ায় মধ্যনগরে রতন রনজিত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।ভোটে ভাগ বসাতে পারে সেলিমও। ধর্মপাশায় রতনের বাড়ি। আঞ্চলিকতার টানে বেশিরভাগ ভোট বাগিয়ে নিতে পারেন। কৌশলে রনজিতও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এখানে সেলিমও কোন অংশে কম যাবেন না। জামালগঞ্জে রতনের শক্ত অবস্থান। তবে রনজিত ও সেলিমও ভোট টানতে পাড়েন অনেক। রনজিত সেলিমের বাড়ি তাহিরপুর। সেখানে আঞ্চলিকতার টানে দুজনের অবস্থান মজবুত। কৌশলে রতনও সুবিধা করতে পারেন।
ভোটের সময় ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা খুব জোরেসোরে তাদের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে পথসভা করছেন। প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা কেউ কৌশলে আবার কেউ সরকারি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমালোচনা করছেন জোরেসুরে। এসকল বক্তব্য ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকেরা কেউ কৌশলে আবার কেউ সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমালোচনা করছেন জোরেসুরে
এসব বক্তব্য ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, কৌশলগত কারণে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তির হাতে এ আসনকে তুলে দিতে পারিনা। এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এখনও অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ গড়তে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে এমন এক ভিডিওতে মোঃ সেলিম আহমদ বলেছেন, এমন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে যা গ্রাম্য কথায় ‘চোর তাড়াতে ডাকাত নিয়ে আসলাম’এর মতো। ৭ তারিখের নির্বাচনে ভুল করলে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িকভাবে সমাজ ব্যবস্থা বিভাজিত হবে। খুনাখুনি রাহাজানি হবে। সমাজের বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হবে। হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হবে।
এদিকে রনজিত চন্দ্র সরকার বিভিন্ন সভায় তাঁর বক্তব্যে বলছেন, আমার কারণে বিব্রত, লজ্জিত ও অপমান বোধ করেন এমন কোনো কাজ করবো না। আমার দ্বারা এ অঞ্চল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে না। আমাদের নেতারাও যদি কাউকে বিরক্ত বা বিব্রত করে তাহলে প্রয়োজনে তাদের (নেতা) ত্যাগ করে আপনাদের (সাধারণ জনগণ) সাথে থাকবো।